বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৪৩টি জেলায় বর্তমানে রেলপথের মাধ্যমে যাত্রী চলাচল করে। সরকার ৩০ বছর মেয়াদী মাস্টারপ্ল্যানের আলোকে ২০৪৫ সালের মধ্যে ৬৪ জেলাকেই রেলপথের আওতায় আনতে চায়। বর্তমানে যে ২১ জেলায় রেলপথ সংযোগ হয়নি সেগুলো হলো- কক্সবাজার, নড়াইল, শরিয়তপুর, মাদারীপুর, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, শেরপুর, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মাগুরা, লক্ষ্মীপুর ও বাগেরহাট। আর একমাত্র বিভাগ হিসেবে বরিশালে নেই রেলপথ। বরিশালের ৬ জেলা- বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি।
দীর্ঘদিন পরে চলতি অক্টোবর মাসেই উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের চলমান তিন প্রকল্প। এ তিন প্রকল্প হচ্ছে- পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প, খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্প ও দোহাজারী-কক্সবাজার রেল প্রকল্প। এর মাধ্যমে রেলপথে যুক্ত হচ্ছে নতুন ৫ জেলা।
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানান, ১০ অক্টোবর ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথ উদ্বোধন করা হবে। আর দোহাজারী-কক্সবাজার এবং খুলনা-মোংলা রেলপথের উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন বলে জানান রেলমন্ত্রী।
এরমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ১০ অক্টোবর পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের ঢাকা-ভাঙ্গা অংশ উদ্বোধনের এক সপ্তাহ পরে শুরু হবে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল। এর মাধ্যমে মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলা রেল সংযোগের আওতায় আসছে। প্রথম থেকেই ঢাকা-খুলনা রুটে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও নকশিকাঁথা এক্সপ্রেস, ঢাকা-বেনাপোল রুটে বেনাপোল এক্সপ্রেস ও ঢাকা-রাজশাহী রুটে মধুমতি এক্সপ্রেস চলাচল করতে পারে। আর আন্তর্জাতিক ট্রেন ঢাকা-কলকাতা রুটের মৈত্রী এক্সপ্রেসও পদ্মা সেতু হয়ে যাবে। দোহাজারী-কক্সবাজার রেল প্রকল্পের মাধ্যমে পর্যটন নগরী কক্সবাজার রেল সংযোগের আওতায় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। যার জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রয়েছে দেশের পর্যটনপ্রেমী জনতা।
অন্যদিকে ৪ হাজার ২৬০ কোটি টাকায় মোংলা- খুলনা রেল প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন করে রেল সংযোগে যুক্ত হচ্ছে বাগেরহাট জেলা। অক্টোবরে এ প্রকল্প উদ্বোধনের কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ৬৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণের মাধ্যমে রেল করিডোরে যুক্ত হচ্ছে দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলা।
এর আগে ১৯১৮ সালে চালু হওয়া খুলনা-বাগেরহাট রেলপথ ১৯৯৮ সালে লোকসান দেখিয়ে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। আর ২০১২ সালে সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি নিলামে বিক্রি করে এই সেকশনকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। ফলে বাগেরহাট জেলা রেল সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
খুলনা-মোংলা রেলপথের প্রকল্প পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান বলেছেন, খুলনা-মোংলা রেলপথের ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সেইসঙ্গে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে এই পথ দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হবে বলে আশা করছি। সেভাবে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি আমরা।
এ রেলপথ চালু হলে ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে মন্তব্য করে রেলমন্ত্রী বলেন, মোংলা-খুলনা রেলপথ শুধু সারাদেশের সঙ্গে নয়, রেলপথটি আন্তর্জাতিক রেল রুট হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বন্দরের ব্যবসা-বাণিজ্য গতিশীল হবে।
অন্যদিকে ২০২৪ সালে পদ্মা রেল সংযোগের পুরো প্রকল্পের উদ্বোধন হলে যুক্ত হবে নড়াইল। আর মধুখালি-মাগুরা রেলপথের উদ্বোধন হলে নতুন করে যুক্ত হবে মাগুরা জেলা। তারপর ধীরে ধীরে রেলওয়ের বেশ কয়েকটি প্রকল্পের মাধ্যমে যুক্ত হবে বাকি জেলা। এসব জেলাকে রেলপথে সংযুক্ত করতে বিভিন্ন প্রকল্পের সমীক্ষার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এরমধ্যে প্রথম ধাপে যুক্ত হবে সাতক্ষীরা, বরিশাল, রাঙ্গামাটি, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর ও মেহেরপুর রেলপথের আওতায় আসবে। আর ২০৪৫ সালের মধ্যে সর্বশেষ ধাপে লক্ষ্মীপুর, শেরপুর, মানিকগঞ্জ, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলা রেল সংযোগে যুক্ত হবে।
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, বর্তমানে দেশে ৪৩টি জেলায় রেলপথ রয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি জেলাগুলো কীভাবে রেল সংযোগে যুক্ত হবে। বর্তমানে যে সব প্রকল্পের সমীক্ষা সমাপ্ত হয়েছে সে সব প্রকল্পের আওতায় রেলপথ নির্মিত হলে ৮টি জেলা রেল সংযোগের আওতায় আসবে। এই ৮ জেলা হচ্ছে- সাতক্ষীরা, বরিশাল, রাঙ্গামাটি, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর ও মেহেরপুর। অপরদিকে মানিকগঞ্জ জেলায় রেলপথ নির্মাণের সমীক্ষা কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এদিকে, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে রেলপথের সার্বিক কাজের অগ্রগতি বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করেছে রেলওয়ে পর্যবেক্ষক দল। গতকাল বুধবার পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যবেক্ষক দল মাওয়া রেলস্টেশনে আসেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করেন। পরে প্রতিনিধিদল রেল ট্র্যাকে করে ফরিদপুরের ভাঙ্গার উদ্দেশে যাত্রা করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের জিএম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জলিল ও পরিদর্শক রুহুল কবির আজাদ। বিষয়টি সম্পর্কে পদ্মা সেতু ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের ব্যবস্থাপক ব্রিগেডিয়ার সাঈদ আহমেদ বলেন, উদ্বোধনের আগে প্রতিদিনই খুঁটিনাটি বিষয়গুলোর ওপর পর্যবেক্ষণ অব্যাহত থাকবে। উদ্ধোধনী দিনে ট্রেনে চড়ে মাওয়া থেকে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে ভাঙ্গায় যাওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তার আগে আরেকটি ট্রায়াল রান হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।