জুমাবারের রাত-দিন ও জুমার নামাজের গুরুত্ব ফজিলত ও মর্যাদা অপরিসীম। জুমার দিনকে সাপ্তাহিক ঈদের দিন বলা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, দিনটি ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতরের চেয়ে মর্যাদার। জুমার দিনের গুরুত্ব, ফজিলত, মর্যাদা, বিশেষ আমল এবং দোয়া কবুলের মুহূর্ত সম্পর্কে হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আবু লুবাবা ইবনু আবদুল মুনযির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জুমার দিন হলো সপ্তাহের দিনসমূহের নেতা এবং তা আল্লাহর কাছে বেশি সম্মানিত। এ দিনটি আল্লাহর কাছে কোরবানির দিন ও ঈদুল ফিতরের দিনের চেয়ে অধিক সম্মানিত। এ দিনের রয়েছে ৫টি বৈশিষ্ট্য-
১. আল্লাহ তাআলা এ দিন হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করেন;
২.এদিকেই তাঁকে পৃথিবীতে পাঠান এবং
৩. এ দিনই তাঁর মৃত্যু দান করেন।
৪. এ দিনে এমন একটি বিশেষ মুহূর্ত আছে, কোনো বান্দা তখন আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করলে তিনি তাকে তা দান করেন, যদি না সে হারাম জিনিসের প্রার্থনা করে এবং
৫. এ দিনই কেয়ামাত সংঘটিত হবে। (এ কারণেই) নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতাগণ, আসমান-যমীন, বায়ু, পাহাড়-পর্বত ও সমুদ্র সবই জুমুআহর দিন শংকিত হয়।’ (ইবনে মাজাহ)
মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহ তাআলা মর্যাদার এ দিনটি সবার পরে দান করেছেন। আর এ দিনের মর্যাদা-গুরুত্ব ও ফজিলতের কারণে এ উম্মাহ পরকালে সবার অগ্রগামী হবে বলেও ঘোষণা করেছেন বিশ্বনবি-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দুনিয়াতে আমাদের আসার সময় সব জাতির (ইয়াহুদি-খ্রিষ্টান) পরে। কিন্তু কেয়ামতের দিন আমরা সবার অগ্রগামী। অবশ্য আমাদের আগে ওদেরকে (ইয়াহুদি ও নাসারাকে) কিতাব দেওয়া হয়েছে। আমরা কিতাব (কোরআন) পেয়েছি ওদের পরে। এই (জুমার) দিনের সম্মান ওদের (ইয়াহুদি-খ্রিষ্টান) উপর ফরজ করা হয়েছিল। কিন্তু ওরা তাতে মতভেদ করে বসে। পক্ষান্তরে আল্লাহ আমাদের তাতে একমত হওয়ার তওফিক দান করেছেন। সুতরাং সব মানুষ আমাদের থেকে পেছনে। ইয়াহুদিরা আগামী দিন (শনিবারকে জুমার দিনের মতো) সম্মান করে এবং নাসারারা করে তার পরের দিনকে (রোববার)।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)
মূল কথা হলো- পরকালে (কিয়ামাতের দিন) জুমাআর ফজিলতের মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মতগণ সকল কার্যক্রমে পূর্ববর্তী সকলের চেয়ে অগ্রগামী হয়ে যাবে।
জুমার গুরুত্ব আল্লাহ তাআলার কাছে এত বেশি যে, কোরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ ‘জুমআ’ নামে একটি স্বতন্ত্র সুরা নাজিল করেছেন এবং এদিন আজানের সঙ্গে সঙ্গে সব কাজ বন্ধ করে দিয়ে জুমা পড়তে যাওয়ার নির্দেশ এসেছে এভাবে-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نُوۡدِیَ لِلصَّلٰوۃِ مِنۡ یَّوۡمِ الۡجُمُعَۃِ فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ ذَرُوا الۡبَیۡعَ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ
‘হে বিশ্বাসীগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের জন্য দ্রুত ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা উপলব্ধি কর।’ (সুরা জুমা : আয়াত ৯)
মনে রাখতে হবে
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে দিনগুলোতে সূর্য ওঠে; ওই দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। জুমার দিন দোয়া কবুল হওয়ার একটি সময় আছে , কোনো মুসলিম যদি সেই সময়টা পায়, আর তখন যদি সে নামাজে থাকে, তাহলে তার যেকোনো কল্যাণ কামনা আল্লাহ পূরণ করেন। (বুখারি)
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমার দিনে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করার কথা বলেছেন। কেননা এ দিন যারা দরূদ পড়ে, তাদের দরূদ নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে পাঠানো হয়।’ (আবু দাউদ)
যারা বেশি বেশি দরূদ পড়ে, তাদের মর্যাদাও বিশেষ। নবিজী বলেছেন, যে ব্যক্তি দরূদ পাঠ করে আল্লাহ তার ওপর ১০টি রহমত নাজিল করবেন। ১০টি গুনাহ ক্ষমা করে দেন এবং ১০ টি মর্যাদা বাড়িয়ে দেন।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, জুমার গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিবেচনা করে এই দিনটিকে কাজে লাগানো। আমল ও ইবাদত-বন্দেগিতে দিনটি অতিবাহিত করা। কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনার ওপর যথাযথ আমল করা।
আল্লাহ তাআলা উম্মাতে মুসলিমাকে জুমার দিনের গুরুত্ব ও মর্যাদা বুঝে বিশেষ ফজিলত ও বরকত পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
রাজশাহীর সময় / জি আর