♦ সিটি টার্মিনাল হিসেবে থাকবে সায়েদাবাদ মহাখালী ও গাবতলী ♦ বুধবার কাঁচপুর টার্মিনালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র থেকে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে সরছে তিন আন্তজেলা বাস টার্মিনাল। কাঁচপুর, গ্রাম ভাটুলিয়া ও হেমায়েতপুরে যাচ্ছে সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনাল। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা ও জমি অধিগ্রহণের কাজ। এর মধ্যে আগামী বুধবার কাঁচপুর টার্মিনালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। টার্মিনালগুলোতে মাল্টিমডাল-পরিবহন সুবিধা থাকবে। একই সঙ্গে সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী টার্মিনালগুলো সিটি টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
বাস টার্মিনাল স্থানান্তরের এই প্রকল্পে ঢাকার চারপাশে পাঁচটি নতুন টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। হেমায়েতপুর, বাঘাইর, কাঁচপুর দক্ষিণ, ভুলতা এবং গ্রাম ভাটুলিয়ায় নির্মিত হবে এসব টার্মিনাল এবং সেই সঙ্গে আরও পাঁচটি নতুন বাস ডিপো নির্মিত হবে আটি বাজার, কাঁচপুর উত্তর, কাঞ্চন, বাইপাইল এবং গাজীপুরে। প্রস্তাবিত টার্মিনালগুলো নির্মিত হলে গাবতলী, মহাখালী এবং সায়েদাবাদে বিদ্যমান তিনটি বাস টার্মিনালকে সিটি বাস ডিপো হিসেবে ব্যবহার করা হবে। আশা করা হচ্ছে, এতে পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আসার পাশাপাশি যানজটও নিরসন হবে। এ নিয়ে সর্বশেষ ২০২৩ সালের ১ মার্চ পরিবহন মালিক শ্রমিক সমিতির সঙ্গে ঢাকা দুই সিটি মেয়রের সমন্বয় সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন ডিএসসিসির মেয়র এবং বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির আহ্বায়ক ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এতে উপস্থিত ছিলেন বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। বৈঠক শেষে দুই মেয়র সাংবাদিকদের বলেন, আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কাঁচপুর আন্তজেলা বাস টার্মিনাল ব্যবহারের উপযোগী হয়ে যাবে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে কাঁচপুরে চট্টগ্রাম, সিলেট, নোয়াখালী ও কুমিল্লার সব বাস সেখানে থাকবে। এ ছাড়া হেমায়েতপুর ও গ্রাম ভাটুলিয়া টার্মিনালের জায়গা অধিগ্রহণের কাজ চলমান রয়েছে। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক কাজী মো. বোরহান উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাস টার্মিনাল স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগামী বুধবার কাঁচপুর টার্মিনালের ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করবেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এই টার্মিনালগুলোতে মাল্টিমডাল-পরিবহন সুবিধা থাকবে। তিনি আরও বলেন, আর চলতি মাসের মধ্যে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের সংস্কার কাজ শেষ হবে। কাঁচপুর আন্তজেলা টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ হলে সায়েদাবাদ টার্মিনালটি সিটি টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহার করা হবে। এদিকে উত্তর সিটি করপোরেশনে সূত্রে জানা যায়, গ্রাম ভাটুলিয়া ও হেমায়েতপুর আন্তজেলা বাস টার্মিনালের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কাজ শেষ হলে টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
যা থাকবে টার্মিনালে : সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় টার্মিনালগুলোতে মাল্টিমডাল-পরিবহন সুবিধা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। যেখানে সিটি-বাস, ট্যাক্সি, অটোরিকশা এবং প্রাইভেট কার পার্কিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা থাকবে। এতে সহজেই যাত্রী নিয়ে টার্মিনালগুলোতে ঢুকতে ও বের হতে পারবে বিভিন্ন যানবাহন। রাতের বেলা আন্তজেলা-বাসগুলো যেন নিরাপদে পার্ক করা যায়, তার জন্য যথেষ্ট জায়গা এবং বাসকর্মীদের জন্য বিশ্রাম ও রাতে থাকার জন্য ডরমেটরি সুবিধাও থাকবে। নতুন টার্মিনালে বাস ধোয়া এবং ছোটখাটো মেরামতের জন্য ওয়ার্কশপ থাকবে। উপরন্তু, ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে, অত্যাধুনিক টার্মিনালে বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জিংয়ের ব্যবস্থা রাখারও প্রস্তাব করা হয়েছে। মূল টার্মিনাল ভবনগুলো হবে বহুতল; নিচতলায় থাকবে বাস পার্কিংয়ের সুবিধা এবং প্রাইভেট কার ও অন্যান্য যানবাহন পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে বেসমেন্টে। এ ছাড়া যাত্রী ও দর্শনার্থীদের জন্য থাকবে বড়সড় ওয়েটিং-লাউঞ্জ, মায়েদের জন্য বুকের দুধ খাওয়ানোর আলাদা কর্নার, পর্যাপ্ত সংখ্যক টয়লেট, বসার ব্যবস্থা এবং পুরুষ ও নারীদের জন্য নামাজের আলাদা ঘর। এর পাশাপাশি প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ সুবিধা রাখারও প্রস্তাব করা হয়েছে। স্থানীয় ও জাতীয় ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে টার্মিনালগুলোতে নির্মিত হবে ভাস্কর্য, পেইন্টিং এবং অন্যান্য অবকাঠামো। যাত্রীদের প্রবেশ এবং প্রস্থানের জন্য থাকবে আলাদা লাউঞ্জ এবং বাসে ওঠানামার জন্য থাকবে আলাদা প্রবেশ ও প্রস্থান পয়েন্ট। এ ছাড়াও নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুরো টার্মিনালজুড়ে থাকবে সিসিটিভি ক্যামেরা; থাকবে ওয়াইফাই সুবিধা, প্রবেশ ও প্রস্থান পথে ডিজিটাল ডিসপ্লে এবং ই-টিকিটিং সুবিধা। শিশুদের জন্য খেলাধুলার ব্যবস্থা রাখার পাশাপাশি বই, স্টেশনারি দোকান, সেলুন, এটিএম বুথ এবং রেস্টুরেন্টও থাকবে টার্মিনালগুলোতে। বাসকর্মীদের জন্য পৃথক ডরমেটরি ভবনের পাশাপাশি, আলাদা ক্যাফেটেরিয়া, রান্নাঘর এবং প্রার্থনার স্থান রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন পরিবহন সমিতি এবং টার্মিনাল কর্মকর্তাদের জন্য অফিস স্পেস, কর্মীদের জন্য লকার, মনিটরিং ও সিকিউরিটি রুম, চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত রাস্তা, তথ্য সংকেত এবং স্টোর রুম থাকবে। সৌর বিদ্যুৎ এবং দিনের আলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে পরিকল্পনায়। এ ছাড়া, আবর্জনা এবং বর্জ্য-পানি ব্যবস্থাপনার জন্য উন্নত সুবিধা রাখার পাশাপাশি রেইন-ওয়াটার-হার্ভেস্টিং বা বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাগুলোও থাকবে নতুন টার্মিনালে। জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থার পাশাপাশি বাস-ধোয়া-বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য ইটিপি সুবিধা রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। টার্মিনালে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, প্রাথমিক চিকিৎসা ও জরুরি পরিষেবা, অন্তত একটি অ্যাম্বুলেন্স এবং একটি অগ্নিনির্বাপক গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য জায়গা রাখা হবে।