বঙ্গোপসাগরের মহীসোপান সীমা সংক্রান্ত বর্তমান অবস্থার কথা জাতিসংঘে জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১ মার্চ) জাতিসংঘ সদরদপ্তরে ২১ সদস্যের কমিশন অন দ্য লিমিটস অফ দ্য কন্টিনেন্টাল শেল্ফ (সিএলসিএস)-এর ৫৪তম অধিবেশনে বিস্তারিত হালনাগাদ তথ্যাদি উপস্থাপন করা হয়। এসময় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব ও প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোঃ খুরশেদ আলম এবং এ সংক্রান্ত কমিটির অন্যান্য কারিগরি বিশেষজ্ঞগণ। ২২ অক্টোবর ২০২০ তারিখে সিএলসিএস-এ আনুষ্ঠানকিভাবে বাংলাদেশের মহীসোপানের সংশোধিত তথ্য দাখিলের পর এ সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্যাদির উপস্থাপন করা হলো। মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে বাংলাদেশের মহীসোপান সীমা সংক্রান্ত দলিলাদি ২০১১ সালের ফ্রেবুয়ারি মাসে প্রথমবারের মতো সিএলসিএস-এ জমা দেয়া। তবে, মিয়ানমার ও ভারতের সাথে অমীমাংসিত সমুদ্রসীমাজনিত বিরোধের কারণে, কমিশন বাংলাদেশ দাখিলকৃত দলিলাদি সেসময় পরীক্ষা করতে পারেনি। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বিচারিক সংস্থার মাধ্যমে মিয়ানমার ও ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা বিরোধের সমাধান করে।
আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের রায়ের উপর ভিত্তি করে, বাংলাদেশ সরকার ২০১১ সালের দাখিল পূনরায় পর্যালোচনা করে ২২ অক্টোবর ২০২০ তারিখে সিএলসিএস এর কাছে বাংলাদেশের মহীসোপান সীমা সংক্রান্ত দলিলাদির নতুন সংস্করণ পেশ করে। এই সংশোধিত দাখিলে, ট্রাইব্যুনাল নির্ধারিত বঙ্গোপসাগরের মহীসোপানের নতুন সীমারেখা অনুসরণ করা হয়।
আজকের এই উপস্থাপনার মাধ্যমে, বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানে তার অধিকার রক্ষা ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত তথ্য সরবরাহ করেছে। এরপর সিএলসিএস এর নিয়ম অনুযায়ী, এ উদ্দেশ্যে গঠিত একটি সাব-কমিশন বাংলাদেশ উপস্থাপিত দলিলাদি পরীক্ষা করে বাংলাদেশের মালিকানার বিষয়ে সুপারিশ প্রদান করবে। এরফলে বাংলাদেশ ঐ এলাকায় প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান শুরু করতে পারবে।
অনুষ্ঠানটিতে প্রদত্ত বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ যেখানে সম্পদের অভাব রয়েছে। বাংলাদেশের মহীসোপান সীমার বিষয়ে জাতিসংঘের চুড়ান্ত সুপারিশ উক্ত বিশাল সমুদ্র এলাকার সকল প্রাণযুক্ত ও প্রাণহীন প্রাকৃতিক সম্পদের অন্বেষণ, সংরক্ষণ ও উন্নয়নে একটি ভিত্তি প্রদান করবে যা আমাদের টেকসই উন্নয়ন, শক্তির চাহিদা ও আমাদের জনগণের সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখবে”।
বাংলাদেশ সরকার এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই দলিলাদির উপস্থাপন নিয়ে কাজ করছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সমন্বয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনী, পেট্রোবাংলা, বাপেক্স, জিওলজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশ, স্পারসো ও বিআইডব্লিউটিএ এর একটি বিশেষজ্ঞ দল এই দাখিল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। এছাড়া কমনওয়েলথ সচিবালয় এবং জাতিসংঘের ট্রাস্ট ফান্ড থেকে বাংলাদেশ এ বিষয়ে আইনি ও প্রযুক্তিগত সহায়তা পেয়েছে।
ড. মোমেন আরও বলেন, 'মহীসোপান সীমা সংক্রান্ত এই উপস্থাপন আমাদের দেশের জন্য একটি বড় অর্জন, বিশেষ করে এমন একটি সময়ে আমরা এটি সম্পন্ন করতে পারলাম যখন আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশ হওয়ার পথে সামনে এগিয়ে চলেছি, যেটি আমাদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন। আগামী দিনগুলোতে এই মহীসোপান এলাকার প্রাণযুক্ত ও প্রাণহীন প্রাকৃতিক সম্পদ-প্রাচুর্য উন্মোচণে আমাদের পূর্ণ সামর্থ্যের ব্যবহার এ পথচলায় সবচেয়ে বড় পাথেয় হয়ে থাকবে'।