‘নারীদের নেতৃত্বে এনে জাতিসংঘকে উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে’


অনলাইন ডেস্ক: , আপডেট করা হয়েছে : 21-09-2023

‘নারীদের নেতৃত্বে এনে জাতিসংঘকে উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে’

নারীদের জীবনে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলতে তাদের অবশ্যই নেতৃত্বের অবস্থানে থাকতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে প্রতিনিধি ডাইনিং রুমে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৮তম অধিবেশনের ফাঁকে ইউএনজিএ প্ল্যাটফর্ম অব উইমেন লিডারদের বার্ষিক সভায় বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমাদের কর্মকাণ্ডকে অংশগ্রহণ থেকে নেতৃত্বে উন্নীত করতে হবে এবং নেতৃত্বের ক্ষেত্রে জাতিসংঘকে অবশ্যই উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে। এটা দুঃখজনক, জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে এখন পর্যন্ত কোনো নারীকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। সময় এসেছে, আমরা শিগগিরই একজনকে পাব।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই নিজেদের অংশীদারত্বের ভিত্তি বাড়াতে হবে, যাতে সব ক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতা একটি আদর্শ হয়ে ওঠে। নারীর অংশগ্রহণকে উচ্চতর পর্যায়ে এগিয়ে নিতে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। নেতা হিসাবে, আমাদের তাদের সাথে জড়িত থাকতে হবে এবং তাদের এই বিষয়ে সাহসী উদ্যোগ নিতে উৎসাহিত করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি দেশ আলাদা, তাদের ভিন্ন চ্যালেঞ্জ এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভিন্নতা রয়েছে। তবে, সবাই যেহেতু ঐতিহাসিক এজেন্ডা ২০৩০ গ্রহণ করেছে, সেহেতু তাদের লিঙ্গ সমতা অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকা উচিত। আমরা কোনো অবস্থাতেই সেই অঙ্গীকার থেকে পিছিয়ে যেতে পারি না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘নারী নেত্রী হিসেবে, সব নারীর পাশে দাঁড়ানো এবং অন্যদের পথ দেখাতে পারে এমন উদাহরণ তৈরি করা আমাদের দায়িত্ব। একটি লিঙ্গ-সমতার বিশ্ব অর্জনের জন্য অবশ্যই আমাদের অবস্থান এবং শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে।’

শুরুতেই শেখ হাসিনা সভা আহ্বান করার জন্য পিজিএ ও ইউএন উইমেনের নির্বাহী পরিচালককে ধন্যবাদ জানান। ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) এর থিম্যাটিক অ্যাম্বাসেডর সায়মা ওয়াজেদ সভায় উপস্থিত ছিলেন।

২০২১ সালে এর সূচনা হওয়ার পর থেকে এই প্ল্যাটফর্মটিকে খুব দরকারি বলে মনে করেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেখানে আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করি এবং একে অপরের কাছ থেকে শিখি, কীভাবে স্থানীয় সমাধানগুলো নিয়ে বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের অর্ধেক জনসংখ্যাকে পেছনে ফেলে শান্তি, সমৃদ্ধি, অগ্রগতি ও স্থায়ীত্ব অর্জনের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা কোনো ফল দেবে না। লিঙ্গ সমতা একটি বিকল্প নয়, বরং একটি ন্যায্য ও ন্যায়সম্মত বিশ্ব অর্জনের জন্য অপরিহার্য।’

নিজের দেশের অভিজ্ঞতা বিনিময় করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে, যার ফলে জনগণ ছাড়া আর কোনো সম্পদ ছিল না। সুতরাং, আমরা আমাদের সমগ্র মানবসম্পদকে পুঁজি হিসেবে কাজে লাগানোর এবং একটি সমৃদ্ধ দেশ গঠনে আমাদের সমান অংশীদার হিসেবে নারীদের অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতি দ্বারা পরিচালিত হয়ে আমরা জাতীয় জীবনের সব ক্ষেত্রে নারীদের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় আইন ও নীতি গ্রহণ করেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার মেয়েদের শিক্ষা ও নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও বিনামূল্যে বই দেওয়ার পাশাপাশি দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করা হয়েছে। প্রাথমিক স্তরের ৬০ শতাংশ স্কুলশিক্ষক নারী এবং দেশের তৈরি পোশাক শিল্পে ৪০ লাখেরও বেশি নারী কর্মরত রয়েছেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা নারী উদ্যোক্তাদেরকে উৎসাহিত করতে এবং তাদের অর্থায়নে সহায়তা করার জন্য নির্দিষ্ট নীতিগত পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা নারী উদ্যোক্তাদের জন্য রেয়াতি হারে ঋণ নিশ্চিত করেছি। সরকার ব্যবসায়িক উদ্যোগে নারীদের প্রচার ও সহায়তার জন্য জয়িতা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছে এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদে আসীন হওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের জন্য দুয়ার অবারিত করেছে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘নারীরা এখন সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক, রাষ্ট্রদূত, বেসামরিক প্রশাসনের উচ্চপদে আসীন, সশস্ত্র বাহিনী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ইত্যাদি হচ্ছেন। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে, সরকারের শীর্ষ থেকে সর্বনিম্ন স্তর পর্যন্ত সব স্তরে নারীদের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার আইসিটি ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নারী ও মেয়েদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করেছে। ১২ হাজার ২৯২টি ইউনিয়ন এবং পৌর ডিজিটাল সেন্টার রয়েছে, যেগুলো একজন নারী ও একজন পুরুষ দ্বারা পরিচালিত হয়, পাশাপাশি সরকার নারীদের ফ্রিল্যান্সার হিসাবে কাজ করার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো প্রযুক্তিগত স্টার্ট আপ এবং ই-কমার্স সেক্টরসহ আইসিটি সেক্টরে লিঙ্গ সমতা অর্জন করা। আমরা জেন্ডার-সংবেদনশীল বাজেট প্রবর্তনকারী প্রথম দেশগুলোর অন্যতম। আমাদের বাজেটের ৩০ শতাংশ নারী উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য বরাদ্দ করা হয়।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের নারীরাও স্থিতিশীলতা অর্জনে অব্যাহত প্রচেষ্টার অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমাদের লিঙ্গ-সমতা ভিত্তিক দুর্যোগ মোকাবিলা পরিকল্পনা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি অর্জন করেছে। নারী উন্নয়নে আমাদের বিনিয়োগ আমাদের লভ্যাংশ দিয়েছে। জিডিপিতে নারীর অবদান ৩৪ শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নারীকে তাদের পরিবার এবং সমাজ উভয় ক্ষেত্রেই সিদ্ধান্ত গ্রহণে আরও বেশি ভূমিকা রাখতে সক্ষম করেছে।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]