শুধু মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধের টানেই নয়; অর্থনীতির চাকা আরও বেগবান করতেই ঢাকাকে আরও কাছে পেতে চায় রিয়াদ। হজ, ওমরাহ ও সাধারণ পর্যটকের সংখ্যা বাড়াতে বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে পেট্রোডলারের দেশটি। বিগত দশ বছরের ওমরাহ ও হজের কোটা বিবেচনায় তাদের টার্গেট এখন তার দ্বিগুণ করা। চলতি বছরেই তাদের টার্গেট চার থেকে পাঁচ লাখ যাত্রী। আগামী বছর ২০২৪ সালেই তা আরও বাড়িয়ে ৭ লাখে উন্নীত করতে চায় সৌদি আরব। ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ থেকে বছরে ৩০ লাখ পর্যটকের টার্গেট তাদের। সম্প্রতি ঢাকা সফরের সময় এমনই ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন সফরকারীরা। সফর শেষে ফিরে যাবার সময় সফরকারীরা বেশ সুস্পষ্টভাবে বলেছেন- সার্বিক বিবেচনায় পর্যটন খাতে সৌদির জন্য বাংলাদেশ হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ বাজার। তাই বাংলাদেশকে ঘিরে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সৌদি আরব।
হাব জানিয়েছে, ঢাকার প্রতি সৌদির এত আগ্রহ অতীতে কখনই ছিল না। এখন হঠাৎ বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়াতে পর্যটন খাতকে গুরুত্ব দিয়ে ভিসা নীতিতে পরিবর্তন এনেছে তেলসমৃদ্ধ দেশটি। এজন্য তারা বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে পর্যটকরা যেন সহজে ভিসা আবেদন করতে পারে, সেজন্য ইতোমধ্যেই চালু করা হয়েছে ই-ভিসা পদ্ধতি। গত ১ মে থেকে ই-ভিসা বা ইলেক্ট্রনিক ভিসা চালুর পর হঠাৎ বেড়ে গেছে সৌদিমুখী যাত্রীর সংখ্যা। কারণ এখন সৌদিতে যেতে হলে আগের মতো কাগজের ভিসা পাওয়ার দীর্ঘসূত্রতায় পড়তে হচ্ছে না। এমনকি যাদের যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, শেনজেনের ভিসা রয়েছে তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ই-ভিসা দেবে মুসলিমদের পবিত্রতম তীর্থস্থানের দেশটি।
এ বিষয়ে হাব সভাপতি এম শাহাদত হোসেন তসলিম দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশ এখন সৌদিসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্যের কাছেই বেশ আকর্ষণীয়। শুধু যে বিনিয়োগের টানেই সেটা নয়; আমাদের জনশক্তির মধ্যপ্রাচ্যে বেশ কদর রয়েছে। সম্প্রতি সৌদি প্রতিনিধিদল ঢাকা সফরের সময় তাদের অনেকের সঙ্গেই আমার ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় অনেক তথ্য পেয়েছি। হজ, ওমরাহর পাশাপাশি এখন পর্যটকদের আগমন নিরবচ্ছিন্ন করতে বাংলাদেশের সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ বাড়াতেও উদ্যোগ নিয়েছে রিয়াদ। এজন্য গত ২৩ আগস্ট বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বিমান চলাচল সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এ চুক্তির আওতায় দুই দেশের মধ্যে ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানো হবে। এ ছাড়া সৌদির অপর এয়ারলাইন্স ফ্লাই নাসের সিডিউল ফ্লাইট আসছে খুব শীঘ্রই। এতে সৌদি আরবের বিভিন্ন গন্তব্যে সরাসরি যাওয়ার সুযোগ পাবেন বাংলাদেশীরা। আগে সৌদির জেদ্দা, রিয়াদ, দাম্মাম ও মদিনা এই চারটি বিমানবন্দরে বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট পরিচালিত হতো। নতুন চুক্তির ফলে বাংলাদেশের যেকোনো এয়ারলাইন্স যাত্রী নিয়ে সৌদি আরবের যেকোনো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারবে। নতুন সই করা সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, সৌদি আরবে পরিচালিত ফ্লাইটের ফ্রিকোয়েন্সিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে নির্ধারিত ৪৯টি যাত্রী ও কার্গো ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সির পরিবর্তে ৪৯টি যাত্রী ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সি সুবিধা পাবে এয়ারলাইন্সগুলো। এর সঙ্গে যোগ হতে যাচ্ছে ফ্লাই নাসের সিডিউল ফ্লাইট।
