চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হলো দুই বিজ্ঞানীকে


আন্তর্জাতিক ডেস্ক : , আপডেট করা হয়েছে : 02-10-2023

চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হলো দুই বিজ্ঞানীকে

এ বছর চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হল আরএনএ প্রযুক্তির এই দুই উদ্ভাবক হাঙ্গারির ক্যাটালিন কারিকো এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ড্রু ওয়েইসম্যানকে।

আরএনএ প্রযুক্তির কারিগর। ২০০৫ সালেই আরএনএ প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছিলেন তাঁরা। এই দুই বিজ্ঞানীর গবেষণার উপর ভিত্তি করেই পরবর্তীকালে করোনার এমআরএনএ ভ্যাকসিন তৈরি হয়। 

মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতে কীভাবে মেসেঞ্জার আরএনএ কাজ করে তাই গবেষণা করে বের করেছিলেন কারিকো এবং ওয়েইসম্যান। ২০০৫ সালে এই নিয়ে গবেষণাপত্রও সামনে এনেছিলেন তাঁরা। পরবর্তীকালে কোভিড মহামারী সময়ে এই দুই বিজ্ঞানীর গবেষণাপত্রই কাজে আসে ভাইরোলজিস্টদের। মেসেঞ্জার আরএনএ নিয়ে কারিকো এবং ওয়েইসম্যানের গবেষণার উপর ভিত্তি করেই কোভিডের আরএনএ ভ্যাকসিন তৈরি হয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনির্ভার্সটি অব পেনসিলভানিয়ায় একসঙ্গে কাজ করা শুরু করেছিলেন ক্যারিকো ও ওয়েইসম্যান। নোবেল কমিটি বলেছে, সেই সময়ই তাঁরা করোনাভাইরাসের টিকা তৈরির ভিত্তি প্রস্তুত করে দিয়েছিলেন।

সুইডেনের করোলিনস্কা ইনস্টিটিউট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নোবেল অ্যাসেম্বলি চিকিৎসাবিজ্ঞানের শাখায় এই দুই বিজ্ঞানীকেই নোবেল দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেছে। নোবেল কমিটি জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ফিজিওলজি বা মেডিসিনে নোবেল পুরষ্কার দেওয়া হল ক্যাটালিন কারিকো এবং ড্রু ওয়েইসম্যানকে। এই দুই বিজ্ঞানীর আবিষ্কার করোনার ভ্যাকসিন তৈরিতে কার্যকরী হয়েছে। কোটি কোটি মানুষের প্রাণ রক্ষা করেছে এই প্রযুক্তি। আরএনএ প্রযুক্তি অনেক মারণ রোগের প্রতিষেধক তৈরিতেও কাজে লাগছে এবং কার্যকরীও হচ্ছে। ক্যানসার, এইডসের চিকিৎসাতেও এখন আরএনএ প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। 

কীভাবে তৈরি হয়েছিল করোনার ভ্যাকসিন?

করোনার ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছিল মূলত চার পদ্ধতিতে–গোটা ভাইরাস নিয়ে তৈরি ভ্যাকসিন, শুধুমাত্র ভাইরাসের কিছু অংশ (মূলত স্পাইক প্রোটিন) নিয়ে তৈরি ভ্যাকসিন, ভাইরাল ভেক্টর (নিষ্ক্রিয় অ্যাডেনোভাইরাস) ও নিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ ও আরএনএ) থেকে তৈরি ভ্যাকসিন।

সম্পূর্ণ ভাইরাস (Whole Virus) নিয়ে তৈরি ভ্যাকসিন দু’রকম হয়। প্রথমত, আস্ত ভাইরাসকে দুর্বল করে তার থেকে ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট ডিজাইন করা হয়। এই ভ্যাকসিন শরীরে ঢুকলে ভাইরাল স্ট্রেন প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে, কিন্তু কোনও সংক্রামক রোগ ছড়াতে পারে না। দ্বিতীয়ত, ভাইরাসের জিনের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে ভ্যাকসিন তৈরি হয় যা শরীরে ঢুকলে প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে না। তবে ইমিউন সিস্টেমকে চাঙ্গা করে তোলে। দুরকম ভ্যাকসিনেরই কাজ হল শরীরের বি-কোষ ও টি-কোষকে সক্রিয় করে ইমিউন রেসপন্স বা রোগ প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তোলা।

ভাইরাসের প্রোটিন (Protein Subunit) (করোনার ক্ষেত্রে স্পাইক প্রোটিন) আলাদা করে ল্যাবরেটরিতে বিশেষ উপায় বিশুদ্ধ করে ভ্যাকসিন তৈরি হয়। যেহেতু সংক্রামক প্রোটিন দিয়ে ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট তৈরি হয় তাই এর সঙ্গে অ্যাডজুভ্যান্ট বা ইমিউনো মডুলেটর যোগ করা হয়। অ্যাডজুভ্যান্ট প্রোটিনের খারাপ গুণগুলো ঢেকে দেয়। ভ্যাকসিনের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে দেয় না।

নিউক্লিক অ্যাসিড থেকে তৈরি ভ্যাকসিন দুইরকম—ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) ভ্যাকসিন ও আরএনএ (রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড)ভ্যাকসিন। আরএনএ বা মেসেঞ্জার আরএনএ নিয়ে ভ্যাকসিন তৈরি করেছিল আমেরিকা মোডার্না ও ফাইজার। পরবর্তীকালে ভারতও আরএনএ টিকা তৈরি করে।

আরএনএ-র বিন্যাসকে কাজে লাগিয়ে যে ভ্যাকসিন তৈরি হয় তা যে কোনও সংক্রামক প্যাথোজেনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করতে পারবে। এই ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট তৈরির জন্য সার্স-কভ-২ ভাইরাসের সংক্রামক আরএনএ স্ট্রেন স্ক্রিনিং করে আলাদা করে প্রথমে ল্যাবরেটরিতে বিশেষ উপায় পিউরিফাই করা হয়। এই পর্যায়ে ভাইরাল স্ট্রেনকে এমনভাবে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয় যাতে শরীরে ঢুকলে তার সংক্রামক ক্ষমতা কমে যায়। এই নিষ্ক্রিয় বা দুর্বল আরএনএ স্ট্রেন তখন কোষে ঢুকে প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে না। অথচ এই জাতীয় ভাইরাল স্ট্রেনের খোঁজ পেলেই সক্রিয় হয়ে ওঠে বি লিম্ফোসাইট কোষ বা বি-কোষ। নিজেদের অজস্র ক্লোন তৈরি করে রক্তরসে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে শুরু করে।  অ্যান্টিবডি বেসড ইমিউন রেসপন্স বা অ্যাডাপটিভ ইমিউন রেসপন্স  তৈরি হয় শরীরে।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]