বাড়ির পাশের কাকার যৌন লালসার শিকার হয়েছিল নাবালিকা। তবে প্রাণভয়ে সে কথা কাউকে বলতে পারেনি সে। এরইমধ্যে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে ওই নাবালিকা। বিষয়টি জানাজানি হতেই গর্ভপাতের জন্য চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন নাবালিকার পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু ততদিনে ২৫ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন ওই নাবালিকা। শেষে কলকাতা হাইকোর্ট ওই নাবালিকার গর্ভপাত করানোর অনুমতি দিল। ঘটনাটি পূর্ব মেদিনীপুরের। বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য এসএসকেএম হাসপাতালে নাবালিকার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে গর্ভপাতের করানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বয়ান অনুযায়ী, ওই নাবালিকার বাবা-মা ভিন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন। তাই তাঁরা দুই মেয়েকে দাদুর কাছে রেখেই ভিন রাজ্যে পাড়ি দিয়েছিলেন। সেই সময় পাশের বাড়ির এক যুবক খাবারের লোভ দেখিয়ে ওই নাবালিকাকে বেশ কয়েকবার ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। কিন্তু সেই ধর্ষণের কথা সাহস করে কাউকে বলতে পারেনি ওই নাবালিকা। কারণ অভিযুক্ত যুবক তাকে হুমকি দিয়েছিল বিষয়টি প্রকাশ্যে আসলেই তার বোনকে খুন করা হবে। ফলে এক প্রকার মুখ মুঝে যুবকের যৌন নির্যাতন মেনে নিতে হয়েছিল ওই নাবালিকাকে। এইভাবে বেশ কয়েক মাস পর অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে ওই নাবালিকা। মেয়ের অসুস্থতার খবর শুনতে পেয়ে ভিন রাজ্য থেকে বাড়ি চলে আসেন তার বাবা-মা। এরপরে তাঁরা মেয়েকে চিকিৎসার জন্য ডাক্তারদের কাছে নিয়ে গিয়ে যান। পরীক্ষার পর নাবালিকার অভিভাবকরা যা জানতে পারেন তাতে তাঁরা তাজ্জব হয়ে যান। তখন নাবালিকার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। তারপরে মেয়ের গর্ভপাত করার জন্য চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন বাবা-মা। কিন্তু, দেশের নিয়ম অনুযায়ী ২৪ সপ্তাহের উপর অন্তঃসত্ত্বা থাকলে সে ক্ষেত্রে গর্ভপাতের জন্য আদালতের অনুমতি নিতে হবে। তা জানার পরে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে নাবালিকার পরিবার। এদিকে, চিকিৎসকের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতার করে। অপরদিকে, মেয়েকে এই অবস্থায় ফেলে রেখে ভিন রাজ্যে কাজে চলে যায় নাবালিকার বাবা-মা।
মামলাটি ওঠে বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের এজলাসে। সেই মামলায় এই অবস্থায় নাবালিকাকে ফেলে রেখে অভিভাবকদের চলে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিচারপতি। তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘এভাবে ধর্ষণের শিকার হওয়া নাবালিকাকে অভিভাবকদের পরিত্যাগের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। মেয়েটিকে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব হল সমাজের।’ তারপরে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিককে নির্দেশ দিয়েছেন, এসএসকেসম হাসপাতালে পাঠিয়ে নাবালিকার গর্ভপাতের ব্যবস্থা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রথমে নাবালিকার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে। তারপর গর্ভপাত করানো গেলে তাহলে তা করে ফেলতে হবে বলে নির্দেশ আদালতের।