মক্কার কাফের অবিশ্বাসীরা এক গ্রাম্য পথিককে অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে বললো, তুমি মদিনায় গিয়ে মুসলমানদের ভয় দেখাবে যে, মক্কাবাসীরা আবার মদিনার পথে অগ্রসর হচ্ছে! নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওহির মাধ্যমে এসব ঘটনা জানতে পেরে শত্রুদের পেছন থেকে ধাবড়িয়ে ‘হামরাউল আসাদ’ নামক স্থান পর্যন্ত পৌছেন। কিন্তু শত্রু সৈন্যরা আগেই পালিয়ে গেছে। এ ঘটনার বর্ণনা করেই মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন-
سَنُلۡقِیۡ فِیۡ قُلُوۡبِ الَّذِیۡنَ کَفَرُوا الرُّعۡبَ بِمَاۤ اَشۡرَکُوۡا بِاللّٰهِ مَا لَمۡ یُنَزِّلۡ بِهٖ سُلۡطٰنًا ۚ وَ مَاۡوٰىهُمُ النَّارُ ؕ وَ بِئۡسَ مَثۡوَی الظّٰلِمِیۡنَ
‘যারা অবিশ্বাস করে, তাদের হৃদয়ে আমি ভীতির সঞ্চার করবো, যেহেতু তারা আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার স্থাপন করেছে; যার স্বপক্ষে আল্লাহ কোনো প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি। জাহান্নাম হবে তাদের নিবাস। আর অনাচারীদের আবাসস্থল অতি নিকৃষ্ট!’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৫১)
আয়াতের সার-সংক্ষেপ
আমি এখনই কাফেরদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার করে দিচ্ছি, যেহেতু তারা এমন এক বস্তুকে আল্লাহর অংশীদার স্থাপন করেছে, যার (অংশীদার হওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কোনো প্রমাণ অবতরণ করেননি। সব যুক্তিগত প্রমাণ এর অন্তর্ভূক্ত। যদিও প্রত্যেক মূর্খ ও কাফির কোনো না কোনো প্রমাণ উপস্থিত করে। কোনো ধর্তব্য ও গ্রহণযোগ্য প্রমাণ তাদের কাছে নেই। জাহান্নাম তাদের বাসস্থান। আর এটা জালিমদের জন্য খুবই মন্দ বাসস্থান।
আয়াতে অবিশ্বাসীদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার করার ওয়াদাটি এভাবে প্রকাশ পায় যে, প্রথম মুসলমানদের পরাজয় সত্ত্বেও অবিশ্বাসীরা বাহ্যিক কোনো কারণ ছাড়াই মক্কার দিকে প্রত্যাবর্তন করে। (বায়যাভী)
এরপর কিছুদূর যাওয়ার তারা বুঝতে পারে যে, মৃতপ্রায় মুসলমানদের মরণ পর্ব শেষ না করে চলে আশা বুদ্ধিমানের কাজ হয়নি। এই মনে করে তারা আবার মদিনার দিকে ধাবিত হওয়ার ইচ্ছা করতেই আল্লাহ তাআলা তাদের মনে ভীতির সঞ্চার করে দেন। হাদিসে এসেছে-
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমাকে একমাসে অতিক্রম করার মত রাস্তার দূরত্ব থেকে কাফেরদের মনে ভয় ঢুকিয়ে সাহায্য করা হয়েছে।’ (বুখারি, মুসলিম)
ফলে অবিশ্বাসীরা পুনরায় মদিনার দিকে অগ্রসর হওয়ার সাহস হারিয়ে ফেলে। তখন মক্কার কাফের অবিশ্বাসীরা এক গ্রাম্য পথিককে অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে বললো, তুমি মদিনায় গিয়ে মুসলমানদের ভয় দেখাবে যে, মক্কাবাসীরা আবার মদিনার পথে অগ্রসর হচ্ছে! নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওহির মাধ্যমে এসব ঘটনা জানতে পেরে শত্রুদের পেছন থেকে ধাবড়িয়ে ‘হামরাউল আসাদ’ নামক স্থান পর্যন্ত পৌছেন। কিন্তু শত্রু সৈন্যরা আগেই পালিয়ে গেছে। (মারেফুল কোরআন)
আবার মুসলিমদের প্রাথমিক পরাজয় দেখে কোনো কোনো কাফেরের অন্তরে এই খেয়াল জন্মালো যে, মুসলিমদেরকে একেবারে নিঃশেষ করে দেওয়ার এটা অতি উত্তম সুযোগ। ঠিক এই মুহূর্তে মহান আল্লাহ তাদের অন্তরে মুসলিমদের ভয় ঢুকিয়ে দিলেন। ফলে তারা নিজেদের পরিকল্পনাকে বাস্তব রূপ দেওয়ার সাহস করতে পারেনি। (ফাতহুল কাদির)
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমাকে পাঁচটি এমন জিনিস দেওয়া হয়েছে, যা আমার আগে কোনো নবিকে দেওয়া হয়নি। তার মধ্যে একটি হল, এক মাসের দূরত্বে অবস্থিত শত্রুর অন্তরে আমার ত্রাস (ভয়) ঢুকিয়ে দিয়ে আমার সাহায্য করা হয়েছে।’
এই হাদিস দ্বারা জানা যায় যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভয় স্থায়ীভাবে শত্রুর অন্তরে ভরে দেওয়া হয়েছিল। আর এই আয়াত দ্বারা জানা যায় যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে তাঁর উম্মত অর্থাৎ, মুসলিমদের ভয়ও মুশরিকদের অন্তরে ভরে দেওয়া হয়েছে এবং তার কারণ হলো- তাদের শিরক। অর্থাৎ, শিরককারীদের অন্তর সব সময় অন্যের ত্রাস ও ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআনুল কারিমের এ আয়াত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহকে প্রকৃত অভিভাবক ও শ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী হিসেবে পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।