আল্লাহ তাআলা কুরআনে কুরআন তিলাওয়াত সম্পর্কে বলেন, ‘তোমরা তারতিলের সঙ্গে কুরআন তিলাওয়াত কর।’ সুনানে আবু দাউদের একটি ব্যাপক প্রচারিত হাদিস রয়েছে যা হজরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে কুরআন শিক্ষা গ্রহণ করে ও কুরআন শিক্ষা দেয়।’ সুতরাং কুরআন নাজিলের মাসে কুরআন শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা, মর্যাদা ও গুরুত্ব অনেক। যা তুলে ধরা হলো-
কুরআন শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা
কুরআন ও হাদিসের ঘোষণা অনুযায়ী কুরআন বিশুদ্ধভাবে তিলাওয়াত জরুরি। আর দুনিয়াতে কুরআনের শিক্ষক এবং ছাত্র উভয়েই সর্বোত্তম ব্যক্তি। আর এ কাজটি যদি দুনিয়ার সর্বোত্তম মাস রমজানে হয়, তবে তা হবে সোনায় সোহাগা। যেহেতু এ মাসেই আল্লাহ তাআলা মানুষের দুনিয়ার জীবনমান উন্নয়ন, হিদায়াতদান ও পরকালের মুক্তির জন্য কুরআন নাজিল করেছেন; সেহেতু কুরআন নাজিলের মাসই হলো কুরআন শিক্ষার শ্রেষ্ঠ সময়।
মুসলিম উম্মাহর জন্য কুরআন কারিম ন্যূনতম এতটুকু সহিহ-শুদ্ধ করে পড়া আবশ্যক কর্তব্য যে, যার তিলাওয়াতে কুরআনের অর্থের পবির্তন হবে না এবং নামাজ বাতিল হবে না। সুতরাং একজন মানুষের দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য কুরআনুল কারিম সহিহ ও বিশুদ্ধভাবে তিলাওয়াত শিক্ষা করা ফরজে আইন। আর যে ব্যক্তি কুরআন বিশুদ্ধভাবে শিখবে না, সে অবশ্যই গোনাহগার হবে।
কুরআন শিক্ষার মর্যাদা
কুরআনুল কারিম বিশুদ্ধভাবে শিক্ষা লাভ এবং তিলাওয়াতের মর্যাদা অনেক। এ প্রসঙ্গে হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যারা সহিহ ও বিশুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াত করবে, তারা সম্মানিত ফেরেশতাগণের সমতুল্য মর্যাদা পাবে এবং যারা কষ্ট সত্ত্বেও সহিহ ও বিশুদ্ধভাবে কুরআন পড়ার চেষ্টা ও মেহনত চালিয়ে যায়; তাদের জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সওয়াব।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশুদ্ধ ও সহিহভাবে কুরআন পড়ার তাগিদ দিয়েছেন, হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের এমনভাবে কুরআন পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন, যেভাবে তোমাদেরকে কুরআন শিক্ষা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে কুরআন তিলাওয়াত করেছেন এবং সাহাবায়ে কিরামকে যেভাবে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন, সেভাবে কুরআন শিক্ষা লাভ করা এবং তিলাওয়াত করা। সুতরাং কুরআন শিক্ষার উপযুক্ত সময় রমজান মাস।
করণীয়...
যাদের কুরআন তিলাওয়াত সহিহ ও বিশুদ্ধ নয়, তাদের জন্য কুরআন কারিম সহিহ ও বিশুদ্ধভাবে শিক্ষা গ্রহণ করা ফরজে আইন। কুরআন নাজিলের এ বরকতি মাসে অল্প সময় মেহনত করলেই কুরআন শিক্ষা করা সম্ভব। সুতরাং আর দেরি না করে সহিহ ও বিশুদ্ধভাবে কুরআনের শিক্ষা গ্রহণে এগিয়ে আসা দরকার।
সতকর্তা...
নামাজে কুরআন তিলাওয়াত অশুদ্ধ হলে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। কুরআন তিলাওয়াত অশুদ্ধ, এ কথা ভেবে নামাজ ছেড়ে দেয়ার কোনো অনুমতি নেই। বরং কুরআন তিলাওয়াত সহিহ ও বিশুদ্ধ করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নামাজও আদায় করতে থাকবে। তবে কুরআন শিক্ষাকালীন সময়ে এ ধরনের লোকজন কোনোভাবেই নামাজের ইমামতি করবে না।
পরিশেষে...
কুরআন নাজিলের মাসে সহিহ ও বিশুদ্ধ তিলাওয়াত শিক্ষা লাভ করে আল্লাহ তাআলা রহমত বরকত মাগফিরাত ও নাজাত লাভের সুনিশ্চিত পুরস্কার গ্রহণ করা প্রত্যেক মুসলমানের একান্ত কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআন সহিহভাবে পড়ার, কুরআন বুঝার, কুরআন অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।