অপারেশনাল সক্ষমতায় উন্নতি ফায়ার সার্ভিসের


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 14-09-2023

অপারেশনাল সক্ষমতায় উন্নতি ফায়ার সার্ভিসের

অগ্নিকাণ্ড, দুর্ঘটনা, নৌযান ডুবিসহ বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবিলায় সবার আগে সবার পাশে দাঁড়ায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। অগ্নিদুর্ঘটনা মোকাবিলা ও জানমালের নিরাপত্তায় জীবনের ঝুঁকি নিতেও পিছপা হন না সংস্থাটির সদস্যরা। তবে বেশ কয়েকটি বড় অগ্নিদুর্ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সেসব পাশ কাটিয়ে অত্যাধুনিক সরঞ্জাম যুক্ত করে উন্নত দেশের আদলেই নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে সংস্থাটি। অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশি গতিশীল এই প্রতিষ্ঠানের সেবাকাজ। বিশ্বের সর্বাধিক উচ্চতার লেডার সংবলিত অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজের গাড়ি যুক্ত হয়েছে সংস্থাটির যান্ত্রিক বহরে। বহুতল ভবনে অগ্নিদুর্ঘটনা মোকাবিলায় সব বিভাগীয় কার্যালয়ে সংযোজন করা হয়েছে টার্ন টেবল লেডার (টিটিএল)। অগ্নিনির্বাপণ কাজকে সহজ ও ফায়ারফাইটারদের জীবনহানি কমাতে কেনা হয়েছে রিমোট কন্ট্রোল ফায়ারফাইটিং গাড়ি ও ড্রোন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, স্মার্ট বাংলাদেশের অংশ হওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে সরকারের অকুণ্ঠ সমর্থন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা আর অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিনের দক্ষ নেতৃত্বে নজিরবিহীন অগ্রগতি হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের। তারই ফলস্বরূপ জনসেবায় অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাষ্ট্রের বেসামরিক সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২৩’ পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।
এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের ডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন ভোরের কাগজকে বলেন, এখানে যোগদানের পর থেকে আধুনিক ফায়ার সার্ভিস গড়তে যা যা করার দরকার, সেটিই করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গিকারগুলো বাস্তবায়নে জোর দিয়েছি। কিছু সীমাবদ্ধতা এখনো রয়েছে। আশা করি অতি দ্রুতই ফায়ার সার্ভিস আরো অত্যাধুনিক রূপ পাবে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, অপারেশনাল কাজের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বাড়ছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে কর্মরতদের নানা সুবিধা। উন্নয়নের এই ধারা ক্রমান্বয়ে বেগবান হচ্ছে। নগরকেন্দ্রিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে কার্যকর করতে বিভাগীয় কার্যালয়ে টিটিএল সংযোজন করা হয়েছে। এতে সব বিভাগীয় কার্যালয়ের সক্ষমতা বেড়েছে। সুউচ্চ ভবনের আগুন নেভানো এবং উদ্ধার কাজ সহজতর করতে টিটিএল নামের এই গাড়িটি দিয়ে ৬৮ মিটার উচ্চতা অর্থাৎ বহুতল ভবনের ২৪ তলা পর্যন্ত অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজ করা যাবে।
সূত্র আরো জানায়, আগে অপারেশনাল কাজে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মৃত্যুবরণ করলেও ছিল না রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। বর্তমান ডিজির একান্ত প্রচেষ্টায় সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নি নির্বাপণকালে আত্মাহুতি দেয়া ১৩ জন ফায়ারফাইটারকে সরকারিভাবে ‘অগ্নি বীর’ খেতাবে ভূষিত করা হয়েছে। এই ১৩ অগ্নিবীরকে দেয়া হয় মরণোত্তর ফায়ার সার্ভিস পদক। পরিবারকে দেয়া হয় আর্থিক অনুদান। অগ্নিবীরদের স্মৃতি সংরক্ষণে সীতাকুণ্ড ও কুমিরা ফায়ার স্টেশনে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের অভ্যন্তরে ‘অগ্নিসেনা উদ্যান’ নামে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। অধিদপ্তরের এই কর্মকাণ্ডে বেড়েছে কর্মীদের সাহস, আন্তরিকতা, মানবিক তৎপরতা।
তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এবং এই চেতানাকে নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে মিরপুর ট্রেনিং কমপ্লেক্সে তৈরি করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্নার। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের শহীদদের প্রকৃত ইতিহাস রচনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে ফায়ার সার্ভিসের অবদানের তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য কমিটি করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, গত একবছরে অধিদপ্তরের সদর দপ্তরের মূল ফটক, সীমানা প্রাচীর ও নতুন কনফারেন্স রুম নির্মাণ, বিভিন্ন আইনের সংকলন ও পেশাগত হ্যান্ডবুক প্রকাশ, অধিদপ্তরের সব জমি ডিজির নামে নামজারি, অর্গানোগ্রাম পুর্নগঠনে জোরালো ভূমিকা, ফায়ার স্টেশনের নতুন নকশা প্রণয়ন, এক একর জমির মধ্যে স্টেশন নির্মাণ, ২২টি ফায়ার স্টেশন বি শ্রেণি থেকে এ শ্রেণিতে উন্নতিকরণ, ফাউন্ডেশনসহ ৫ তলা স্টেশন ভবন নির্মাণ, আধুনিক আর্কাইভ করার পরিকল্পনা, ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ফায়ারফাইটারদের তুরস্কের ভূমিকম্পে উদ্ধারকাজে অংশ নিয়ে দেশের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে সুনাম বয়ে আনা বুঝিয়ে দেয় ফায়ার সার্ভিসের উন্নতির গতি।
এদিকে ফায়ার সার্ভিসের অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি সেবার মান উন্নত হচ্ছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে এর কর্মীদের নানা সুবিধা। ফায়ার সার্ভিসের সাফল্যের এই ধারায় সর্বশেষ সংযুক্ত হয়েছে কর্মীদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন- আজীবন রেশন সুবিধা। গত ১ জুলাই বা তার পরে অবসরে যাওয়া অধিদপ্তরের সঙ্গে যুক্ত সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী এই আজীবন রেশন সুবিধা পাবেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিসে গমনাগমন সহজ করার জন্য ফায়ার সার্ভিসের বিদ্যমান পরিবহন ব্যবহারকারীদের বাস ব্যবহার সম্পূর্ণ ফ্রি করা হয়েছে। সারাদেশের সব স্টেশনে শীতবস্ত্র ও ঔষধ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা এবং স্টাফদের আবাসন সমস্যা দূরীকরণে ২টি আবাসিক ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা ও গণপূর্তের বাসা বরাদ্দ কোটায় নাম অন্তর্ভুক্তকরণে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। করা হয়েছে সরকারি খরচে কর্মীদের হজে গমনের ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে সেবার সক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসকে কর্মীবান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হচ্ছে।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]