ডলার কারসাজির তদন্তে মাঠে কেন্দ্রীয় ব্যাংক


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 07-09-2023

ডলার কারসাজির তদন্তে মাঠে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

- সব ব্যাংকে ডলারের দর ঊর্ধ্বমুখী
-বিক্রেতা ও ক্রেতাশূন্য খোলাবাজার

অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজার। খোলাবাজার অনেকটা বিক্রেতা ও ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়েছে। আর সব ব্যাংকে ডলারের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী। মাত্র তিনটি ব্যাংক ছাড়া প্রায় সব ব্যাংকেরই নির্ধারিত দরের সর্বোচ্চ সীমায় অবস্থান করছে ডলারের দাম। এ দিকে নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দামে ডলার কেনা বেচার দায়ে ১৩টি ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা তলবের পর জড়িতদের শনাক্ত করতে অধিকতর তদন্তে নেমেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারা ১৩ ব্যাংকের বাইরে অন্য ব্যাংকগুলোতে ডলার লেনদেনের তথ্য যাচাই-বাছাই শুরু করে দিয়েছে। কোনো ব্যাংকের বিরুদ্ধে নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দামে ডলার লেনদেনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে বৈদেশিক মুদ্রা আইন অনুযায়ী ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ দিকে, ডলার কারসাজি ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এক ব্যাংকের রফতানি বিলের নিট অংশ অন্য ব্যাংকের আমদানি দায় পরিশোধের বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। এক নির্দেশনার মাধ্যমে বলা হয়েছে, এক ব্যাংকের মাধ্যমে নিট রফতানি বিলের অর্থ অন্য ব্যাংকের মাধ্যমে আমদানি দায় পরিশোধ করা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ডলার বাজার অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে। ডলারের দাম বাড়তে থাকে। ব্যাংকগুলো নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে ডলার বিক্রি করতে থাকে। একই সঙ্গে মানি চেঞ্জার্স ও খোলাবাজারে ডলারের দামে পাগলা ঘোড়ার গতি পায়। খোলাবাজারে ডলারের দাম ১১৮ টাকা উঠে যায়। আর ব্যাংকগুলোর নিজেদের সংগঠনগুলো সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতি ডলারের দাম ১১০ টাকা বেঁধে দিলেও বিক্রি হয় ১১৭ টাকা পর্যন্ত। এমনই অবস্থায় ব্যাংকগুলোতে তদন্ত শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে মানি চেঞ্জার্স ও কার্ব মার্কেটে অভিযান শুরু করে বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) ও গোয়েন্দা সংস্থা। তারা তদন্ত করে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি ডলার বিক্রির প্রমাণ পায়।

এমনই অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ১৩ ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। আর ৮টি মানি চেঞ্জার্স সিলগালা করে দেয়া হয়। ৭টির লাইসেন্স স্থগিত করে দেয়া হয়। ১০টির কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। এসব পদক্ষেপের কারণে ক্রেতা ও বিক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ে খোলাবাজার। গতকাল একাধিক মানি চেঞ্জার্স ঘুরে দেখা গেছে, কেউ ডলার বিক্রি করছে না। মাঝে মাঝে ক্রেতা আসলেও ডলার নেই বলে নিচ থেকে বলে দেয়া হচ্ছে।

একটি মানি চেঞ্জার্সের স্বাত্বাধিকারী গতকাল এ বিষয়ে নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ১১০ টাকা ৭৫ পয়সায় ডলার লেনদেন করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু ১১০ টাকা ৭৫ পয়সায় তারা কোনো ডলার কিনতে পারেননি। তাই বিক্রিও করতে পারেননি। আবার অনেকেই আতঙ্কে প্রতিষ্ঠানে আসছেন না। তবে, অপর একজন জানান, তার কাছে আগে কিছু ডলার ছিল তাই ১১৭ টাকা ৫০ পয়সা দরে বিক্রি করেছেন। তবে, নির্ধারিত দরে নতুন করে কিনতেও পারেননি, তাই বিক্রি করতেও পারেননি।

এ দিকে, প্রতিটি ব্যাংকের ডলারের দাম ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারীদের সংগঠন বাফেদা ও শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি যৌথ সিদ্ধান্ত ছিল সর্বোচ্চ ডলার লেনদেন করবে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। সাধারণতও এর নিচেই লেনদেন করতো কিছু ব্যাংক ছাড়া। সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করতে পারেনি কেউ। কিন্তু গত দুই দিনের মধ্যে মাত্র ৩টি ব্যাংক ছাড়া সবগুলো ব্যাংকেরই নতুন করে বেঁধে দেয়া সর্বোচ্চ সীমা ১১০ টাকায় বিক্রি করেছে। এ বিষয়ে একটি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তাদের সামনে কোনো কিছুই করার নেই। গ্রাহকদের ঠিক রাখতে বেশি দরে রেমিট্যান্সের ডলার কিনছেন এবং বেশি দামে তাই ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তদারকি বাড়িয়ে দেয়ায় ব্যাংকগুলো দেখেশুনে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ডলার লেনদেন করছে।

এ দিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রফতানি আয়ের ডলার লেনদেনের বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এ বিষয়ে গত সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, রফতানি আয়ের নিট ডলার দিয়ে অন্য ব্যাংকের আমদানি দায় পরিশোধ করা যাবে না। এর কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগে গ্রাহক যে ব্যাংকের মাধ্যমে রফতানি করতো, রফতানি আয় দেশে আসার পর ব্যাক টু ব্যাক এলসির দায় মেটানো হতো। যেটুকু অবশিষ্ট থাকতো তা অন্য ব্যাংকের আমদানিকারকের কাছে বেশি দামে বিক্রি করে দিতো। তবে, বলা হতো অন্য ব্যাংকের জরুরি আমদানি বিল পরিশোধ করতে ডলার স্থানান্তর করতে হবে। এভাবে ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছিল। বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল করার জন্যই এ সুযোগ রহিত করা হয়েছে। সোমবার এক সার্কুলারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ব্যাক টু ব্যাক এলসির দায় পরিশোধ করার পর রফতানি আয়ের অবশিষ্টাংশ অন্য ব্যাংকের আমদানি বিল পরিশোধের জন্য স্থানান্তর করা যাবে না।

কমপক্ষে ৩০ দিন এ অর্থ রফতানিকারক ব্যাংকে রাখতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট মনে করছেন, এর ফলে ডলারের দাম স্থিতিশীল হতে সহায়ক হবে।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]