আধুনিক মানুষকে মারণ রোগ থেকে বাঁচাতে পারে পূর্বপুরুষের ডিএনএ


অনলাইন ডেস্ক: , আপডেট করা হয়েছে : 26-09-2023

আধুনিক মানুষকে মারণ রোগ থেকে বাঁচাতে পারে পূর্বপুরুষের ডিএনএ

পূর্বপুরুষদের জিনেই আছে জিয়ন কাঠি। করোনার সংক্রমণ তো বটেই, যে কোনও সংক্রামক ভাইরাসের রোগ থেকে আধুনিক মানুষকে বাঁচাবে আদিম মানব নিয়ান্ডারথাল (Neanderthals)। একেবারে ৬০ হাজার বছর আগের কথা। যখন আদিম মানুষ আর আধুনিক মানুষ প্রায় সহাবস্থানে চলে এসেছে। এক প্রজাতির বিলুপ্তির ঘণ্টা বেজেছে, আর অন্য প্রজাতি ধীরে ধীরে বিকশিত হচ্ছে। আধুনিক মানবের ঠিক আগের স্তরেই রয়েছে এই নিয়ান্ডারথালেরা। এই প্রজাতির বিবর্তনেই যে আধুনিক মানুষের জন্ম হয়েছে তেমনটা বলা যায় না। বরং ইতিহাস বলে দুই প্রজাতি একটা সময় পাশাপাশি সহাবস্থান করত। তাদের সংমিশ্রণও ঘটেছিল। ফলে জিনের আদানপ্রদানও হয়। আধুনিক মানুষের বংশপরম্পরায় সেই জিন চলে আসছে। আর এই জিনেই নাকি আছে জাদুমন্ত্র। 

বিজ্ঞানীরা বলছেন, আদিম মানুষের এই জিনগুলিকে পাওয়া গিয়েছে আধুনিক মানুষের ১২ নম্বর ক্রোমোজোমের ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ)-এর মধ্যে। রয়েছে একটা ঝাঁকে (‘ক্লাস্টার’)। এই জিনগুলি ‘হ্যাপলোটাইপ’। যার অর্থ, নিয়ান্ডারথালদের শরীরের কয়েকটি জিনের আর একটি রূপ (ভ্যারিয়ান্ট)।

ইউরোপ, আমেরিকায় মাত্র ২ শতাংশের শরীরে নিয়ান্ডারথালের ডিএনএ আছে, কিন্তু ভারতীয়দের মধ্যে এই সংখ্যা প্রায় ৫০ শতাংশ। অন্তত ৪৯.৫ শতাংশ গুজরাতি ও ৪৮ শতাংশ তামিলদের শরীরে এখন নিয়ান্ডারথালের জিন মিশে আছে। গবেষকরা বলছেন, এই জিন সংক্রমণে মৃত্যুর ঝুঁকি ২২ শতাংশ কমিয়ে দেয়।

দশ বছর আগেই নিয়ান্ডারথাল মানবের গোটা জিনের (ডিএনএ)বিন্যাস বা সিকুয়েন্স বার করতে পেরেছিলেন ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের হিউম্যান হিস্ট্রি বিভাগের বিজ্ঞানীরা। সেই খোঁজ ছিল ঐতিহাসিক। গবেষকরা বলেছিলেন, ইউরোপ, এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মানুষ এখনও নিয়ান্ডারথাল মানবের জিন বয়ে নিয়ে চলেছে। গবেষকরা বলছেন, নিয়ান্ডারথালের ২০% জিন এখনও আধুনিক মানুষের শরীরে টিকে আছে। যার মধ্যে ইউরেশিয়ানদের শরীরে অন্তত ১-৪% জিন রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়াতে সেটাই ৩০%।

নিয়ান্ডারথালদের প্রজাতি হল Homo neanderthalensis বা Homo sapiens neanderthalensis। ৪০-৫০ হাজার বছর বা তারও আগে ইউরেশিয়ায় নিয়ান্ডারথালদের বসবাসের প্রমাণ পাওয়া গেছে। আফ্রিকায় নিয়ান্ডারথালের জিন মেলেনি। তাই মনে করা হয় আফ্রিকা থেকে আদিম মানব ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ার পরেই নিয়ান্ডারথাল প্রজাতির উদ্ভব হয়। প্রত্নতত্ত্ববিদরা বলেন, ইউরেশিয়া, পশ্চিম পর্তুগাল, ওয়েলস থেকে সাইবেরিয়া অবধি এই প্রজাতির বিস্তৃতি ঘটেছিল।

বিবর্তনে অন্তত ১৫টি প্রজাতির আদিম মানুষের আগমন হয়েছিল, যারা বিভিন্ন সময়ে আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষের সঙ্গে সহাবস্থান করেছিল। নিয়ান্ডারথালের পাশাপাশি ছিল ডেনিসোভানরাও (Denisovans)। সাইবেরিয়ার আল্টাই পর্বতের মাঝে একটি অন্ধকার গুহার নাম ডেনিসোভা। সেই গুহাবাসীরাও নিয়ান্ডারথালদের (Neanderthals) সঙ্গে একই সময় পৃথিবীতে টিকে ছিল। এক দশক আগে জার্মানির ম্যাক্স প্লাঙ্ক ইনস্টিটিউটের গবেষণায় জানা গিয়েছিল, ডেনিসোভান ডিএনএ এখনও বহন করে চলেছে মাকালু আর নিউগিনি দ্বীপপুঞ্জের প্রাচীন গাঢ় ত্বকের অধিবাসী মেলানেশিয়ানরা। সাইবেরিয়ার আল্টাই থেকে ২৮০০ কিলোমিটার দূরে, আজ থেকে পঞ্চাশ হাজার বছর আগে ডেনিসোভানরা তিব্বতের বৈশিয়া ক্রাস্ট গুহাতেও বসবাস করেছিল। কাজেই তিব্বতীদের মধ্যেও ডেনিসোভানদের জিন আছে বলে মনে করা হয়। 

বিজ্ঞানীরা  দু’টি ডেনিসোভান ও তিনটি নিয়ান্ডারথালের (Neanderthals) ‘ওয়াই’ ক্রোমোজ়োম-এর সাহায্যে পরীক্ষা করে দেখেছেন, প্রায় সাত লক্ষ বছর আগে মানব বিবর্তনের মূল স্রোত থেকে আলাদা হয় এবং সাড়ে তিন লক্ষ বছর আগে নিয়ান্ডারথাল আমাদের পূর্বপুরুষদের থেকে পৃথক হয়েছে। এই ডেনিসোভান ও নিয়ান্ডারথালদের জিনের সংমিশ্রণ এখনও নাকি আধুনিক মানবের শরীরে বিদ্যমান। আর পূর্বপুরুষদের এই জিনই নাকি আধুনিক মানুষকে সমস্ত রকম অসুখ বিসুখ থেকে বাঁচাতে পারে। পূর্বপুরুষদের এই জিন খুঁজে বের করে তার কাটাছেঁড়া করা শুরু করেছেন বিজ্ঞানীরা। কীভাবে আদিম জিন বর্তমান সময়ের জিয়ন কাঠি হয়ে উঠতে পারে সেই চেষ্টাই চলছে।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]