সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও গুরুতর আহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দেয়া শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। এক্ষেত্রে নিহতদের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা করে দেয়া হবে। কারো অঙ্গহানি হলে দেয়া হবে ৩ লাখ টাকা। এ ক্ষতিপূরণের জন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কাছে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত ২৪৩টি আবেদন জমা পড়েছে।
গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি জানান, আগামী ২২ অক্টোবর নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে সড়ক ভবনে অনুষ্ঠেয় এক আলোচনা সভায় এ ক্ষতিপূরণ প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কারা ক্ষতিপূরণ পাবে: বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার জানিয়েছেন, সড়ক পরিবহন বিধিমালা ২০২২-এর আলোকে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। ২০২২ সালের ২৭ ডিসেম্বর থেকে বিধিমালাটি কার্যকর হয়েছে। ক্ষতিপূরণ দেয়ার ক্ষেত্রে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে হিসাব ধরা হচ্ছে। ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারির আগে যারা সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত হয়েছে তারা বা তাদের পরিবার ক্ষতিপূরণের জন্য বিবেচিত হবে না।
ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ঠিক হবে যেভাবে: সড়ক পরিবহন বিধিমালা ২০২২ অনুযায়ী দুর্ঘটনায় হতাহতদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে আর্থিক সহায়তার পরিমাণ নির্ধারণের মানদণ্ড ঠিক করবে ট্রাস্টি বোর্ড। দুর্ঘটনায় নিহত বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে কারো মৃত্যু হলে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ হবে এককালীন অন্যূন ৫ লাখ টাকা। দুর্ঘটনাকবলিত ব্যক্তির গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গহানি হলে এর পরিমাণ হবে অন্যূন ৩ লাখ টাকা। গুরুতর আহত ও চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা না থাকলে ক্ষতিপূরণ হবে অন্যূন ৩ লাখ টাকা। গুরুতর আহত ও চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকলে এর পরিমাণ হবে অন্যূন ১ লাখ টাকা। সরকারের অনুমোদন নিয়ে ট্রাস্টি বোর্ড সময়ে সময়ে আর্থিক সহায়তার পরিমাণ কমাতে বা বাড়াতে পারবে।
যেভাবে মিলবে ক্ষতিপূরণের টাকা: ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য দুর্ঘটনা ঘটার ৩০ দিনের মধ্যে নির্ধারিত ফরমে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করতে হবে। আবেদন দাখিল হওয়ার ১০ দিনের মধ্যে বোর্ডের চেয়ারম্যান একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করবেন। এ কমিটি পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে আবেদনকারীর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে বোর্ডের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে। প্রতিবেদন দাখিলের ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ট্রাস্টি বোর্ড আবেদন মঞ্জুর করে আর্থিক সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা করবে। টাকা আবেদনকারীর ব্যাংক হিসাবে চেকের মাধ্যমে দেয়া হবে।
ক্ষতিপূরণের জন্য অর্থের জোগান: সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের ক্ষতিপূরণের জন্য একটি আর্থিক সহায়তা তহবিল গঠন করেছে সরকার। প্রত্যেক মোটরযান মালিককে এ তহবিলে নিয়মিত চাঁদা দিতে হবে। বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও প্রাইম মুভারের জন্য বার্ষিক চাঁদা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকা। ৭৫০ টাকা বার্ষিক চাঁদা নির্ধারণ করা হয়েছে মিনিবাস, মিনিট্রাক ও পিকআপের জন্য। কার, জিপ ও মাইক্রোবাসের বার্ষিক চাঁদা ৫০০ টাকা। অন্যদিকে থ্রি-হুইলার ও অন্যান্য যানবাহনের বার্ষিক চাঁদা ৩০০ টাকা। এর বাইরে মোটরসাইকেলের জন্য এককালীন ১ হাজার টাকা চাঁদা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারের অনুমোদন নিয়ে ট্রাস্টি বোর্ড সময়ে সময়ে চাঁদার পরিমাণ কমাতে বা বাড়াতে পারবে।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের পরিসংখ্যান নিয়মিতভাবে প্রকাশ করছে বিআরটিএ। সংস্থাটির তথ্য বলছে, এ বছরের জানুয়ারিতে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩৩ জনের মৃত্যু হয়। আহত হয় ৩৩৬ জন। ফেব্রুয়ারিতে ৩০৩ জন নিহত ও ৪১৬ জন আহত হয়। মার্চে ৪১৫ জন নিহত ও ৬৮৮ জন আহত হয়। এপ্রিলে ৪৫৯ জন নিহত ও ৭০৫ জন আহত হয়। মে মাসে ৩৯৪ জন নিহত ও ৬৪৯ জন আহত হয়। জুনে নিহত হয় ৫০৪ জন, আহতের সংখ্যা ৭৮৫। সর্বশেষ গত জুলাইয়ে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে আহত হয়েছে আরো ৯৩৪ জন।