মুসলমানের ওপর প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরজ। নামাজের জন্য মুয়াজ্জিন প্রতিদিন ৫ বার আজান দেন। নামাজের জন্য মুমিন মুসলমান অজু করেন। আবার ইমামের সঙ্গে ফরজ নামাজ আদায় করেন। ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়া।
সুনিশ্চিত জান্নাত পেতে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবার জন্য সহজ ৩টি আমলের ঘোষণা দিয়েছেন। যে আমলের পুরস্কার শুধুই জান্নাত। সবার জন্য আমলগুলো একেবারেই সহজ। আমলগুলো কী?
প্রথম আমলটি অজুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। নামাজের জন্য প্রতিদিন পাঁচবার আজান দেওয়া হয়। দ্বিতীয় আমলটি আজানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। ঠিক তৃতীয় আমলটি ফজর নামাজের সালাম ফেরানোর পর আদায় করার কথা এসেছে হাদিসে।
এ তিনটি আমলের একটির সঙ্গে অপরটির অপূর্ব মিলও রয়েছে। মুমিন মুসলমান মনোযোগের সঙ্গে আজান শোনে, এর উত্তর দেয় এবং দোয়া করে। নামাজের জন্য অজু করে। ফরজ নামাজের পর সালাম ফিরিয়ে নিয়মিত আয়াতুল কুরসির আমল করে। এ তিনটি আমলের বিশেষ পুরস্কার হচ্ছে জান্নাত চিরস্থায়ী হওয়া। আমলগুলোর বিবরণ হলো-
১. অজুর পর কালেমা শাহাদাত পড়া
নামাজের জন্য অজু শর্ত। অজু ছাড়া নামাজ হবে না। আল্লাহ তাআলা বান্দাকে অজু করতে নির্দেশ করেছেন। কোরআনুল কারিমের অজুর ফরজ ঘোষণা করে আল্লাহ তাআলা বলেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا قُمۡتُمۡ اِلَی الصَّلٰوۃِ فَاغۡسِلُوۡا وُجُوۡهَکُمۡ وَ اَیۡدِیَکُمۡ اِلَی الۡمَرَافِقِ وَ امۡسَحُوۡا بِرُءُوۡسِکُمۡ وَ اَرۡجُلَکُمۡ اِلَی الۡکَعۡبَیۡنِ
’হে ঈমাদারগণ! যখন তোমার নামাজে দাঁড়াতে চাও, তাহলে (প্রথমে) তোমরা পুরো মুখমণ্ডল ধুয়ে নাও। উভয় হাত কনুইসহ ধুয়ে নাও। মাথা মাসেহ কর এবং উভয় পা টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে নাও।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৬)
হাদিসে অজু করার পর কালেমা শাহাদাত পাঠকারীর জন্য জান্নাতের ৮টি দরজা খোলা থাকার নির্দেশনা এসেছে এভাবে-
হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে কোনো মুসলিম ব্যক্তি উত্তমরূপে ওজু করার পর (কালেমা শাহাদাত) বলে-
أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
উচ্চারণ : আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু’
অর্থ : ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরিক নেই, তিনি একক এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, (হজরত) মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বান্দা ও রাসুল’- তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে। সে যে কোনো দরজা দিয়ে ইচ্ছা তাতে প্রবেশ করবে।’ (ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ)
২. আজানের উত্তর দেওয়া
নামাজের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মুয়াজ্জিন আজান দিয়ে থাকে। মুয়াজ্জিনের আজানের সময় মনোযোগসহ তা শোনা এবং উত্তর দেয়া ফরজে কেফায়া। সুতরাং মনোযোগসহকারে আজান শুনার সময় এর উত্তর দেয়া রয়েছে জান্নাতের ঘোষণা। হাদিসে এসেছে-
হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যদি মুয়াজ্জিনের-
> আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার-এর উত্তরে আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার বলে এবং
> আশহাদু আল্-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর উত্তরে আশহাদু আল্-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে এবং
> আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ এর উত্তরে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ বলে, এরপর
> হাইয়্যা আলাস্-সালাহ-এর উত্তরে যদি ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ বলে, তারপর
> হাইয়্যা আলাল-ফালাহ-এর উত্তরে যদি লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ বলে,
> এরপর যদি আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার এর উত্তরে আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার এবং
> লা-ইলাহা ইল্লল্লাহ-এর উত্তরে লা-ইলাহা ইল্লল্লাহ বলে তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (আবু দাউদ, মুসলিম)
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একবার আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম। তখন হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু দাঁড়িয়ে আজান দিলেন। হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন (আজান থেকে) থামলেন তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এর (হজরত বেলালের) মতো বলবে, সে বেহেশতে প্রবেশ করবে।’ (নাসাঈ, মেশকাত)
৩. ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়া
প্রতিদিনি পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর সুন্নাত আমল হচ্ছে, আয়াতুল কুরসি পড়া। হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়মিত এ আমলকারী ও জান্নাতের সঙ্গে পার্থক্য হবে শুধুই মৃত্যু। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়বে-
اللّهُ لاَ إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلاَ نَوْمٌ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَاء وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ وَلاَ يَؤُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ
উচ্চারণ- আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম। লা তাঅ খুযুহু সিনাতুঁও ওয়া লা নাওম। লাহু মা ফিস্ সামাওয়াতি ওয়া মা ফিল আরদ্বি। মাং জাল্লাজি ইয়াশফাউ ইংদাহু ইল্লা বি-ইজনিহি। ইয়ালামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়া মা খালফাহুম, ওয়া লা ইউহিতুনা বিশাইয়্যিম্ মিন ইলমিহি ইল্লা বিমা শাআ ওয়াসিআ কুরসিইয়্যুহুস্ সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বি, ওয়া লা ইয়াউদুহু হিফজুহুমা ওয়া হুওয়াল ‘আলিয়্যুল আজিম।’
ওই ব্যক্তির জন্য জান্নাতে প্রবেশ করা মৃত্যু ছাড়া আর কোনো কিছু বাধা থাকবে না।’ (বুখারি, নাসাঈ, তাবারানি)
মুমিন মুসলমান প্রতিদিন প্রত্যেক ওয়াক্তে আজান শুনে জবাব দেবে, অজু করে নামাজ পড়বে এবং হাদিসে ঘোষিত আমলগুলো যথাযথভাবে আদায় করবে। আর তাতে মিলবে সুনিশ্চিত জান্নাত।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নিয়মিত এ তিনটি আমল করার তাওফিক দান করুন। আমলগুলোর করার মাধ্যমে চিরস্থায়ী জান্নাতের মালিক হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।