আসন্ন পূজায় মুক্তি পাবে দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসানের ‘দশম অবতার’। সৃজিত মুখার্জির পরিচালনায় সিনেমাটিতে প্রথমে ভাবা হয়েছিল শুভশ্রীকে, পরে সেই প্রস্তাব যায় জয়ার কাছে। দীর্ঘদিন পর প্রাক্তনের সঙ্গে কাজ করলেন—কীভাবে প্রস্তাবটা এলো, এসব অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন জয়া আহসান।
ভারতীয় একটি সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারের আংশিক অংশ তুলে ধরা হলো-
আসন্ন পূজাতে নতুন ছবি আসছে। কলকাতার পূজোকে কীভাবে দেখেন?
আমি ১০ বছর ধরে কলকাতার পূজা দেখছি। এই শহরটার সঙ্গে একাত্ম হয়েছি। দু-তিনটি ছবি পূজাতেও রিলিজ হয়েছে। পূজার সময় ছবি রিলিজ করলে মাথায় চলতে থাকে ছবি কেমন চলছে। দর্শক পছন্দ করছে কি না।
আপনার চরিত্রে প্রথমে শুভশ্রীকে ভেবেছিলেন পরিচালক, পরে আপনি অফারটা কী ভেবে গ্রহণ করলেন?
এমন অনেক চরিত্র আমার কাছে এসছে, আমার হয়তো মনে হয়েছে এমন চরিত্র আগে করেছি, তাই করব না। পরে সেটা অনেক বড় অভিনেত্রীরা করেন। তারা যখন করেছেন, নিজেদের সেরাটা দিয়ে করেছেন। ছবিটা দেখলে মনে হবে, ওটা তাদের জন্যই লেখা। শেষ পর্যন্ত চরিত্রটা কে করলেন এর থেকেও বড় কথা কেমন করলেন। শুভশ্রী করেননি, আমি করেছি, সেটা আলাদা কোনও ব্যাপার নয়। আমি সৃজিতকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তুমি তো একজনকে ভেবে লিখেছ। এখন আমি করছি। তুমি যদি আর একবার দেখে নাও, কিছু আমার মতো করে দেওয়ার প্রয়োজন আছে কি না। হতেই পারে, কিছু জায়গা আমাকে মানাচ্ছে না। অথবা কিছু যোগ করলে চরিত্রটি আরও চ্যালেঞ্জিং হবে। তখন সৃজিত বলল, চরিত্র কাউকে ভেবে লিখিনি। আমি আমার মতো করে লিখেছি। যাকে মানাবে বলে মনে হয়েছে, আমি তাকেই বলেছি।
এই ছবিতে মূলত দুটো চরিত্র প্রবীর (প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জি) ও পোদ্দার (অনির্বাণ ব্যানার্জি) নিয়ে দর্শকের আগ্রহ। আপনার চরিত্র সেখানে কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
ছবিটা দেখলেই সেটা বোঝা যাবে। আমার প্রথম মনে হয়েছিল, এরকম একটা ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারি । প্রবীর রায়চৌধুরী এবং বিজয় পোদ্দার অর্থাৎ ‘২২শে শ্রাবণ’ এবং ‘ভিঞ্চিদা’ দুটো ছবির প্রিক্যুয়েল। আমি দুটো ছবিই দেখেছি। এই দুই ছবিরই দর্শক রয়েছেন। কিছু দর্শক এই ছবি দেখবেনই। চিত্রনাট্য পড়ে দেখলাম খুব সুন্দর ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। আর আমার চরিত্রও মনে হয়েছে একটু অন্যরকম।
প্রস্তুতির সময় কম ছিল?
না, তেমন না। সময় নিয়েছিলাম। কিন্তু আমি তেমন ছাত্রী, খুব বেশি প্রস্তুতি নিলে যার চাপ হয়ে যায়। আমি সহজাত অভিনয় করি। সেটাই পছন্দ করি, চেষ্টা করি। আর সৃজিতের উপর আমার ভরসা ছিলই। আমার চরিত্রটা এই ছবির জন্য প্রয়োজন মনে হয়েছিল।
‘দশম অবতার’ থেকে ব্যক্তি জয়া কী পেলেন?
প্রতিটি ছবিতেই আমরা পরিণত হই। বাজেট, সময় সব কিছু মাথায় রেখে তো শ্যুটিং করতে হয়। তবুও প্রত্যেকটি চরিত্র একটু একটু করে ভেতরে থেকেই যায়। আমি আমার সব চরিত্র থেকেই কিছু না কিছু পাই। এখানে মনস্তাত্ত্বিকের চরিত্র। পরিণত চরিত্র।
বর্তমান পৃথিবীতে মনের যত্ন নেওয়া কতটা জরুরি?
মন ভালো রাখা খুব জরুরি। আগেকার দিনে মানুষের চাহিদা অল্প ছিল। বেঁচে থাকার জন্য পৃথিবীটা এনজয় করেছে তারা। এখন আমাদের সমস্যা, অসুবিধে বেশি। মানুষও বেশি। মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের ধরনও অনেক বদলে যাচ্ছে। তাই আমার মনে হয় মনের দিকে ফিরে তাকানোর সময় এসছে। শরীরের যদি অসুখ থাকতে পারে, মনেরও অসুখ থাকবে। এতে লজ্জার কিছু নেই। মন, মগজ আরও বেশি লালন করা উচিত। সে কারণে আমরা পড়াশোনা করি, জ্ঞান আহরণ করতে চাই। নাহলে তো যেটুকু আছে তা দিয়েই ডাল, ভাত খেয়ে থাকতে পারতাম। তেমন ভাবেই মনোচিকিৎসকের কাছে যাওয়া কোনও দোষের কিছু নয়। আমরা যারা অভিনয় করি, আমাদের আরও বেশি যাওয়া উচিত।
ব্যক্তি জীবনে আপনার এমন প্রয়োজন হয়েছে কখনও?
আমার এমন প্রয়োজন হয়নি। আমি আসলে খুব ইনট্রোভার্ট। যারা অনেক বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে হল্লা করে থাকেন, তারা অনেক কথা বলে ফেলতে পারে বলে হালকা হয়ে যান। কিন্তু আমার মতো যারা চাপা স্বভাবের তাদের ভেতরে ভেতরে অনেক অসুবিধে হতে পারে। তবে আমি ম্যানেজ করে ফেলতে পারি। আমি নিজে খুব স্ট্রং। আমরা অভিনেতারা তো মনোবিদদের মতো মন নিয়েই কাজ করি।