রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বহনকারী নৌকা ডুবে ১৭ জনের মৃত্যু


আন্তর্জাতিক ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 10-08-2023

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বহনকারী নৌকা ডুবে  ১৭ জনের মৃত্যু

মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বহনকারী একটি নৌকা সাগরে ডুবে যাওয়ায় অন্তত ১৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। চলতি সপ্তাহে রোহিঙ্গাদের নৌকাটি মিয়ানমার উপকূলের গভীর সমুদ্র এলাকায় ভেঙে যাওয়ার পর ডুবে যায়। এই ঘটনায় আরও কয়েক ডজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে বৃহস্পতিবার উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন।

প্রত্যেক বছর হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছানোর জন্য বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের শরণার্থী শিবির থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিপজ্জনক সমুদ্র পথে যাত্রা করে।

দেশটির সিত্তে শহরের শিয়ে ইয়াং মেট্টা ফাউন্ডেশনের উদ্ধারকারী কর্মী বায়ার লা বলেন, রোববার রাতে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে ৫০ জনের বেশি রোহিঙ্গাকে নিয়ে যাত্রা করা নৌকাটি গভীর সমুদ্রে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।

ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেছেন, গতকাল (বুধবার) পর্যন্ত আমরা ১৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছি। এছাড়া আমরা আটজনকে জীবিত পেয়েছি। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের নিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, উদ্ধারকারীরা এখনও নিখোঁজদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। যদিও নৌকাটিতে ঠিক কতজন যাত্রী ছিলেন তা জানা যায়নি।

বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের রাখাইনে প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমানের বসবাস রয়েছে। দেশটির কর্তৃপক্ষ এই রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশ থেকে সেখানে যাওয়া অভিবাসী হিসেবে মনে করে। কয়েকশ বছর ধরে রাখাইনে বসবাস করে এলেও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব নেই। এমনকি দেশটিতে রোহিঙ্গারা স্বাধীনভাবে চলাচলও করতে পারেন না এবং অন্যান্য সব ধরনের নাগরিক সুবিধা থেকেও বঞ্চিত তারা।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের জানুয়ারি মাসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ৩৯টি নৌকায় করে সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা আন্দামান সাগর এবং বঙ্গোপসাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন; যা আগের বছরের ৭০০ জনের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি।

সংস্থাটি বলেছে, গত বছর সমুদ্রে অন্তত ৩৪৮ জন রোহিঙ্গা মারা গেছেন বা নিখোঁজ হয়েছেন। রোহিঙ্গাদের বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রা ঠেকাতে আঞ্চলিক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার বলেছেন, এই অঞ্চলের সামুদ্রিক কর্তৃপক্ষকে দুর্দশাগ্রস্ত লোকজনকে উদ্ধার ও সমুদ্রযাত্রা ঠেকানোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহে সমুদ্রে রোহিঙ্গাদের বহনকারী অনেক নৌকা ভেসে গেছে।

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রাকে ‘বর্ণবাদের’ সঙ্গে তুলনা করেছে।

২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কঠোর দমন অভিযানের সময় দেশটির সৈন্যরা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে হত্যাযজ্ঞ, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ এবং ধর্ষণের মতো নৃশংসতা চালায়। সামরিক বাহিনীর ভয়াবহ এই অভিযানের মুখে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন।

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে হত্যাযজ্ঞ চালানোর দায়ে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতে গণহত্যার অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছে মিয়ানমার। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন শুরু করতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার আলোচনা করেছে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ মানবাধিকারবিষয়ক একজন দূত গত জুলাইয়ে বলেছিলেন, জাতিগত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের পরিস্থিতি নিরাপদ নয়।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]