শনিবার দুপুর পর্যন্ত নতুন করে কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়ে আরো দুই হাজার বিঘা জমির ধান তলে গেছে।এতে কয়েকদিনে উপজেলায় প্রায় ছয় হাজার বিঘা জমির ধান পানিতে তলে গেছে। এদিকে মাঠের ফসল ও বাড়ী ঘর রক্ষা করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধ কাম সড়ক সংস্কার কাজ খুব তোরজোর ভাবে শুরু করা হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন,আবহাওয়া ভাল থাকলে দুই/একদিনের মধ্যেই ভেঙ্গে যাওয়া সবগুলো বাঁধ সংস্কার কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। ফলে ফসল ও বাড়ী ঘর রক্ষা পাবে।
আত্রাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিয়া উদ্দীন আহম্মেদ বলেন,বুধবার রাতে আত্রাই নদীর দক্ষিন পারের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া আত্রাই উপজেলা-সিংড়া পাকা সড়কের জগদাস বটতলি এবং তার একটু অদুরে শিকারপুর নামকস্থানে পাকা সড়ক ভেঙ্গে যায়। এতে উপজেলা সদরের সাথে পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এছাড়া বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় একই নদীর উত্তর পারে কাশিয়াবাড়ী বলরামচক-সমসপাড়া বেড়িবাঁধ কাম পাকা সড়কের বলরামচক শ্মশান ঘাট এলাকায় ভেঙ্গে যায়। এতে একদিকে যেমন যোগাযোগ বিচ্ছিন হয়ে পরেছে অন্যদিকে প্রবল বেগে পানি মাঠে প্রবেশ করায় প্রতি মূহুর্তে মুহুর্তে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করে। এতে বুধবার রাত থেকে শুক্রবার পর্যন্ত প্রায় ১২ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পরে এবং প্রায় চার হাজার বিঘা জমির পাকা আউশ ও রোপনকৃত আমন ধান পানিতে তলে যায়। এছাড়া শুক্রবার দুপুর থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত ভাঙ্গা বাঁধ দিয়ে মাঠে পানি প্রবেশ করে মনিয়ারী,বিশা,ভোঁপাড়া,সাহাগোলাসহ বেশ কয়েকটি এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা অভিজিত কুমার কুন্ডু জানান,শুক্রবার দুপুর থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত নতুন করে আরো এক হাজার ৯৮৭বিঘা জমির ধান পানিতে তলে গেছে। এর আগে প্রায় চার হাজার বিঘা জমির ধান পানিতে তলে যায়। এতে কয়েকদিনের বন্যায় মোট পাঁচ হাজার ৬২৫ বিঘা জমির ধান পানিতে তলে গেলো। এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে আত্রাই নদীর উপজেলার নন্দনালী বেড়িবাঁধ বাধ ভেঙ্গে যায় এবং পানির তোরে আত্রাই-বান্দাইখাড়া পাকা সড়ক ভেঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
জগদাস গ্রামের আমজাদ হোসেন বলেন,ভাঙ্গা বাঁধ বাঁধতে না পারলে মাঠের ফসল রক্ষা পাবেনা। কাশিয়াবড়ী বলরামচক চৌধুরী পাড়ার ওয়াশিম কুমার সরকার বলেন,বাঁধ ভেঙ্গে তার ১৯বিঘা জমির ধান পানিতে তলে গেছে। তিনি বলেন,বাঁধ সংস্কারের মাধ্যমে পানি আটকানো না গেলে আরো হাজার হাজার বিঘা জমির ধান তলে যাবে। এছাড়া বহু ঘরবাড়ী নষ্ট হয়ে যাবে।তাই যত দ্রæত বাঁধ সংস্কার করে পানি আটকানো যাবে তত ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। তিনি আরো বলেন,মাঠে যদি পানি নতুন করে না ঢোকে এবং দ্রæত জমি থেকে পানি নেমে যায় তাহলে ডুবে যাওয়া ধান অনেকটায় স্বাভাবিক হতে পারে।
আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্চিতা বিশ্বাস বলেন,ক্ষতিগ্রস্থ্যদের সরকারীভাবে খাদ্য সহায়তা অব্যাহত আছে। আমরা সবার প্রতি সার্বিকভাবে খোঁজ খবর রাখছি। প্রয়োজনে আরো সহায়তা করা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নওগাঁর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রবীর কুমার পাল বলেন,শুক্রবার থেকে নদীতে পানি কমতে শুরু করেছে। মাঠের ফসল রক্ষায় প্রতিটি ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধের সংস্কার কাজ খুব তোরজোর ভাবেই শুরু করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন,জনপ্রতিনিধি এবং সেচ্ছাসেবকরা সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছেন। আবহাওয়া ভাল থাকলে দুই/এক দিনের মধ্যেই সংস্কার কাজ শেষ হতে পারে বলে জানান তিনি।