নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন, শরীরের আর কোথাও টোকা দিলে এমন তীব্র ব্যথা ও ঝিমঝিমানির মতো ব্যথা শুরু হয় না। কনুইয়ের যে জায়গায় টোকা দিলে বা আঘাত পেলে এমন তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়, তার নাম 'ফানি বোন'।
প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এমন হালকা আঘাতেই তীব্র ব্যথা ও ঝিমঝিমানি অনুভূতি হয়? উত্তর জেনে নেওয়ার আগে বলা ভালো, 'ফানি বোন' আদতে কোনো বোন বা হাড় নয়, এটি স্নায়ু বা নার্ভ।
বৈজ্ঞানিকভাবে ফানি বোনের নাম 'আলনার নার্ভ' এটি হাতের প্রধান তিনটি স্নায়ুর একটি। এটি ঘাড় থেকে শুরু হয়ে হাতের একদম শেষ প্রান্ত বা আঙুলের ডগা পর্যন্ত বিস্তৃত। আমাদের হাতের বাহুতে একটি লম্বা হাড় থাকে, যার নাম 'আলনা'। এটি হাতের কিছু চলাচল নিয়ন্ত্রণও করে।
দীর্ঘ এই স্নায়ু অধিকাংশ স্থানেই হাড়, পেশি ও চর্বি দিয়ে সুরক্ষিত থাকে। কিন্তু যখন কনুইয়ের নিচ দিয়ে হাতের নিচের অংশে নামে, তখন এটিকে খুব সরু এক পথ অবলম্বন করতে হয়। এই পথের নাম 'কিউবিটাল টানেল'। টানেলটি পার হওয়ার সময় যেখানে হাতের রেডিয়াস ও আলনা নামের দুটি হাড় মিলিত হয়েছে, সেখানে স্নায়ুটির একপাশ কনুইয়ের হাড়ের সঙ্গে যুক্ত থাকে এবং অন্যপাশেই থাকে আমাদের ত্বক। এর অর্থ হল এই স্নায়ুটির উপরপৃষ্ঠে সুরক্ষা দেওয়ার মতো ত্বক ছাড়া তেমন কিছুই নেই। তাই এই স্থানেই স্নায়ুটি সবচেয়ে বেশি স্পর্শকাতর অবস্থায় থাকে।
কেন এত স্পর্শকাতর এই ফানি বোন?
যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের অর্থোপেডিক এবং রিউমাটোলজিক ইনস্টিটিউটের চিকিত্সক ডমিনিক কিং-এর মতে স্নায়ুটি যখন এই টানেল পার হয়, তখনই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে। হঠাত্ যখন স্নায়ুটিতে আঘাত লাগে তখন অন্যপাশে শক্ত কিছুর (কনুইয়ের হাড়) সঙ্গে ধাক্কা খায়, তখন এটি সংকুচিত হয়ে যায়'।
এই সংকুচিত হয়ে যাওয়াকে বলে 'আলনার নার্ভ এনট্র্যাপমেন্ট'। ডমিনিক কিং-এর মতে আমাদের শরীরের যে কোনো অনুভূতি আমরা স্নায়ুর মাধ্যমে বুঝতে পারি। দীর্ঘ আলনার নার্ভটির অবস্থান আমাদের ত্বকের একদম কাছাকাছি চলে আসে। তাই এখানে আঘাত পেলে অনেকটা বৈদ্যুতিক শক খাওয়ার মতো অনুভূতির জন্ম দেয়।