রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (আরএনপিপি) পারমাণবিক জ্বালানি সেপ্টেম্বরে দেশে আসবে। রুশ রাষ্ট্রীয় পারমানবিক শক্তি করপোরেশন রোসাটমের মহাপরিচালক (ডিজি) অ্যালেক্সি লিখাচেভ এ তথ্য জানিয়েছেন। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে অ্যালেক্সি লিখাচেভ এ তথ্য জানান।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। প্রধানমন্ত্রী ও রোসাটমের ডিজির বৈঠকের বিষয়াদি লিখাচেভের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, আরএনপিপির কাজ শত বাধা অতিক্রম করে এগিয়েছে। এই কেন্দ্রের জন্য পরমাণু জ্বালানি সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে পৌঁছবে। ইহসানুল করিম বলেন, রোসাটম ডিজি প্রধানমন্ত্রীকে আরএনপিপি’র সার্বিক অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করাসহ প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনা করেন। তারা আরএনপিপি’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন নিয়েও কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী করোনা মহামারি এবং বৈশ্বিক সংকট সত্ত্বেও আরএনপিপি’র কাজ এগিয়ে নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি প্রযুক্তি ও আর্থিক সহায়তার জন্য রাশিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। মহান মুক্তিযুদ্ধে এবং যুদ্ধপরবর্তী বাংলাদেশ পুনর্গঠনে রাশিয়ার সমর্থন ও সহযোগিতার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা ভবিষ্যতেও রাশিয়ার সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন। এ সময়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, এম্বাসেডর এট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব এম. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ড. শহীদ হোসেন এবং রাশিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসান উপস্থিত ছিলেন।
দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় একক প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এতে খরচ হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দিচ্ছে ২২ হাজার ৫২ কোটি ৯১ লাখ ২৭ হাজার টাকা। আর রাশিয়া থেকে ঋণসহায়তা হিসেবে আসছে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। আগামী বছর প্রথম ইউনিট থেকে জাতীয় গ্রিডে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে চায় রূপপুর কর্তৃপক্ষ। একই বছর বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করার আশা করছে তারা। এ জন্য প্রকল্পের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। সব কিছু ঠিক-ঠাক থাকলে আগামী অক্টোবরের মধ্যেই প্রথম ইউনিটের নির্মাণ কাজ শেষ হতে পারে। সময়মতো জ্বালানি আমদানি ও স্থাপন সম্ভব হলে আগামী সেপ্টেম্বর পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে বলে এ তথ্য জানিয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
পারমাণবিক চুল্লিতে ইউরেনিয়াম (জ্বালানি) স্থাপন, প্রথম ইউনিটের ফিজিক্যাল স্টার্টআপ সম্পন্ন,গ্রিড সিঙ্গেক্রানাইজেশন, পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ সহ বিভিন্ন পর্যায়ের কাজ শেষ হলেই কমিশনিংয়ের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। প্রথম ইউনিটটি পুরোপুরি আন্তর্জাতিক পরমানু শক্তি সংস্থার গাইডলাইন্স মেনে ধাপে ধাপে মূল কমিশনিং পর্যায়ের কাজের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। গত ২ জুলাই পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ১ হাজার ১৩৭ দশমিক ৪৪৯ মেট্রিক টন মালামাল নিয়ে মোংলা বন্দরে পৌঁছেছে পানামার পতাকাবাহী জাহাজ এমভি লিবার্টি হারভেস্ট। বন্দরের ৭ নম্বর জেটিতে ভেড়ে জাহাজটি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে রাশিয়া সফরে আছে। সম্প্রতি দুই দেশের প্রতিনিধিদলের বৈঠকে ইউরেনিয়াম উৎপাদন প্রস্তুতি সনদ সই হয়। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষের একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। মস্কোর জানিয়েছে, সনদ সই হওয়ায় অক্টোবরের মধ্যেই বাংলাদেশে পারমাণবিক জ্বালানি চলে আসবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব প্রথম ১৯৬১ সালে গৃহীত হয় এবং ১৯৬৩ সালে পাবনায় পদ্মা নদীর তীরে রূপপুর গ্রামে ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার রাশিয়ার সহযোগিতায় ১০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা অনুমোদন করে। এর আগে ২০২১ সালের অক্টোবরে রূপপুরে ইউনিট-১–এর ভৌত কাঠামোর ভেতরে চুল্লিপাত্র স্থাপনের মধ্য দিয়ে এই ইউনিটের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে বলা যায়। এটি স্থাপনে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থার (আইইএ) মান অনুসরণ করতে হয়েছে। পরে একটি রিঅ্যাক্টরের পরিবর্তে দুটি ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার রিঅ্যাক্টরের সমন্বয়ে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়, যা বর্তমানে নির্মাণাধীন।