বিদ্রোহের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রেখে ‘আনসার ব্যাটালিয়ন আইন, ২০২৩’-এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গতকাল অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনের খসড়াটি অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘বিদ্রোহ সংগঠন বা বিদ্রোহ সংগঠনের প্ররোচনায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রাখা হয়েছে খসড়া আইনে। আগের আইনে বিদ্রোহের বিষয়টি ছিল না।’
এর আগে ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বরে আনসার বিদ্রোহের ঘটনা ঘটেছিল, সেনা ও বিজিবির (তৎকালীন বিডিআর) অভিযানের মধ্য দিয়ে যার সমাপ্তি ঘটে। সে সময় এ ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হয়। গ্রেফতার হয়েছিল ২ হাজার ৪৯৬ আনসার। পরে অবশ্য তারা বিভিন্ন সময় খালাস পান। অনেকে আবার চাকরিতে পুনর্বহালও হন।
নতুন আইনে অপরাধ বিচারের জন্য সংক্ষিপ্ত আনসার আদালত এবং বিশেষ ছাড় আদালত নামে দুটি আদালতও গঠন করা হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন। ২০২২ সালের ২৮ মার্চ আইনটি মন্ত্রিসভা নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগের আইনে বড় একটা গ্যাপ ছিল। কিছু ক্ষেত্রে শাস্তির বিধান ছিল না। বিদ্রোহ কিংবা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির বিষয়গুলো সুনির্দিষ্ট করা ছিল না। সেগুলোকে সুনির্দিষ্ট করে আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।’
মাহবুব হোসেন বলেন, ‘নতুন আইনে যেসব বিষয়কে অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে—সরকারি বা ব্যাটালিয়ন সদস্যের সম্পত্তি চুরি করা, যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে প্যারেডে অনুপস্থিত থাকা, কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা, দায়িত্ব পালনে অনীহা প্রদর্শন করা। এক্ষেত্রে চাকরি থেকে বরখাস্ত, চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অপসারণের শাস্তির কথা বলা হয়েছে।’
খসড়া আইনে প্রতিষ্ঠানের ভেতরে দুটি আদালত রাখার বিধান রাখা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘একটি হবে সংক্ষিপ্ত আনসার আদালত, আরেকটি হবে বিশেষ আনসার আদালত। সংক্ষিপ্ত আদালত একজন অতিরিক্ত মহাপরিচালকের নেতৃত্ব হবে। গুরুতর অপরাধের জন্য হবে বিশেষ আদালত। এ আদালতের প্রধান হবেন মহাপরিচালক। এ দুটি আদালতে কী কী অপরাধের বিচার হবে সে বর্ণনা খসড়া আইনে দেয়া হয়েছে। এছাড়া শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড রয়েছে। আপিল করারও ব্যবস্থা থাকবে। শাস্তি মওকুফের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির কাছেও তারা আবেদন করতে পারবেন।’
আইনের খসড়ার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ‘বিদ্রোহ সংগঠন ও এতে প্ররোচনা দেয়া, বিদ্রোহের কারণ সৃষ্টি বা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বা এতে যোগদান করা, বিদ্রোহস্থলে উপস্থিত হয়ে তা দমনের জন্য যথেষ্ট প্রচেষ্টা গ্রহণ না করা, বিদ্রোহ সম্পর্কে জেনে বা ষড়যন্ত্রের কথা যুক্তিসংগতভাবে জানা সত্ত্বেও সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে না জানানো, কোনো ব্যাটালিয়ন সদস্যকে সরকারের প্রতি তার কর্তব্য ও আনুগত্য থেকে বিরত রাখা, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিদ্রোহের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাটালিয়ন সদস্য বা আনসার ব্যাটালিয়ন বহির্ভূত কোনো ব্যক্তিকে অস্ত্র, গোলাবারুদ বা অন্য কোনো উপায়ে সাহায্য করা, বিদ্রোহের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্য যেকোনো অপরাধ সংঘটন করা—এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড বা অন্যান্য ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।’
আগের ১৯৯৫ সালের আইনে বিদ্রোহসংক্রান্ত বিষয়গুলো রাখা ছিল না বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।