যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে অফিসে ভাড়া নিয়ে ৬ মাসেও কোন ভাড়া না দিয়ে উল্টো প্রবাসী বাংলাদেশি ভবন মালিককে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিউ ইয়র্কের সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাংলা সিডিপ্যাপ ও আলেগ্রা হোম কেয়ারের সাথে জামাইকার নিহারিকা এনওয়াইসি কর্পোরেশন চলতি বছরের মার্চ মাসে হিলসাইড এভেনিউয়ের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ১০ বছরের ভাড়ার জন্য উভয় পক্ষ চুক্তিবদ্ধ হন। বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে ভাড়া নিয়ে অফিস চালুর আগেই উপর তলায় আবাসিক হিসেবে সপরিবারে বসবাস শুরু করেছেন সিডিপ্যাপ ও আলেগ্রা হোম কেয়ারের কর্মকর্তা-কর্মচারি। গত ৬ মাস কোন ভাড়া না দিয়ে উল্টো ভবন মালিককে ইজারা লঙ্ঘনের অভিযোগে আইনি নোটিস পাঠিয়ে হয়রানি করছেন। ভাড়া প্রদানে অক্ষমতা ও মোটা অংকের বকেয়া আদায়ে বাংলা সিডিপ্যাপ ও আলেগ্রা হোম কেয়ারের মালিক আবু জাফর মাহমুদের নামে সমন জারি করেছে আদালত।
নিহারিকা এনওয়াইসি কর্পোরেশনের স্বত্তাধিকারী মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম জানান, জামাইকার হিলসাইড এভেনিউতে (১৪৭-১৪) তার একটি ভবন ভাড়া দেওয়া হবে এমন খবর পেয়ে নিউ ইয়র্কের সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাংলা সিডিপ্যাপ ও আলেগ্রা হোম কেয়ারের স্বত্তাধিকারী আবু জাফর মাহমুদ সেটি ভাড়া নেবার আগ্রহ প্রকাশ করেন। অফিস ভাড়া সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে উভয়ের মধ্যে নানা আলোচনা হয় এবং শেষে তারা একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছান। রিয়েল ইষ্টেট ব্রোকার ও উভয় পক্ষের অ্যাটর্নি উপস্থিতিতে গত ২১ মার্চ ২০২৩ তারা চুক্তির কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেন।
ভবন মালিক আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক আলোচনাকালে জাফর মাহমুদ অফিসটি ২০ বছরের জন্য ভাড়া নেবার আগ্রহ দেখান। সেই মোতাবেক তাকে চুক্তিনামা তৈরি করতেও বলেন। মেয়াদ শেষে আবারও ১০ বছর নবায়ন করতে পারবেন বলে জানালে জাফর মাহমুদ তাতে রাজি হন। পরে ১০ বছরের জন্য তারা চুক্তিবদ্ধ হন। মৌখিক আলোচনায় ২ মাসের ভাড়া (বাংলাদেশি ভাড়াটে বিবেচনা করে) পরিপূরক বা কমপ্লিমেন্টারি হিসেবে ধরা হয়। গত ৬ মাসের মোট বকেয়া ভাড়ার পরিমান দাঁড়িয়েছে ৬৪ হাজার ১ শত ৭৯ ডলার। সেই সাথে ২ মাসের পরিপূরক বা কমপ্লিমেন্টারি ২১ হাজার ৯ শত ৫৯ ডলার ভাড়া যোগ করা হলে মোট ভাড়ার পরিমান দাঁড়ায় ৮৬ হাজার ১ শত ৩৮ ডলার। বকেয়া ভাড়া পরিশোধের জন্য আমিনুল বেশ কয়েকবার তাগিদ দেন জাফর মাহমুদকে, কিন্তু তিনি তা পরিশোধ করেননি।
