পুতিনের নাকের ডগায় সক্রিয় বিদ্রোহীরা!


আন্তর্জাতিক ডেস্ক : , আপডেট করা হয়েছে : 04-09-2023

পুতিনের নাকের ডগায় সক্রিয় বিদ্রোহীরা!

বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্রপ্রধান মনে করা হয় তাঁকে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে যে ভাবে তিনি আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দুনিয়ার নানাবিধ নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে নিজের সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন, তাতে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তাঁর অবস্থান শক্তপোক্ত হয়েছে বলে মনে করেন অনেকে।

কথা হচ্ছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে নিয়ে। কিন্তু সেই পুতিনই নাকি খুব একটা স্বস্তিতে নেই। গোটা বিশ্ব তাঁকে যতই শক্তিশালী মনে করে থাকুক না কেন, নিজের দেশেই নাকি ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে রুশ প্রেসিডেন্টের অবস্থান।

কয়েক মাস আগেই জানা গিয়েছিল, রুশ সেনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে সে দেশেরই ভাড়াটে সৈন্যদল ওয়্যাগনার বাহিনী। ইউক্রেন যুদ্ধে লড়তে যাওয়া এই সৈন্যদলের প্রধান ছিলেন একদা পুতিন-ঘনিষ্ঠ ইয়েভজেনি প্রিগোঝিন।

রাশিয়ার বেশ কয়েকটি শহরের দখল নেওয়ার পর মস্কোর উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল প্রিগোঝিনের বাহিনী। রুশ প্রশাসনের মূল ঘাঁটি ক্রেমলিনেও এই বাহিনী আঘাত হানবে কি না, তা নিয়ে যখন জল্পনা ছড়ায়, সেই সময়ই প্রত্যাঘাত করে রুশ বাহিনী। রণে ভঙ্গ দিতে হয় বিদ্রোহীদের। 

কিছু দিন আগেই একটি বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান প্রিগোঝিন। বিদ্রোহীদের ক্ষমা করে দেওয়ার কথা বলা হলেও, পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি, ওই দুর্ঘটনার নেপথ্যে পুতিন বাহিনীর হাত রয়েছে।

তবে ওই বিদ্রোহ সামাল দেওয়া গেল‌েও মস্কোর দোরগোড়ায় নাকি কড়া নাড়ছে আরও একটি বিদ্রোহ। এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিতে পারেন দেশের অভিজাত সম্প্রদায়।

পুতিনের রাজনীতির বিরুদ্ধে বরাবরই সরব থেকেছেন সে দেশের প্রাক্তন রাজনীতিক গেন্নাডি গাদকভ। দি টাইমস পত্রিকাকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি পুতিনের ক্রমশক্তিক্ষয়ের ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, “উনি (পুতিন) আগের মতো আর ক্রেমলিন (রাশিয়ার ক্ষমতার ভরকেন্দ্র)কে শাসন করতে পারছেন না।”

ইউক্রেন যুদ্ধে পুতিন একাধিক ‘বোকা বোকা ভুল’ করেছেন বলে দাবি করে গাদকভ বলেন, “সেনা আধিকারিক থেকে দেশের গোয়েন্দা সংস্থার কর্মী— সকলেই বুঝতে পারছেন পুতিন দেশটাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন।”

তীব্র পুতিন বিরোধিতার জন্যই রাশিয়ার রাজনীতিতে গাদকভ একটি পরিচিত নাম। ২০১২ সালে রুশ পার্লামেন্ট থেকে বার করে দেওয়া গাদকভকে। দেশ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি।

বুলগেরিয়ায় গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন গাদকভ। সেখান থেকেই পুতিন এবং রুশ প্রশাসনের সমালোচনা জারি রেখেছেন তিনি।

তবে আপাত ভাবে পুতিনের দিকেই যে জনসমর্থনের ঢল, তা বোঝাতে চেষ্টার কসুর রাখছে রুশ প্রশাসন। সে কথা মাথায় রেখেই গাদকভ জানান, ক্রমশ এই বিদ্রোহের দিকটি প্রকাশ্যে আসতে শুরু করবে।

গত এক বছর রুশ প্রশাসনের অন্দরের ছবিটা ক্রমশ বদলে যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন গাদকভ। তাঁর কথায়, যে অধস্তনরা পুতিনকে জোহুজুর করত, তাঁরাও আর পুতিনের নেতৃত্ব মানতে চাইছেন না। তাঁর সঙ্গে এই বিষয়ে একাধিক রুশ আমলা, রাজনীতিকের কথা হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।

গত এক বছর রুশ প্রশাসনের অন্দরের ছবিটা ক্রমশ বদলে যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন গাদকভ। তাঁর কথায়, যে অধস্তনরা পুতিনকে জোহুজুর করত, তাঁরাও আর পুতিনের নেতৃত্ব মানতে চাইছেন না। তাঁর সঙ্গে এই বিষয়ে একাধিক রুশ আমলা, রাজনীতিকের কথা হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।

গাদকভের বক্তব্যের এই সমর্থন মিলেছে রাশিয়ার সমকালীন রাজনীতি নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠনের প্রধান এবং গবেষক টাটিয়ানা স্টানোভায়ার কথাতেও। যে বিদ্রোহের কথা গাদকভ বলেছিলেন, তার কারণ বুঝিয়ে দিয়েছেন গাদকভ।

স্টানোভায়া অবশ্য বলছেন, “প্রকাশ্যে এখনও পর্যন্ত পুতিনের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস কারও নেই।” তবে তলে তলে বিদ্রোহের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।

বিদ্রোহের কারণ ব্যাখ্যা করে স্টানোভায়া জানিয়েছেন, রাশিয়ার অভিজাত সমাজ দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। অভিজাতদের যুযুধান একটি দলকে 

স্টানোভায়ার মতে, অভিজাতদের প্রথম দলটি ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার দিন থেকেই মনে করছে রাশিয়ার আরও ভেবেচিন্তে পা ফেলা উচিত ছিল। যুদ্ধ কিছু দিনের জন্য স্থগিত রাখারও নাকি দাবি তুলেছিল এই অংশটি।

অন্য দিকে, বিপ্লবী অংশটি মনে করছে, যে কোনও মূল্যে লড়াই চালিয়ে যেতেই হবে রাশিয়াকে। নইলে পশ্চিমি দুনিয়ার কাছে মুখ পুড়বে বলে মনে করছেন তাঁরা।

স্টানোভায়ার বক্তব্য, খেরসন এবং খারকিভের অধিকার হারানোর পর অভিজাতদের এই দুই গোষ্ঠীই পুতিনকে ‘দুর্বল’ শাসক বলে মনে করছে। আর এতেই বিড়ম্বনা বেড়েছে পুতিনের।

বর্তমান রুশ রাজনীতিতে অভিজাতদের ভূমিকা অপরিসীম। এই পরিস্থিতিতে অভিজাতদের মন জয় করে নিজের হৃত সম্মান পুতিন ফেরাতে পারবেন, না কি ঘরে বাইরে চাপের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হবেন, তা-ই এখন দেখার।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]