শিশুদের মধ্যে ক্যানসার খুবই বিরল ঘটনা। বেশিরভাগ শিশুদের ক্যানসার নিরাময়যোগ্য এবং তাদের বেঁচে থাকার হার অনেক বেশি।
শরীরের নিজস্ব কোষগুলি যখন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়ে অস্বাভিক বিভাজন শুরু করে তখন ক্যানসার হয়।
এই অনিয়ন্ত্রিত কোষগুলি শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং ক্লাস্টার তৈরি করে। পেডিয়াট্রিক ক্যানসারের কারণ এবং ঝুঁকির কারণগুলি বয়ঃসন্ধিকালীন ক্যানসারের থেকে আলাদা এবং চিকিত্সা পদ্ধতিও আলাদা।
জন্ম থেকে ১৪ বছর বয়স অবধি লিউকেমিয়া বা রক্তের ক্যানসার, ব্রেন এবং সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের ক্যানসার, লিম্ফোমা, নিউরোব্লাস্টোমা, কিডনির টিউমার বেশি হতে দেখা যায়।
বয়ঃসন্ধিকালের বাচ্চাদের মধ্যে বিশেষত ১৫ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে যে ক্যানসারগুলো হানা দিতে পারে সেগুলি হল- কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের টিউমার, লিম্ফোমা, থাইরয়েড ক্যানসার, ওভারিয়ান জার্ম সেল টিউমার, ম্যালিগন্যান্ট বোন টিউমার ইত্যাদি।
নিউরোব্লাস্টোমা ক্যান্সার সাধারণত নার্ভ সেল বা স্নায়ু কোষে (নিউরোব্লাস্ট) বৃদ্ধি পায়। অনেক সময় মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় শিশুদের মধ্যে এই ক্যানসার হয়। এটি ১০ বছরের কমবয়সি শিশুদের হয়। টিউমার শরীরের যে কোনও জায়গায় বাসা বাঁধতে পারে। হাড়ের ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটে ব্যথা, প্রস্রাব করতে সমস্যা এবং ঘন ঘন জ্বর হতে পারে শিশুর।
লিম্ফোমা ইমিউন সিস্টেমের কোষে শুরু (Cancer) হয়, যাকে বলা হয় লিম্ফোসাইট। এই ধরনের ক্যানসার প্রায়শই লিম্ফ নোড বা অন্যান্য লিম্ফ টিস্যুতে শুরু হয়, যেমন টনসিল বা থাইমাস। তারা অস্থি মজ্জা এবং অন্যান্য অঙ্গকেও প্রভাবিত করতে পারে। ক্যানসার কোথা থেকে শুরু হয় তার উপর লক্ষণগুলি নির্ভর করে এবং এর মধ্যে ওজন হ্রাস, জ্বর, ঘাম, ক্লান্তি, এবং ঘাড়, বগলে বা কুঁচকিতে ত্বকের নীচে ফোলাভাব (ফোলা লিম্ফ নোড)।
কী কী লক্ষণ দেখে আন্দাজ করা যেতে পারে যে শিশুর ক্যানসার হয়েছে?
লিউকেমিয়া হলে অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতার উপসর্গ দেখা দেবে।
মাড়ি, নাক, মুখ থেকে রক্ত বের হতে পারে।
প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত বেরোবে
একটানা জ্বর থাকবে, ঘাড়ে ও বগলে ফোলাভাব থাকবে।
হাড়ের ক্যানসার হলে গাঁটে গাঁটে ফোলাভাব দেখা দেবে। তাতে কোনও যন্ত্রণা থাকবে না। অল্প আঘাতেই হাড় ভেঙে যেতে পারে।খাদ্যনালি বা পেটের ক্যানসার হলে পেটে ফোলাভাব, ব্যথা, খাবার খেতে সমস্যা হবে।
ব্রেন এবং স্পাইনাল কর্ডের টিউমারও শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের টিউমারের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে এবং প্রতিটির জন্য চিকিত্সা আলাদা। শিশুদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্রেনের নীচের অংশে বাসা বাঁধে টিউমার, যেমন সেরিবেলাম বা ব্রেন স্টেম। তখন মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, ঝাপসা দৃষ্টি, মাথা ঘোরা, খিঁচুনি, হাঁটতে সমস্যা হতে পারে।
কী ধরনের চিকিত্সা জরুরি?
শিশুদের ক্যানসারের লক্ষণ দেখা দিলে পেডিয়াট্রিক অঙ্কোলজিস্ট, হেমাটোঅঙ্কোলজিস্ট, মেডিক্যাল অঙ্কোলজিস্টের কাছে যেতে পারেন অভিভাবকরা।
কোন অঙ্গের ক্যানসার তা পরীক্ষা করে তবেই চিকিত্সা শুরু হবে। এখন রেডিওথেরাপি অনেক উন্নত। তাছাড়া ইমিউনোথেরাপিতে ক্যানসার নিরাময়ের চেষ্টা করছেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা। মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি দিয়ে কম সময়ে যন্ত্রণাহীন চিকিত্সা হচ্ছে। গোড়া রোগ ধরা পড়লে তা নিরাময়ও সম্ভভ হচ্ছে।