এদিকে চুক্তি সম্পাদনের এক সপ্তাহের মধ্যেই তার অফিসের একজন কর্মচারি পরিবারসহ উপর তলায় ভাড়াটে হিসেবে উঠে পড়েন। অফিসের একজন কর্মচরি উপরে থাকবেন বলে আমিনুলকে বলা হয়েছিল। কিন্তু বউ বাচ্চা নিয়ে সেখানে বসবাস করবেন এমন কোন কথা আগে বলা হয়নি। এরই মধ্যে অফিসে সদর দরজা ও উপরে বাসায় যাবার দরজায় তালা পরিবর্তন করে নতুন তালা লাগানো হয়। ফলে অফিসের ভিতরে তারা কি ধরণের সংস্কারে কাজ করছেন আমিনুলের পক্ষে তা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছিল না। এমনকি সিটি বিল্ডিং ডিপার্টমেন্টের অনুমতি ছাড়াই নতুন বাথরুমসহ বৈদ্যুতিক কাজ কর্ম সম্পাদন করায় তা দেখে আমিনুল হতাশ হয়ে পড়েন। বকেয়া ভাড়া না দিয়েই তালা পরিবর্তনের ঘটনায় ভিতরের টুকিটাকি কাজে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। নতুন চাবিও বিল্ডিং এর মালিককে দেওয়া হয়নি। ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়েন আমিনুল। এরই মধ্যে গত ১১ জুলাই আমিনুল ফেডেক্সের মাধ্যমে একটি আইনি নোটিস হাতে পান। তাতে আমিনুলের বিরুদ্ধে ইজারা লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে। নোটিসে বলা হয় আমিনুল দোকানসহ দুটি এপার্টমেন্টের কথা বলেছিলো কিন্তু বাস্তবে একটি এপার্টমেন্ট পাওয়া গেছে। সেখানে কোন গ্যাসের সংযোগ, তাপ সংযোগ এবং গরম পানির কোন ব্যবস্থা নেই।
আবু জাফর মাহমু্দের অ্যাটর্নির পাঠানো উক্ত চিঠির ব্যাখা দিয়ে আমিনুল বলেন, গরম পানি না থাকলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তার কর্মচারি গত মার্চ মাস থেকে কীভাবে সেখানে বসবাস করছেন। চুক্তিপত্রে কোন এপার্টমেন্টের কথাই উল্লেখ নেই। এটা আবাসিক ভবন নয়, সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। তবে যেহেতু ভাড়াটে একজন বাংলাদেশি সেটা বিবেচনা করে এবং যেহেতু উপরে থাকার পরিবেশ রয়েছে তাই যে কোন ব্যক্তি সেখানে বসবাস করতে পারবেন, কিন্তু কোন সাবলেট হিসেবে নয়। যুক্তরাষ্ট্রে নবাগত এবং ভাড়াটের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আদিত্য শাহীন নামে্র একজন সংবাদকর্মী জাফর মাহমুদকে প্রতিমাসে আড়াই হাজার ডলার করে পরিশোধ করেন বলে আমিনুলের কাছে তিনি স্বীকার করেন শাহীন।
আমিনুল আরও বলেন, চুক্তিপত্র সম্পাদনের আগে বেশ কয়েক দফা তা পরিবর্তন করা হয়। জাফর মাহমুদ বারবার তাগিদ দিচ্ছিলেন যে কোন সময় উক্ত প্রোপার্টি বিক্রি করা হলে তাকেই যেন প্রথম ক্রেতা হিসেবে প্রাধান্য দেওয়া হয়। আ্মিনুল তাতে রাজি হয়নি। তিনি বলেন যখন বিক্রি করবো তখন দেখা যাবে। এতে কিছুটা মনক্ষুণ্ন হয়ে পড়েন জাফর।
চুক্তিপত্রের শর্ত অনুযায়ী জামানতের ৩ মাসের অগ্রিম অর্থ পেতেও বেশ বেগ পেতে হয়েছে আমিনুলকে। ৩ মাসের অগ্রিম জামানত বাবদ ৩১ হাজার ৫শত ডলার ক্যাশিয়ার বা ব্যাংক চেকের মাধ্যমে পরিশোধের দাবি জানান আমিনুল। এতে আপত্তি জানান জাফর। তিনি ব্যক্তিগত চেকের মাধ্যমে তা পরিশোধ করতে চান। এভাবেই কেটে যায় প্রায় দু'সপ্তাহ। ব্যক্তিগত চেক ক্যাশ না হওয়া পর্যন্ত চাবি বুঝিয়ে দেওয়া হবে না এই শর্তে উভয়েই রাজি হলে পরে বিষয়টি চূড়ান্ত হয়।
