এডিস মশার উৎস ধ্বংস করতে বিটিআই (বাসিলাস থুরিনজেনসিস ইসরায়েলেনসিস) নামে নতুন একটি কীটনাশক প্রয়োগ শুরু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। প্রথম বারের মতো এই কীটনাশক প্রয়োগ করা হচ্ছে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর গুলশান-২ লেকসংলগ্ন এলাকায় এই কীটনাশক প্রয়োগ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। এটি এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া। এই জৈবিক লার্ভিসাইড কার্যকরভাবে মশার লার্ভা ধ্বংস করে। এর বৈশিষ্ট্য হলো, এতে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই মানুষের শরীরে। শুধু তাই নয়, বিটিআই ব্যবহারে মানুষ, পোষা প্রাণী, জলজ প্রাণী, গবাদি পশু এবং উপকারী পোকামাকড়ের ক্ষতি হয় না বলে জানিয়েছে ডিএনসিসি। বিটিআই কীটনাশক সিংগাপুর থেকে আনা হয়েছে। এই কীটনাশকের প্রতি কেজির দাম ৩ হাজার ৩৮৫ টাকা। দামি এই কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করতে হবে সে বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিতে সিংগাপুর থেকে সরবরাহকারী কোম্পানির একজন কর্মকর্তা ঢাকায় এসেছেন। আগামী পাঁচ দিন তিনি মশক নিয়ন্ত্রণকর্মী এবং কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেবেন।
ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে সড়কের পাশের নালা, লেক, খাল, বাসাবাড়ির বেজমেন্টে বিটিআই ছিটানো হবে। এখন যে পরিমাণ বিটিআই আনা হয়েছে, তা দিয়ে আগামী তিন মাস পর্যন্ত এই কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে। তবে এর মধ্যে দ্বিতীয় চালানের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হবে।
বিশ্বে উন্নত দেশগুলোতে বিটিআই প্রয়োগ করা হয় জানিয়ে ডিএনসিসির মেয়র বলেন, ‘বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে এটি ব্যবহার করছে। বিভিন্ন দেশে দেখার পরে আমরা দেশের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ করে এটা নিয়ে এসেছি। আশা করি, এটি ব্যবহারে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।’
মেয়র জানান, ডিএনসিসির ১০টি অঞ্চলের মশা নিধনের পুরো টিমকে আগামী পাঁচ দিন ট্রেনিং করে কীভাবে এটি প্রয়োগ করতে হয়, সেটি শেখানো হবে। বিটিআই প্রয়োগের পুরো প্রক্রিয়াটি কঠোর মনিটরিংয়ের মধ্যে রাখা হবে জানিয়ে মেয়র আতিক বলেন, সঠিক পরিমাণে বিটিআই মিশ্রণ হয়েছে কি না, সঠিক পরিমাণ জায়গায় প্রয়োগ করা হয়েছে কি না এগুলো মনিটরিং করা হবে।
এ সময় ব্যক্তি পর্যায়েও বিটিআই ব্যবহার করা যেতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন ভবনের বেজমেন্টে প্রায় ৪৩ শতাংশ লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। তাই বেজমেন্টেও বিটিআই প্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছি। তবে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি ওষুধ কোম্পানিগুলো বাণিজ্যিকভাবে যদি এটি বাজারজাত করে ওভার দ্য কাউন্টারে বিক্রির ব্যবস্থা করে তাহলে সবাই নিজেদের বাড়িতে ব্যবহার করতে পারবে।’
প্রথম বার বিটিআই প্রয়োগের সময় অন্যদের সঙ্গে আরও ছিলেন, ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম শফিকুর রহমান, উপ-প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লে. কর্নেল মো. গোলাম মোস্তফা সারওয়ার, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. ইমদাদুল হক, সিংগাপুর থেকে আগত বিটিআই কীটনাশক বিশেষজ্ঞ লি শিয়াং, ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মফিজুর রহমান, অঞ্চল-৩-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জুলকার নায়ন প্রমুখ।