মুআবিয়া ইবনুল হাকাম সুলামি (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুলের (সা.) সঙ্গে নামাজ আদায় করেছিলাম। এ সময় আমাদের মধ্যে একজন হাঁচি দিলেন। আমি সব সময়ের মতো তার হাঁচির উত্তরে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলতেই অন্য মুসল্লিরা আমার দিকে আড় চোখে তাকানো শুরু করলো। আমি বললাম, তোমরা আমার দিকে এভাবে তাকাচ্ছ কেন! তারা তখন তাদের উরুর ওপর চাপড় দিয়ে আওয়াজ করতে লাগলো। আমি যখন বুঝতে পারলাম, তারা আমাকে চুপ করাতে চাচ্ছে, আমি চুপ হয়ে গেলাম।
আল্লাহর রাসুল (সা.) নামাজ শেষ করলেন। আমার বাবা-মা তার জন্য উৎসর্গিত হোন! তার আগে বা পরে তার মত এত চমৎকার শিক্ষক আর দেখিনি! আল্লাহর কসম! তিনি আমাকে ধমক দিলেন না, মারলেন না, গালিও দিলেন না। শুধু বললেন, নামাজে কথাবার্তা বলা ঠিক নয়। নামাজে শুধু তাসবিহ, তাকবির ও কুরআন পাঠ করা হয়।
(সহিহ মুসলিম)
১. রাসুল (সা.) ছিলেন আচরণ ও ব্যবহারে সর্বশ্রেষ্ঠ। আরবের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গ্রাম্য ব্যক্তিরা তার কাছে আসতো। না জানার কারণে তারা অনেক ভুল করতো। রাসুল (সা.) কখনও তাদের ধমক দিতেন না। তাদের ভুলত্রুটি সুন্দর করে বুঝিয়ে দিতেন। তার চমৎকার আচরণে তারা প্রভাবিত ও মুগ্ধ হতো, অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করতো। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন, নম্রতা যে কোনো কিছুকে অলঙ্কৃত করে, কোনো কিছু থেকে নম্রতা হারিয়ে গেলে তা অসুন্দর হয়ে যায়। (সহিহ মুসলিম) আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা নম্র ব্যবহারকারী, তিনি নম্রতা পছন্দ করেন। নম্রতার মাধ্যমে তিনি যা দান করেন, কঠোরতা বা অন্য কোনো পন্থায় তা দান করেন না। (সহিহ মুসলিম)
২. নামাজে কথা বলা বৈধ নয়। নামাজ অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে বা ভুল করে কিছু বললে নামাজ ভেঙে যাবে। কাউকে সালাম দিলেও নামাজ ভেঙে যাবে। শুধু নিজে শুনতে পায় এতটুকু নিচু আওয়াজে কথা বলে ফেললেও নামাজ ভেঙে যাবে। কেউ যদি নামাজ আদায়রত ব্যক্তিকে সালাম দেয়, নামাজি ইচ্ছাকৃতভাবে বা ভুল করে সশব্দে অর্থাৎ মুখে সালামের উত্তর দেয়, তাহলেও নামাজ ভেঙে যাবে।
৩. আজকাল ইসলামের অনেক প্রচারক তাদের রূঢ় স্বভাব ও আচরণে মানুষকে ইসলাম থেকে আরও দূরে সরিয়ে দেয়। অথচ ইসলামের নবির (সা.) আচরণ কত চমৎকার ছিলো। কত চমৎকারভাবে তিনি মানুষকে শিক্ষা দিতেন। যে সাহাবি হাদিসটি বর্ণনা করেছেন মুয়াবিয়া ইবনুল হাকাম, তিনি রাসুলের (সা.) আচরণের মুগ্ধ হয়েছিলেন। এরপর তিনি রাসুলকে (সা.) বেশ কিছু প্রশ্ন করেছেন। তিনি বলেন, তারপর আমি বললাম, আল্লাহর রাসুল! জাহেলি যুগ বিদুরিত হল বেশি দিন হয়নি, কিছুদিন মাত্র হলো ইসলাম এসেছে, আমাদের কেউ কেউ এখনও গণকদের কাছে যায়। তিনি বললেন, তুমি তাদের কাছে যেওনা। আমি আবার বললাম, আমাদের কেউ কেউ তো শুভ ও অশুভ লক্ষণে বিশ্বাস করে। তিনি বললেন, এটা তাদের মনগড়া বিষয়। এগুলো বিশ্বাস করে তারা যেন কোনো ভালো কাজ থেকে বিরত না থাকে।…
মুয়াবিয়া ইবনুল হাকাম (রা.) পরে আরেকদিন নিজের একটি কাজে লজ্জিত হয়ে রাসুলের (সা.) কাছে গিয়েছিলেন। রাসুলের (সা.) শিক্ষা কীভাবে তাদের উন্নত ও উত্তম মানুষে পরিণত করেছিল তা এই ঘটনা থেকে বোঝা যায়। তিনি বলেন, আমার একটি দাসী ছিল। সে উহুদ ও জাওয়ানিয়ার দিকে আমার ছাগল চরাত। একদিন আমি সেখানে উপস্থিত হয়ে দেখি, বাঘ এসে একটি ছাগল নিয়ে গেছে। এ অবস্থায় যে কোনো মানুষের মতো আমারও রাগ উঠে গেলো। আমি তাকে একটি চড় দিয়ে বসলাম। তারপর আমি রাসুলের (সা.) কাছে গিয়ে ব্যাপারটি বললাম। তিনি আমার কাজটি খুবই অপছন্দ করলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি কি তাকে মুক্ত করে দেবো? তিনি বললেন, তাকে আমার কাছে নিয়ে এসো। আমি তাকে নবিজির (সা.) কাছেট নিয়ে গেলাম। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আল্লাহ কোথায় আছেন? সে বললো, আকাশে। তিনি বললেন, আমি কে? সে বললো, আপনি আল্লাহর রাসুল। তখন নবিজি (সা.) বললেন, ওকে মুক্ত করে দাও, ও মুমিন। (সহিহ মুসলিম)