উল্লেখিত শর্ত মোতাবেক ভাড়াটে তার নিজের নামে গ্যাস, বিদ্যুৎ, তাপ ও পানি সবকিছু এক মাসের মধ্যেই ভাড়াটিয়ার নামে একাউন্ট খুলে তা চালু রাখার কথা। জাফর মাহমুদ গত ৬ মাসেও তা করেননি। ফলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে নিয়মিত আমিনুলের নামে বিল পাঠানো হয়। দীর্ঘদিন কোন গ্যাসের সংযোগ ছিল না উক্ত ভবনে। তাই নতুন করে বিল্ডিং পরিদর্শনের পর গত ১২ জুলাই গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়। তালা পরিবর্তনের ফলে প্লাম্বিং কোম্পানি বৈদ্যুতিক সংযোগের সাথে গ্যাসের সংযোগ দিতে ব্যর্থ হয়ে ফেরত যান। দীর্ঘ ৬ মাসেও ভাড়াটিয়ার নিজের বৈদ্যুতিক একাউন্ট না করায় দেড় মাস অপেক্ষার করে নিরুপায় হয়ে বিল্ডিং এর মালিক আমিনুল নিজের নামে গ্যাসের একাউন্ট খুলে বৈদ্যুতিক সংযোগের সাথে গ্যাস সংযোগ করে দেন। ভাড়া না পেয়েও বিল্ডিং মালিককে আবারও মোটা অংকের অর্থ খরচ করতে হয়েছে উক্ত কাজগুলো সম্পাদন করতে। শেষে আদালতের শরণাপন্ন হন আমিনুল। বিজ্ঞ আদালত ভাড়া প্রদানে অক্ষমতা ও মোটা অংকের বকেয়া আদায়ে বাংলা সিডিপ্যাপ ও আলেগ্রা হোম কেয়ারের স্বত্তাধিকারী আবু জাফর মাহমুদের নামে গত ১১ সেপ্টেম্বর' ২৩ একটি সমন জারি করেন।
আমিনুল এ প্রতিনিধিকে জানান, পৃথিবীতে ভালো মানুষের সংখ্যা খুবই কম। নিউ ইয়র্কের অধিকাংশ মানুষই আবু জাফর মাহমুদকে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবেই চেনেন এবং জানেন। কিন্তু তার ভেতর ও বাইরের চরিত্র একেবারেই ভিন্ন। নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটির বিভিন্ন সভামঞ্চে তিনি দেশাত্ববোধ ও সমাজ সেবক সেজে নানা বক্তৃতা দিয়ে বেড়ান। মানুষকে অশান্তিতে রেখে সমাজ সেবা আর শান্তির বুলি ছড়িয়ে কী লাভ। আজ হোক আর কাল হোক মানুষ ঠিকই তার আসল চরিত্র খুঁজে বের করবে। সরাসরি তার সাথে না মিশলে বা ব্যবসায়িক লেনদেন না করলে শুধু আমি না কেউই জানতে পারবেন না মুখোশের আড়ালে তার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কথা। তার আসল পরিচয় খুব শিগগির সমাজের মানুষের কাছে বেরিয়ে আসবে বলে আশা করেন তিনি।
আমিনুল বলেন, দেশের মানুষের সাথে জাফর মাহমুদের এ রকম আচরণ করাটা মোটেই ঠিক হয়নি। এটা একটা ভন্ডামি ছাড়া আর কিছুই না। ভন্ডামিরও একটা সীমা থাকে। ভদ্রলোকের মুখোশ পরে মুখে এক রকম কথাবার্তা আর অন্তরে নোংরামি এ ধরনের মানুষের কাছ থেকে প্রবাসীদের দূরে থাকার পরামর্শ দেন আমিনুল। তিনি বলেন, তার খপ্পরে পড়ে আমার মত আর কোন প্রবাসীর যেন সর্বনাশ না ঘটে। সেজন্য প্রবাসীদের সজাগ থাকারও পরামর্শ দেন তিনি।
