সাম্প্রতিক সময়ে বৈধ চ্যানেলে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ অনেক কমে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রবাসী আয়ের উল্লেখযোগ্যই আসছে হুন্ডির মাধ্যমে। এ ছাড়া ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের সুবিধা কাজে লাগিয়ে সম্প্রতি দেশে অবৈধ লেনদেনও বেড়েছে। এর মাধ্যমে দেশের অর্থ পাচারের বেশ কয়েকটি ঘটনাও ঘটেছে। এসব বিষয় নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সম্প্রতি এ নিয়ে দেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সঙ্গে করণীয় বিষয়ে শলাপরামর্শ হয়েছে গভর্নর কার্যালয়ের। এসব অনিয়ম প্রতিরোধে দেশের কার্যক্রম পরিচালনাকারী সব এমএফএসকে আরও সতর্ক ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বিএফআইইউকে তাগিদ দিয়েছেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই তাগিদ ও পরামর্শে আজ বৃহস্পতিবার বিকাশ, রকেটসহ মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর (এমএফএস) সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসতে যাচ্ছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। সংস্থা প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে হুন্ডি, অনলাইন গ্যাম্বলিং, গেমিং, বেটিং, ফরেক্স এবং ক্রিপ্টো ট্রেডিং প্রতিরোধে এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো যেন আরও সজাগ দৃষ্টি রাখে, সেই নির্দেশনা দেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএফআইইউর সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, অতীতে দেখা গেছে যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উপায় বাতলে দেওয়ার পরই এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মনিটরিং জোরদার করেছে। কিন্তু এখন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর নির্ভর না করে তারা যেন নিজেরাই তৎপর হয়ে এগুলো প্রতিরোধ করে, সেই নির্দেশনা দেওয়া হবে বৈঠকে। এ ছাড়া বৈঠকে এমএফএসগুলোকে আরও বেশি সতর্ক হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হবে। পাশাপাশি এ ধরনের অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধে তারা যেন নিজস্ব উদ্যোগে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং কোনো নির্দেশনার অপক্ষোয় না থাকে, সেই বার্তা দেওয়া হবে।
জানা গেছে, ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের সুবিধা কাজে লাগিয়ে সম্প্রতি দেশে অবৈধ লেনদেন বেড়েছে। এই ধরনের লেনদেন যে কোনো মূল্যে প্রতিরোধ করতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে সরকারের ছয়টি আর্থিক ও গোয়েন্দা সংস্থা একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকারও পুনর্ব্যক্ত করেছে।
এ ছাড়া অতি লোভে পড়ে কেউ যেন ক্রিপ্টোকারেন্সিসহ অবৈধ লেনদেনে জড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য তাদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সতর্ক বার্তায় বলা হয়েছে, জনগণের প্রতি অনুরোধ থাকবে তারা যেন আরও বেশি সচেতন হয়। কারও সঙ্গে আর্থিক লেনদেন করার সময় অবশ্যই তাদের বৈধতা দেখে লেনদেন করতে হবে। কেননা অতিলোভ পড়লে তখন বিচার-বিবেচনাবোধ থাকে না। সেজন্য বৈধ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই লেনদেন করতে হবে। এর পাশাপাশি প্রাপ্তি স্বীকার বা পাঠানোর বৈধ কাগজপত্র অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে। যাতে প্রয়োজেনে পরে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এ ছাড়া বেশ কয়েক দফায় সতর্কতামূলক সার্কুলারও জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে বিএফআইইউ এ ধরনের বেশকিছু অবৈধ লেনদেন চিহ্নিত করেছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে তা প্রতিরোধে কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছে।
বিএফআইইউ প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ওই সভায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ পুলিশের সিআইডি, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রান্সন্যাশনাল অ্যান্ড সাইবার ক্রাইম বিভাগ এবং গোয়েন্দা ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। হুন্ডি, অনলাইন গ্যাম্বলিং, গেমিং, বেটিং, ফরেক্স এবং ক্রিপ্টো ট্রেডিং প্রতিরোধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির অংশ হিসেবেই তখন বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বলা হয়, বর্তমানে অনলাইন গ্যাম্বলিং, গেমিং, বেটিং, ফরেক্স এবং ক্রিপ্টো ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে সংঘটিত অবৈধ লেনদেন মাত্রাতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমকে কাজে লাগিয়ে এসব অপরাধ হুন্ডি প্রক্রিয়াকে সহজ ও গতিশীল করছে। এর ফলে মুদ্রা পাচার বেড়ে যাচ্ছে এবং দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশ প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা হারাচ্ছে। ওই সভায়ও বিএফআইইউ প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাস সব সংস্থাকে এ ধরনের অপতৎপরতা রোধে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।