বদলে যাচ্ছে জলবায়ু- এমন কথা শুনে আমরা অনেকেই বড় হয়েছি, কিন্তু লাভ কি হয়েছে! এই পরিবর্তন মোকাবিলায় করণীয় কিছুই করেনি মানুষ। আর এর ফল যে সকলকে ভুগতে হবে, সেটাই নিশ্চিত।
জানা যাচ্ছে, ২০২৪ সাল হতে চলেছে পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণতম বছর। গত কয়েক মাস ধরেই গবেষকরা টের পাচ্ছিলেন প্রশান্ত মহাসাগরে একটি এল নিনোর উদ্ভব হতে চলেছে। এটি এখন আরও বড় হচ্ছে। তীব্র হতে হতে এবছরের শেষ দিকে এই এল-নিনো চরম পর্যায়ে পৌঁছাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অর্থাত্ আসছে শীতেও হয়তো স্বস্তি মিলবে না।
এল-নিনো একা নয় সঙ্গে আছে লা-নিনা। স্প্যানিশ শব্দ এল-নিনোর অর্থ ছোট ছেলে আর লা-নিনার অর্থ ছোট মেয়ে। নাম দুটি দিয়ে বোঝানো দুই অবস্থা হল সামুদ্রিক বায়ু সঞ্চালনের ফলাফল। সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা এবং বায়ুমন্ডলের চাপের ক্রমশ পরিবর্তন থেকে সৃষ্টি হয় এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রশান্ত মহাসাগরের জলের তাপমাত্রা চক্রাকার পরিবর্তনের ফলে এই ভৌগোলিক জলবায়ুতে ঘটনাটি ঘটে, এর কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা এবং বৃষ্টিপাত প্রভাবিত হয়।
এল-নিনোর পরেই আসে লা-নিনা। তারপর আসে এরসো বা এল-নিনো সাউদান অ্যাসোলেশন নিরপেক্ষ পর্যায়। আবহাওয়ার শুষ্ক মৌসুম হল এল-নিনো পর্যায়। এই সময় স্বাভাবিকের চেয়ে বৃষ্টিপাত কমে যায়, তাপমাত্রা প্রচণ্ড বেড়ে যায়। তারপর আসতে পারে লা-নিনা, তখন বেড়ে যায় বৃষ্টিপাত আর বন্যা। তাপমাত্রাও স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায়।
এল-নিনো পর্যায়ে প্রশান্ত নিরক্ষরেখার চারপাশে মহাসাগরের জল উষ্ণ হতে থাকে। এ সময় সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা কয়েক মাস এমনকি এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এক থেকে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে।
লা-নিনা পর্যায়ে ঘটে উল্টোটা। প্রশান্ত মহাসাগরে গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের জলের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে শীতল হয়ে ওঠে। সাধারণত চক্রের এই অবস্থা নয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত চলতে পারে, আবার কখনও কখনও তিন বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। সাধারণত দুই থেকে সাত বছর পর পর এই চক্র ফিরে আসতে পারে। আর এল-নিনো শেষ হলেই লা-নিনা আসার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু এমনটা নিশ্চিত করে বলা যায় না।
এল-নিনোর কারণে গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ে পরিবর্তন আসছে। ফলে ভবিষ্যতে এল-নিনো আরও শক্তিশালী হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা আগেই অনুমান করেছিলেন, ২০২৩ সালে এল-নিনোর বিপর্যয় মুখী হবে গোটা পৃথিবী। ২০২৩ বা ২০২৪ সালে বিশ্বে গড় তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড হবে। এতদিনে মার্কিন বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন, এল-নিনো শুরু হয়ে গেছে। নিষ্ঠুর এই আবহাওয়ার কারণে ২০২৪ সাল হয়ে উঠতে পারে পৃথিবীর সর্বোচ্চ উষ্ণ বছর।
চলামান এই এল-নিনো পৃথিবীর তাপমাত্রার বৃষ্টির দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে আটকে রাখার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এর প্রভাব বিশ্ব জুড়েই দেখা যাবে। এরপরে অস্ট্রেলিয়া সম্ভবত খরা হবে, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টি বেড়ে যেতে পারে আর কিছু অঞ্চলের বৃষ্টি অনেক কমে যাবে।