আমিনুলের বর্তমান সমস্যার বিষয় জানতে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক তার সাথে যোগাযোগ করেন। তারা অফিসে এসে সাংবাদিকতার স্টাইলে কথাবার্তা বলে হম্বিতম্বি ভাব দেখান। সত্য ঘটনা প্রকাশে সর্বদা তৎপরের কথা বলে সমস্ত কাগজপত্রের কপি গুছিয়ে নিয়ে যান। কয়েকদিন পর সবাই কেন যেন চুপসে যান। মনে হয় তারা ম্যানেজ হয়েছে অথবা একজন মুখোশধারী অসৎ ব্যক্তিকে ভীষন ভয় পান।
বাংলা সিডিপ্যাপ ও আলেগ্রা হোম কেয়ারের স্বত্তাধিকারী আবু জাফর মাহমুদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুঠোফোনের ক্ষুদে বার্তায় জানান, বিল্ডিং মালিককে প্রাপ্য ভাড়া প্রদানে আমি প্রস্তুত আছি। ভাড়া সংক্রান্ত চুক্তি হবার পর বিল্ডিংয়ের অন্যান্য কাজের সঠিক ডকুমেন্ট দিতে পারেননি ভবন মালিক। বাণিজ্যিক ভাবে চুক্তিনামা তৈরির সময় মিশ্র ব্যবহারের এ সম্পত্তি বিবরণ অনেক কিছুই লুকিয়েছেন তিনি
। আমরা উভয় পক্ষের আইনজীবীদের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে পারতাম। শুধুমাত্র ভবন মালিকের অসহযোগিতার জন্য এটি বিলম্ব হচ্ছে। ভবনটি ভাড়া নেবার পর থেকে আমরা তাকে সহযোগিতা করে আসছি। দীর্ঘদিন ধরে ভবনের অনিয়মের কথা গোপন করে রেখেছেন মালিক।
ঘটনাস্থলে গিয়ে যে কেউ সেটা দেখতে পারেন। তারপরও ব্যাংকের চেক নিয়ে আমার অফিসের লোকজন গিয়ে মালিকের সাথে দেখা করেন। তাকে চেকটি গ্রহণ করতে বলেন এবং সমস্যাটি সমাধানের উপায় নিয়ে আলোচনা করার জন্য বলা হয়।
বিল্ডিং মালিক সহযোগিতা করেননি বরং তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করেছেন। তার খুব পরিচিত অ্যাটর্নিকে আমি নিযুক্ত করেছি। এ সমস্যাটি সমাধান করার জন্য উভয় অ্যাটর্নির মধ্যে আলোচনাও চলছে৷ আশা করি ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে সঠিকভাবে সহযোগিতা করলে দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হবে। তিনি বলেন, আমি ভাড়া দিতে প্রস্তুত। ভবনটি ব্যবহারযোগ্য করার জন্য মেঝে সংস্কারের কাজ চলছে।
জাফর মাহমুদের কথার জবাবে আমিনুল বলেন, চেক নিয়ে কেউ তার কাছে আসেননি। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তার লোকের সাথে দুর্ব্যবহারের কোন প্রশ্নই আসে না। তাদেরকে যথাযথভাবে আপ্যায়ন করে বিদায় দেওয়া হয়েছে। তার বর্তমান অফিসে সিসি ক্যামেরাও রয়েছে, প্রয়োজনে যে কেউ এসে তা দেখলে প্রমাণ পাবেন।
ভবনের উপর তলার বর্তমান ভাড়াটে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আদিত্য শাহীনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনি উল্লেখিত বাসায় ভাড়া দিয়ে থাকেন না। বাংলা সিডিপ্যাপ সার্ভিসেস-এ কর্মরত। সেই হিসেবে তাকে ওই বাসায় শর্তহীন থাকার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। শাহীন বলেন, ইতোমধ্যে বাসা ছেড়ে দেবার জন্য অ্যাটর্নির মাধ্যমে বেশ কয়েকটি নোটিসও তিনি পেয়েছেন।