দিল্লি সফরে বড় অর্জন দেখছে আওয়ামী লীগ


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 14-09-2023

দিল্লি সফরে বড় অর্জন দেখছে আওয়ামী লীগ

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে জি-২০ সম্মেলন শেষে গতকাল রবিবার বিকালে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সম্মেলনের ফাঁকে তিনি কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকসহ একাধিক দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে। কুশল বিনিময়কালে জো বাইডেন সেলফি তুলছেন শেখ হাসিনার সঙ্গে- এমন দৃশ্যও দেখা গেছে গণমাধ্যমের বদৌলতে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে যথারীতি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নরেন্দ্র মোদিকে সঙ্গে নিয়েও জো বাইডেনের সঙ্গে কথা বলেছেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রীর এই দিল্লি সফর এবং বিশ্বনেতাদের সঙ্গে আলাপচারিতা ও পার্শ্ববৈঠক নিয়ে দেশের রাজনীতিতে নানা আলোচনা-পর্যালোচনা হচ্ছে। নয়াদিল্লি থেকে কী বার্তা নিয়ে এসেছেন শেখ হাসিনা? এমন প্রশ্নও জেগেছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা দলটির সভাপতি শেখ হাসিনার এ সফরকে বড় অর্জন হিসেবে দেখছেন। কয়েক মাস পরই জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেক্ষেত্রে এ সফর খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও অনেকেই।

গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে। সে সময় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছিলেন, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে যারা বাধা সৃষ্টি করবে তাদের আমেরিকার ভিসা দেওয়া হবে না। এর পর থেকে এ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের এক ধরনের টানাপড়েনের খবর সামনে আসে। ভিসানীতি নিয়ে নানারকম মন্তব্য করতে দেখা যায় ক্ষমতাসীন দলের সিনিয়র নেতাদের।

দিল্লি সফরে জো বাইডেনের সঙ্গে মোদির উপস্থিতিতে শেখ হাসিনার আলাপ, শেখ হাসিনার সঙ্গে জো বাইডেনের সেলফি তোলা- ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কের আকাশে যে মেঘের ঘনঘটা দেখা গিয়েছিল, তা কেটে যাওয়ার বার্তা বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য করছেন কেউ কেউ। ক্ষমতাসীন দলের কোনো কোনো নেতার মতে- বাইডেন সরকারের সঙ্গে শেখ হাসিনা সরকারের সম্পর্কে উষ্ণতার আভাস পাওয়া গেছে বাইডেনের হাস্যোজ্জ্বল সেলফিতে। এর ভিন্ন মতও রয়েছে। এ নিয়ে সরকার সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে রীতিমতো প্রচারযুদ্ধ চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

জি-২০ সম্মেলন চলাকালে নরেন্দ্র মোদি ছাড়াও আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো অ্যাঞ্জেল ফার্নান্দেজ, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়োল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে পার্শ্ব  বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। নরেন্দ্র মোদি বিশেষভাবে মূল্যায়িত করেছেন শেখ হাসিনাকে। অন্যদিকে অনানুষ্ঠানিক হলেও জো বাইডেনের সঙ্গে আলাপচারিতা, একই টেবিলে ডিনারে যোগ দেওয়া ও বাইডেনের সেলফি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতাপূর্ণ ছবিও নানা প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। সব মিলিয়ে প্রশ্ন জেগেছে, প্রধানমন্ত্রীর এই দিল্লি সফরে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার কোনো বার্তা পেয়েছে কি? যদি পেয়ে থাকে, তবে কী সেই বার্তা? আগামী জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে ভিনদেশিদের যে ‘চাপ’ দেখা যাচ্ছিল, সে চাপ কি তবে কমে গেছে? নাকি যায়নি? এমন সব প্রশ্নও এসেছে।

বিশিষ্টজনরা বলছেন, জি-২০ সম্মেলনে এক পৃথিবী এক পরিবার শীর্ষক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশ নেওয়া নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। এ আলোচনার মঞ্চ বাংলাদেশসহ পৃথিবীতে বিরাজমান নানাবিধ অসঙ্গতিকে মোকাবিলা করতে কিছুটা হলেও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

বিশিষ্টজনদের ভাষ্য, ভারতের আমন্ত্রণে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে বলিষ্ঠ কণ্ঠ হিসেবে বাংলাদেশ তার অবস্থান তুলে ধরেছে। বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানে বিশ্বের সংহতি শক্তিশালী করার ওপর জোর দিয়েছেন শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য উদ্যোগেরও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বিভিন্ন বৈশ্বিক জটিলতার কারণে নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে ভঙ্গুর দেশগুলো। এ সমস্যা সমাধানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতিগুলোর প্রতি শেখ হাসিনা আহ্বান এজেন্ডা ২০৩০ বাস্তবায়ন, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে মসৃণ ও টেকসই উত্তরণ, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ এবং নারীর সমান অধিকার। এছাড়াও পৃথক পৃথক বৈঠকে তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়িক ও আর্থ-সামাজিক সম্পর্কের দুয়ার খোলারও আভাস পেয়েছে বাংলাদেশ।

জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশ কী বার্তা পেল- জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক আমাদের সময়কে বলেন, ‘সামিটের সফলতা হলো বিভিন্ন দেশের নেতা বা প্রতিনিধিরা এক পৃথিবী এবং এক পরিবার এক ভবিষ্যৎ এই স্লোগানটি করেছে জি টুয়েন্টি। এটা মুখে বলা নয় বাস্তবায়ন করার জন্য আলোচনা জরুরি। এখানে সে বাস্তবতা উঠে এসেছে। এছাড়া স্বল্প সময়ের এই দিল্লি সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীসহ বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। দিল্লি যাওয়ার প্রাক্কালে তিনি রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সব মিলে আমার কাছে মনে হয়েছে, শেখ হাসিনার প্রতি বিশ্বনেতাদের যে অগাধ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে, এতে তারই প্রতিফলন হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব নেতাদের বলেছেন, এবারের নির্বাচন আমরা সুষ্ঠুভাবে করব, অংশগ্রহণমূলক করব। আমার মনে হয় এই বক্তব্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, চীন, ভারত সবার একটা আস্থা ও বিশ্বাস জন্মেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে তারা আন্তরিকভাবে নিয়েছেন এবং তার বক্তব্যকে বিশেষ প্রাধান্য দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীও ওই সম্মেলনের স্লোগানের সঙ্গে সংহতি রেখে বিভাজিত না হয়ে এক পৃথিবীর এক পরিবারের হতে সবার প্রতি আহ্বান জানান। একই সাথে রোহিঙ্গা ইস্যুতেও তিনি কথা বলেছেন।

সব মিলিয়ে আমার মনে হয়েছে, জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশের উপস্থিত থাকা যেমন প্রয়োজন ছিল, তেমনই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, আলাপচারিতা, বিশ্বনেতাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ফুটে ওঠেছে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বারবারই বলছিলেন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বে আজ আবির্ভূত হয়েছে। সেটিই আবার প্রমাণিত হয়েছে।

জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশের অর্জন বা সফলতা কী এ বিষয়ে জানতে চাইলে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান আমাদের সময়কে বলেন, বাংলাদেশ যে দেশ হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগদানের মাধ্যমে এ বার্তাই উঠে এসেছে ও স্বীকৃত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিশেষভাবে আমি যদি বলি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সেলফি তোলাও তাৎপর্যপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রীর কন্যার সঙ্গেও কথা বলেছেন বাইডেন। আর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী যেভাবে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে, এটা সারাবিশ্বের জন্য একটা শুভ বার্তা।

নয়াদিল্লি সফরে বাংলাদেশের ওপর পশ্চিমা বিশ্বের চাপ কমেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমত আপনার এই প্রশ্নের সঙ্গে আমি একমত না। আমাদের ওপর কারও কোনো চাপ ছিল না। এ কথাটা আমি বারবার বলেছি। এটা বিএনপির বানানো কথা আমাদের ওপর চাপিয়েছে। অবশ্যই বাংলাদেশ বিশ্বের একটা গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র। বাংলাদেশে বিশ্বের অনেক দেশের বিনিয়োগ আছে। স্বার্থ আছে। সুতরাং তারা চায়, বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন যেন ভালো হয়। এটা আমরাও সব সময় চেয়েছি। কারণ আমরা গণতন্ত্রের পক্ষে আছি। সব সময় বলেছি, আগামী নির্বাচন যেন ভালো হয়, সে জন্য সবাই মিলেমিশে কাজ করব। একমাত্র বাংলাদেশ একটা রাজনৈতিক দল বা জোট আছে সেটা বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে যারা চায় নির্বাচনকে কলুষিত করতে। অতীতেও কলুষিত করেছে, ভবিষ্যতেও করতে চায়। এ জন্য তারা বলেছে, আমরা নির্বাচন করব না, করতেও দেব না। এটা অগণতান্ত্রিক কথা। আমাদের ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রসহ কেউ এসে বলেনি যে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে, নির্বাচন কমিশন ভেঙে দিতে হবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার করতে হবে। সবাই চায় সবাই সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। এটা আমরা চাই।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অত্যন্ত উষ্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ চ্যাট ঢাকা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে গভীর সুসম্পর্ককে চিহ্নিত করেছে।

এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন: ‘এটি (অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে নৈশভোজসহ দুটি পৃথক অনুষ্ঠানে বাইডেন, শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা এবং সায়মা ওয়াজেদের মধ্যে আলোচনা) প্রমাণ যে ওয়াশিংটনের সঙ্গে আমাদের গভীর ও দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে। আমরা ভবিষ্যতে এটি আরও শক্তিশালী করব।’

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও সুসংহত করতে খুবই আগ্রহী এবং এ জন্য তারা তাদের লোক পাঠাচ্ছে এবং আলোচনা করছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তারা (আমেরিকান সরকার) আমাদের ওপর কোনো চাপ দিচ্ছে না বরং মিডিয়া অতিরঞ্জিত করছে।’


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]