আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যেদিন আরশের ছায়া ছাড়া কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন আল্লাহ তাআলা সাত ব্যক্তিকে ছায়া দান করবেন। তারা হলো ন্যায়পরায়ণ শাসক, সেই যুবক যার যৌবন আল্লাহ ইবাদতে অতিবাহিত হয়, সেই ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের দিকে আকৃষ্ট থাকে। সেই দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা স্থাপন করে; তার জন্য মিলিত হয় এবং তার জন্যই বিচ্ছিন্ন হয়। সেই ব্যক্তি যাকে কোনো অভিজাত রূপবতী নারী অবৈধ সম্পর্কের উদ্দেশ্যে ডাকে, কিন্তু সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি। সেই ব্যক্তি যে গোপনে দান করে; তার ডান হাত যা দান করে, বাম হাতও জানতে পারে না। সেই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে; ফলে তার উভয় চোখ অশ্রুতে ভেসে যায়। (সহিহ বুখারি ৬৮০৬, সহিহ মুসলিম ২৪২৭)
১. ন্যায়পরায়ণ শাসক: যে বাদশাহ বা শাসক ন্যায়পরায়ণতার সাথে দেশ শাসন করে, ন্যায়বিচার করে, জালিমকে শাস্তি দেয়, মজলুমকে তার হক বা অধিকার বুঝিয়ে দেয়, জনগণের অর্থ আত্মসাৎ,স্বজনপ্রীতি ইত্যাদি দুর্নীতি থেকে বিরত থাকে, সে কেয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের নিচে ছায়া পাবে।
২. এমন যুবক যার যৌবন আল্লাহ ইবাদতে অতিবাহিত হয়: যৌবনের ইবাদত আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়। কারণ যখন যৌবন থাকে, শরীরে শক্তিসামর্থ্য পূর্ণ মাত্রায় থাকে, তখন মানুষের জুলুম ও চরিত্রহীনতার প্রবণতাও বেশি থাকে। কুপ্রবৃত্তির তাড়না বেশি থাকে। নেক কাজে অনাগ্রহ বেশি থাকে। যে ব্যক্তি নিজের জীবনের এ পর্ব আল্লাহর ইবাদতে অতিবাহিত করতে পারে, সে সফল ও আল্লাহর প্রিয় বান্দা।
৩. যে ব্যক্তির অন্তর মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত থাকে: আল্লাহ আমাদের জন্য প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। এই নামাজগুলো আদায় করতে হয় নির্ধারিত সময়ে। যে ব্যক্তির অন্তর নামাজের জন্য সদাসচেতন থাকে এবং আগ্রহের সাথে অপেক্ষা করতে থাকে যে কখন আবার নামাজের সময় হবে, আবার সে মসজিদে যাবে, সেও কেয়ামতের দিন আরশের ছায়া পাবে।
৪. যে দুই ব্যক্তি আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব স্থাপন করে: যারা আল্লাহর জন্য পরস্পরের বন্ধু হন, পরস্পরকে ভালোবাসেন অর্থাৎ তাদের সম্পর্কে ভিত্তি হয় আল্লাহর আনুগত্য ও আল্লাহর প্রতি তাদের ভালোবাসা। তারা পরস্পরের ইমান, আল্লাহভীরুতা ও নেক আমল দেখেই পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হন ও বন্ধুত্ব স্থাপন করেন। আল্লাহর দীনের কাজে তারা পরস্পরের সহযোগী হন।
৫. রূপবতী নারীর প্রণয়াহ্বান আল্লাহর ভয়ে ফিরিয়ে দেয়: অভিজাত ও রূপবতী নারীদের প্রতি পুরুষের সহজাত তীব্র আকর্ষণ থাকে। এ রকম কোনো নারী যদি কাউকে অবৈধ সম্পর্কের প্রস্তাব দেয়, তা ফিরিয়ে দেওয়া খুবই কঠিন। আল্লাহর ভয়ে যে এ রকম পাপের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে পারে, সেও কেয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়া পাবে।
৬. যে গোপনে দান করে: দান সদকার ক্ষেত্রে রিয়া বা লৌকিকতায় মানুষ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়। মানুষের প্রবৃত্তি চায় তার দানের কথা সবাই জানুক। প্রবৃত্তির এই তাড়না দূর করে যে শুধু আল্লাহর জন্যই দান করতে পারবে, কাউকে না জানিয়ে গোপনে সদকা করতে পারবে, সেও কেয়ামতের দিন আরশের ছায়া পাবে।
৭. যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে কাঁদে: আল্লাহর ভালোবাসায় যার অন্তর পরিপূর্ণ, নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে তার প্রতি ভালোবাসায় যার দুই চোখ অশ্রুতে ভেসে যায়, সেও আল্লাহর প্রিয় বান্দা। কেয়ামতের দিন এ রকম আল্লাহপ্রেমিক ব্যক্তি আল্লাহর আরশের ছায়া পাবে।