গভীর শোক, বিনম্র শ্রদ্ধা আর হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় স্বাধীন বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা, অবিসংবাদিত রাজনীতিক, স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার মূল নায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করল পুরো জাতি।
মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধুর ৪৮তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসে রাজধানীর পথে পথে কালো পতাকা, মাইকে বজ্রনিনাদ কণ্ঠে সেই অবিস্মরণীয় ভাষণ, 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম'। এর সঙ্গে দেশাত্মবোধক গান বেজেছে সারা দিন। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি এবং গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি শ্রদ্ধার ফুলে ফুলে ঢেকে যায়। দৈহিকভাবে তিনি না থেকেও মঙ্গলবার দেশজুড়ে তিনিই ছিলেন গণমানুষের মধ্যমণি। যেমনটি ছিলেন তার জীবদ্দশায়।
ঢাকাসহ সারা দেশেই পাড়া-মহলস্নায়, পথের মোড়ে মোড়ে সামিয়ানা টাঙিয়ে করা হয়েছিল গরিব-দুঃখীদের মধ্যে খাদ্য বিতরণের ব্যবস্থা। আরও ছিল স্বেচ্ছায় রক্তদান, শোক মিছিল, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, আলোচনা সভা, কোরআনখানি, মিলাদ মাহফিল, বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনাসহ নানা কর্মসূচি।
দিনের শুরুতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শোক দিবসের আনুষ্ঠানিকতা। সকাল ৬টা ৩২ মিনিটে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর তিনি বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় বাংলাদেশ তিন বাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকস দল রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদান করে এবং বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়। এরপর '৭৫-এর ১৫ আগস্টের শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
পরে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা ও ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য এবং সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধানরা ছিলেন।
এরপর আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে দ্বিতীয়বার বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শেখ হাসিনা। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা শেখ রেহানা।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর একে একে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ডক্টর শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার
কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনাররা। প্রধানমন্ত্রী ধানমন্ডির ৩২ নম্বর ছেড়ে গেলে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এ সময় বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর ঢল নামে।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে যুবলীগ, মহিলা লীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, যুব মহিলা লীগ, শ্রমিক লীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ যুবলীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ শ্রদ্ধা জানান।
ধানমন্ডির ৩২ নম্বর থেকে প্রধানমন্ত্রী বনানী কবরস্থানে যান। সেখানে তিনি ১৫ আগস্ট নিহত পরিবারের সদস্যদের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানাও।
এরপর তিনি ফাতেহা পাঠ এবং মোনাজাতে অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রী বনানী কবরস্থান এলাকা ছেড়ে গেলে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
এরপর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, শ্রমিক লীগসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারের মন্ত্রণালয়-অধিদপ্তর, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
আমাদের গোপালগঞ্জ ও টুঙ্গিপাড়া প্রতিনিধি জানান, বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে টুঙ্গিপাড়া যান শেখ হাসিনা। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। এরপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহতদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে ফাতেহা পাঠ, দোয়া ও বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানাসহ পরিবারের সদস্য এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে দ্বিতীয়বার শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
এসব কর্মসূচির বাইরে সারা দেশে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী অসহায়-দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন।