পাইলট প্রকল্পের আওতায় শিগগির কিছু রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার। প্রত্যাবাসনের প্রথম ধাপে দেশটি নিবন্ধিত তিন হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে চায়। গতকাল সোমবার মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোয় উভয় দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক পর্যায়ে বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৈঠকে থাকা এক কূটনীতিক বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে ভালো আলোচনা হয়েছে। তারা যত শিগগির সম্ভব প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায়। সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রথম ধাপে নিবন্ধিত তিন হাজার রোহিঙ্গা দিয়ে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে। এটা যত দ্রুত সম্ভব হতে পারে। তবে ঠিক কবে এই প্রত্যাবাসন শুরু হবে, তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। দ্বিতীয় ধাপে পাঁচ হাজার এবং তার পরের ধাপে সাত হাজার রোহিঙ্গাকে তারা ফেরত নিতে পারে। যদিও এ সংখ্যক রোহিঙ্গাকেই যে তারা নির্দিষ্ট করে ফেরত নেবে, তা নিশ্চিত করে বলা ঠিক হবে না।
প্রত্যাবাসন শুরুর আগে রোহিঙ্গাদের মনোবল বাড়াতে হবে উল্লেখ করে এ কূটনীতিক বলেন, যাদের প্রত্যাবাসন করা হবে, আগে তাদের মনোবল বাড়াতে হবে। তারপর তাদের মধ্যে যারা স্বেচ্ছায় যেতে চায় তাদের পাঠানো হবে। আমরা টেকসই প্রত্যাবাসন করতে চাই। যেন প্রথম ধাপের পর পরবর্তী ধাপেও রোহিঙ্গারা যেতে থাকে। মিয়ানমার থেকে একটি প্রতিনিধি দল কক্সবাজারে এসে রোহিঙ্গাদের মনোবল বাড়ানোর বিষয়ে কাজ করার কথা রয়েছে।
মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের কক্সবাজার সফরের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে ওই কূটনীতিক বলেন, তারা আসবে। আমরা চাই, তারা এসে রোহিঙ্গাদের আগ্রহী করে তুলুক; তাদের নিশ্চয়তা দিক। প্রত্যাবাসনের আগে আমাদের মূল লক্ষ্য রোহিঙ্গাদের মনোবল বৃদ্ধি করা।
জানা গেছে, নেপিদোয় বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার অনু বিভাগের মহাপরিচালকের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। রোহিঙ্গাদের আস্থা ফেরানো ও নিরাপদ বোধ করাতে নেপিদো কী কী পদক্ষেপ নেবে, বৈঠকে সে বিষয়ে জোর আলোচনা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মূল প্রশ্ন, তারা ফিরে যেতে নিরাপদ বোধ করছে কিনা। রোহিঙ্গারা যদি নিরাপদ বোধ না করে, তাহলে জোর করে ফেরত পাঠাবে না বাংলাদেশ। কারণ স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও সম্মানের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন চায় ঢাকা। প্রত্যাবাসনে রাজি হওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য বেশ কিছু ঘর তৈরি করেছে মিয়ানমার সরকার। তবে সেগুলো দেখে এসে প্রত্যাবাসনে অনাগ্রহের কথা জানিয়েছেন রোহিঙ্গা নেতারা। এখন তাদের আস্থা অর্জনে নেপিদো থেকে আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কথা। এর মধ্যে একটি হলো– প্রত্যাবাসনের পর রোহিঙ্গাদের এককালীন অর্থ দেওয়া হবে এবং ইচ্ছা করলে তারা নিজ গ্রামেও যেতে পারবে। মিয়ানমারের এই উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ। তবে শুরুতেই রোহিঙ্গারা তাদের গ্রামে যেতে পারবে না। মিয়ানমার সরকারের দেওয়া ঘরবাড়িতে তাদের তিন মাস থাকতে হবে। এর পর নিজ গ্রামে স্থানান্তর করা হবে। আর কেউ যদি সরকারি ঘরবাড়িতে থেকে যেতে চায়, সে ব্যবস্থাও করবে মিয়ানমার সরকার।