পাঁচ শর্তে আসছে চার কোটি ডিম


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 20-09-2023

পাঁচ শর্তে আসছে চার কোটি ডিম

ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে এবার চার কোটি ডিম আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। চারটি প্রতিষ্ঠানকে যত দ্রুত সম্ভব দেশে এই ডিম আনতে বলা হয়েছে। গতকাল সোমবার বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ সাংবাদিকদের এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

প্রতিষ্ঠানগুলো হলো মীম এন্টারপ্রাইজ, প্রাইম এনার্জি ইমপোর্টার্স অ্যান্ড সাপ্লাইয়ার্স, টাইগার ট্রেডিং ও অর্ণব ট্রেডিং লিমিটেড।

 

ডিম আমদানিতে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পাঁচটি শর্ত পালনের বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। শর্তগুলো হলো এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লুমুক্ত ডিম আমদানি করতে হবে; আমদানি করা ডিমের প্রতিটি চালানের জন্য রপ্তানিকারক দেশের সরকারের মাধ্যমে নির্ধারিত কিংবা ক্ষমতাপ্রাপ্ত উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লুর ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ামুক্ত সনদ দাখিল করতে হবে; সরকার নির্ধারিত শুল্ক বা কর পরিশোধ করতে হবে; নিষিদ্ধ পণ্য আমদানি করা যাবে না এবং সরকারের অন্য বিধি-বিধান মেনে চলতে হবে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তিনটি পণ্যের দাম বেঁধে দেয়। এসব পণ্য হলো ডিম, আলু ও দেশি পেঁয়াজ।

প্রতিটি ডিমের বাজারমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ টাকা। তবে এই দামে ডিম বিক্রি হচ্ছে না। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারিতে বেশি দামে কেনার কারণে তাঁরা সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি করতে পারছেন না।

 

বাণিজ্যসচিব জানান, ডিমের বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে আপাতত চার কোটি ডিম আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

চার প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে এক কোটি করে ডিম আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমদানি করা ডিম খুচরা পর্যায়ে সরকার নির্ধারিত দাম প্রতি পিস ১২ টাকায় বিক্রি হবে।

 

তপন কান্তি ঘোষ বলেন, কোন দেশ থেকে ডিম আমদানি করতে হবে, সেটি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। আমদানিকারকরাই ঠিক করবেন তাঁরা কোন দেশ থেকে ডিম আমদানি করবেন।

তবে আমদানি করা ডিমের দাম কী হবে, তা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।

 

বাণিজ্যসচিব বলেন, বাজারে যেহেতু ডিমের খুচরা মূল্য ১২ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, তাই আমদানি করা ডিমও প্রতিটি ১২ টাকার বেশি দামে বিক্রি করা যাবে না।

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, দেশে প্রতিদিন চার কোটি ডিমের চাহিদা রয়েছে। ওই চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়ে এক দিনের চাহিদা পূরণ করা যায়, শুরুতে সেই সংখ্যক ডিম আমদানি করা হবে। প্রয়োজন হলে আরো ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে। ডিমের বাজারে সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, দেশে প্রতিদিন চার কোটি ডিমের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে কাজী ফার্মস, নারিশ, প্যারাগন, আফতাব, কোয়ালিটি, প্রোভিটা, সিপি, ডায়মন্ড এগসহ ১০ কম্পানি বছরে প্রায় ২০৫ কোটি ডিম উৎপাদন করে, যা বার্ষিক চাহিদার ১১.৫ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডিম উৎপাদন করে কাজী ফার্মস, দৈনিক ১৩ লাখ পিস। এ ছাড়া প্যারাগন পোলট্রি সাড়ে সাত লাখ, সিপি সাত লাখ, ডায়মন্ড এগ সাড়ে ছয় লাখ, নারিশ অ্যাগ্রো ছয় লাখ ও নাহার অ্যাগ্রো প্রতিদিন সাড়ে পাঁচ লাখ ডিম উৎপাদন করছে।

তবে এসব কম্পানি চুক্তি ভিত্তিতে (কন্ট্রাক্ট ফার্মিং) অনেক প্রান্তিক খামারের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করছে। শুরুতে প্রান্তিক খামারিদের বাজারমূল্যের চেয়ে কম দরে বাচ্চা ও খাবার সরবরাহ করে কম্পানিগুলো। চুক্তিভিত্তিক খামারি বাড়ানোর জন্য কম্পানিগুলো শুরুতে বিভিন্ন এলাকায় এজেন্ট নিয়োগ দিলেও এখন সরাসরি কর্মী নিয়োগ করছে। এর মাধ্যমে পুরো দেশের মুরগি ও ডিমের বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিচ্ছে কম্পানিগুলো।

বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশে ডিমের উৎপাদনে ঘাটতি নেই। তিনি জানান, দেশে বর্তমানে প্রতিদিন চার কোটি থেকে সাড়ে চার কোটি ডিমের চাহিদা আছে। এর মধ্যে দেশে উৎপাদিত হয় পাঁচ কোটি পিস। তবে প্রাণিসম্পদের তথ্য মতে এটা ছয় কোটির বেশি।

সুমন হাওলাদার বলেন, উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। তাই পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন মনে করে, ডিমের দাম কমাতে হলে পোলট্র্রি খাবারের দাম কমাতে হবে। এটা করা সম্ভব। কেননা বিশ্ববাজারে পোলট্রি ফিডের দাম অনেক কমেছে, যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে আমদানি করলে প্রতি পিস ডিমে দাম পড়বে সাড়ে আট টাকা থেকে ৯ টাকা। তবে ১২ টাকার মধ্যে বিক্রি করতে হবে বলে সরকার গণমাধ্যমকে জানিয়েছে।

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, দেশের বাজারে প্রতিটি ডিম তারা ১০ টাকার কমে বিক্রি করতে পারবে। ভারত থেকে ডিম আসতে সময় লাগতে পারে এক সপ্তাহের মতো।

এক কোটি ডিম আমদানির অনুমতি পাওয়া টাইগার ট্রেডিংয়ের মালিক সাইফুর রহমান বলেন, ভারত ছাড়া অন্য কোনো দেশ থেকে ডিম আমদানি করাকে তাঁরা লাভজনক মনে করছেন না।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]