কেয়ামতের একটি আলামত হলো দাজ্জালের আবির্ভাব। নবিজির (সা.) ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী কেয়ামতের আগে দাজ্জাল নামের এক অশুভ চরিত্রের আগমন ঘটবে। সে মানুষকে বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা করবে। তার ফেতনা ছড়িয়ে পড়বে মক্কা ও মদিনা ছাড়া সারা দুনিয়ায়। নবিজি (সা.) বলেন,
ما كانت ولا تكون فتنة حتى تقوم الساعة أعظم من فتنة الدجال، وما من نبي إلا وحذر قومه الدجال
দাজ্জালের ফিতনার চেয়ে বড় ফিতনা পৃথিবীতে কখনও আসেনি, কেয়ামত পর্যন্ত আসবেও না। প্রত্যেক নবিই তার জাতিকে দাজ্জাল থেকে সতর্ক করেছেন। (মুসতাদরাকে হাকেম)
দাজ্জাল দেখতে কেমন হবে এবং তাকে কীভাবে চেনা যাবে এ ব্যাপারেও বেশ কিছু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। সহিহ বুখারিতে সংকলিত একটি বর্ণনায় আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, একদিন নবিজি (সা.) মাসিহ দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বললেন, আল্লাহ কানা বা এক চোখ বিশিষ্ট নন। মাসিহ দাজ্জালের ডান চোখ হবে অন্ধ। তার চোখ দেখতে হবে ফুলে যাওয়া আঙুরের মতো। (সহিহ বুখারি: ৩৪৩৯)
দাজ্জালের ফিতনা থেকে বেঁচে থাকার একটি আমল বর্ণিত হয়েছে সহিহ মুসলিমে। নবিজি (সা.) বলেছেন,
من حفظ عشر آيات من أول سورة الكهف، عصم من فتنة الدجال
যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে রক্ষা পাবে। (সহিহ মুসলিম: ৮০৯)সুরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াত হলো,
১. اَلۡحَمۡدُ لِلّٰهِ الَّذِیۡۤ اَنۡزَلَ عَلٰی عَبۡدِهِ الۡکِتٰبَ وَ لَمۡ یَجۡعَلۡ لَّهٗ عِوَجًا
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি তাঁর বান্দার ওপর কিতাব নাজিল করেছেন এবং তাতে রাখেননি কোন বক্রতা ।
২. قَیِّمًا لِّیُنۡذِرَ بَاۡسًا شَدِیۡدًا مِّنۡ لَّدُنۡهُ وَ یُبَشِّرَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ الَّذِیۡنَ یَعۡمَلُوۡنَ الصّٰلِحٰتِ اَنَّ لَهُمۡ اَجۡرًا حَسَنًا
সরলরূপে, যাতে সে তাঁর পক্ষ থেকে কঠিন আজাব সম্পর্কে সতর্ক করে এবং সুসংবাদ দেয়, সেসব মুমিনকে, যারা সৎকর্ম করে, নিশ্চয় তাদের জন্য রয়েছে উত্তম প্রতিদান।
৩. مَّاکِثِیۡنَ فِیۡهِ اَبَدًا
তারা তাতে অনন্তকাল অবস্থান করবে।
৪. وَّ یُنۡذِرَ الَّذِیۡنَ قَالُوا اتَّخَذَ اللّٰهُ وَلَدًا
আর যেন সতর্ক করে তাদেরকে, যারা বলে, আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন’।
৫. مَا لَهُمۡ بِهٖ مِنۡ عِلۡمٍ وَّ لَا لِاٰبَآئِهِمۡ کَبُرَتۡ کَلِمَۃً تَخۡرُجُ مِنۡ اَفۡوَاهِهِمۡ اِنۡ یَّقُوۡلُوۡنَ اِلَّا کَذِبًا
এ ব্যাপারে তাদের কোন জ্ঞান নেই এবং তাদের পিতৃপুরুষদেরও না। বড় মারাত্মক কথা, যা তাদের মুখ থেকে বের হয়। মিথ্যা ছাড়া তারা কিছুই বলে না!
৬. فَلَعَلَّکَ بَاخِعٌ نَّفۡسَکَ عَلٰۤی اٰثَارِهِمۡ اِنۡ لَّمۡ یُؤۡمِنُوۡا بِهٰذَا الۡحَدِیۡثِ اَسَفًا
হয়তো তুমি তাদের পেছনে পেছনে ঘুরে দুঃখে নিজেকে শেষ করে দেবে, যদি তারা এই কথার প্রতি ঈমান না আনে।
৭. اِنَّا جَعَلۡنَا مَا عَلَی الۡاَرۡضِ زِیۡنَۃً لَّهَا لِنَبۡلُوَهُمۡ اَیُّهُمۡ اَحۡسَنُ عَمَلًا
নিশ্চয় পৃথিবীতে যা রয়েছে, তা আমি শোভা বানিয়েছি তার জন্য, যাতে তাদেরকে পরীক্ষা করতে পারি যে, কর্মে তাদের মধ্যে কে উত্তম।
৮. وَ اِنَّا لَجٰعِلُوۡنَ مَا عَلَیۡهَا صَعِیۡدًا جُرُزًا
আর নিশ্চয় তার ওপর যা রয়েছে তাকে আমি উদ্ভিদহীন শুষ্ক মাটিতে পরিণত করব।
৯. اَمۡ حَسِبۡتَ اَنَّ اَصۡحٰبَ الۡکَهۡفِ وَ الرَّقِیۡمِ ۙ کَانُوۡا مِنۡ اٰیٰتِنَا عَجَبًا
তুমি কি মনে করেছ যে, গুহা ও রাকিমের (রাকিম একটি পাহাড়ের নাম অথবা আসহাবে কাহাফের যুবকরা যে গ্রামের বাসিন্দা ছিল ওই গ্রামের নাম) অধিবাসীরা ছিল আমার আয়াতসমূহের মধ্যে বিস্ময়কর?
১০. اِذۡ اَوَی الۡفِتۡیَۃُ اِلَی الۡکَهۡفِ فَقَالُوۡا رَبَّنَاۤ اٰتِنَا مِنۡ لَّدُنۡکَ رَحۡمَۃً وَّ هَیِّیٴۡ لَنَا مِنۡ اَمۡرِنَا رَشَدًا
যখন যুবকরা গুহায় আশ্রয় নিল এবং বলল, ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে আপনার পক্ষ থেকে রহমত দিন এবং আমাদের জন্য আমাদের কাজকর্ম সঠিকভাবে চলার ব্যবস্থা করুন।
সুরা কাহাফের এই দশটি আয়াত যদি আমরা মুখস্থ করে নেই, তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ আমাদের দাজ্জালের ভয়াবহ ফিতনা থেকে রক্ষা করবেন।