জানা গেছে, ওমরাহ, হজ ও পর্যটন- এই তিন ক্যাটাগরিতে চলতি বছর কমপক্ষে চার লাখ, আগামী বছর তার দ্বিগুণ না হলেও কমপক্ষে ৭ লাখ যাত্রীর টার্গেট করেছে সৌদি আরব। এজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্যে অন্যতম ভিসা প্রাপ্তি সহজীকরণ। এ জন্য ২০২২ সালে সারাবিশ্ব থেকে হজ ও ওমরাহ পালনকারীদের ভিসা ও ভ্রমণ সংক্রান্ত বিষয়ে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম নুসুক চালু করে সৌদি আরব। এটি দেশটির সরকারের প্রথম অফিসিয়াল প্ল্যানিং, বুকিং এবং এক্সপেরিয়েন্স প্ল্যাটফর্ম; যার লক্ষ্য হচ্ছে মক্কা ও মদিনায় ওমরাহ এবং হজ পরিকল্পনায় সাহায্য করা। সারাবিশ্বের ভ্রমণকারীরা তাদের ভ্রমণ পরিকল্পনা করতে পারবেন নুসুকে। এতে ভিসা আবেদন থেকে শুরু করে ফ্লাইট ও হোটেল বুকিং সুবিধাও রয়েছে। নুসুককে জনপ্রিয় করতে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে সৌদি আরব। গত ২৪ আগস্ট ঢাকায় সৌদি সরকারের ফ্ল্যাগশিপ উদ্যোগ নুসুককে পরিচিত করতে প্রথম রোড শো’র আয়োজন করা হয়। রোড শোতে যোগ দেন ড. তৌফিগ আল-রাবিয়াহ, নুসুকে প্রেসিডেন্ট আলহাসান আলদাববাগসহ সৌদির সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। বাংলাদেশে হজ, ওমরাহ, ট্যুর অপারেটর, ট্রাভেল এজেন্সি, এয়ারলাইন্স প্রতিনিধিদের এ আয়োজনে আমন্ত্রণ জানানো হয়। যা ইতোমধ্যেই নিশ্চিত করা হয়েছে। পাশাপাশি ওমরাহ ভিসার মেয়াদ ৩০ দিন থেকে বাড়িয়ে ৯০ দিন করেছে সৌদি।
আগে ওমরাহ ভিসায় সৌদি ভ্রমণ করা যেত না। এখন ওমরাহ ভিসায় পুরো সৌদি ভ্রমণ করা যাবে। আগে নিষিদ্ধ থাকলেও এখন নারীরা মাহরাম ছাড়া মক্কা ও মদিনায় যেতে পারবেন। আগে ওমরাহ ভিসা ছাড়া সৌদি থেকে জমজমের পানি আনা যেত না। নতুন চুক্তি অনুযায়ী সব ভিসাধারীই জমজমের পানি আনতে পারবেন। দেশটিতে বর্তমানে ৩০ লাখ বাংলাদেশী কর্মরত। তাদের পরিবারের সদস্যদের সৌদি আরবে ভ্রমণের জন্য নিয়ে যেতে পারেন, সেজন্য ফ্যামিলি ভিজিট ভিসার পদ্ধতিও সহজ করা হয়েছে। এ ঘোষণা দিয়ে গেছেন সফরকারীরা।
পর্যটন খাতে গতি বাড়াতে ট্রানজিট যাত্রীদের জন্যও সুবিধা বাড়িয়েছে সৌদি সরকার। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অনেকেই সৌদি আরবের বিভিন্ন এয়ারলাইন্স ব্যবহার করে যাতায়াত করেন। ট্রানজিট যাত্রীদের সৌদি আরবে ভ্রমণে আগ্রহী করতে ট্রানজিটের সময় যাত্রীদের চার দিনের ভিসা দেবে দেশটি। এই ট্রানজিট সময়ে যাত্রীরা সৌদি আরবে ওমরাহ পালন করতে পারবেন।
ঢাকা সফররত নুসুক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফাহ্দ হামিদাদ্দিন সৌদির ভিশন ২০৩০ ও পর্যটন প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশ আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। এ বছর এখন পর্যন্ত সৌদিতে তিন লাখ ৩২ হাজার বাংলাদেশী ভ্রমণ করেছেন। আমরা আরও বাংলাদেশীকে স্বাগত জানাতে চাই। বাংলাদেশীদের ওমরাহ পালনের স্বপ্ন পূরণে সহযোগী হতে চাই। ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধ সৌদিতে স্বাগত জানাতে অপেক্ষায় থাকব। সৌদির ভিশন ২০৩০ অর্জনের জন্য বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে কবে নাগাদ সৌদি আরবের অপর এয়ারলাইন্স ফ্লাই নাস ঢাকায় নিয়মিত সিডিউল ফ্লাইট চালু করবে জানতে চাইলে হাব সভাপতি শাহাদত হোসেন তসলিম দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, এবা