অসুস্থ হলে কি মানুষের গুনাহ ক্ষমা হয়?


ধর্ম ডেস্ক: , আপডেট করা হয়েছে : 02-03-2022

অসুস্থ হলে কি মানুষের গুনাহ ক্ষমা হয়?

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমাদের কারো অসুখ হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোগীর শরীরে তাঁর ডান হাত বুলিয়ে দিয়ে বলতেন- হে মানুষের রব! এ ব্যক্তির রোগ দূর করে দাও। তাকে নিরাময় করে দাও৷ নিরাময় করার মালিক আপনিই। আপনার নিরাময় ছাড়া আর কোনো নিরাময় নেই। এমন নিরাময় যা কোনো রোগকে বাকি রাখে না। (বুখারি, মুসলিম, ইবনু মাজাহ, মিশকাত, মুসান্নাফে ইবনু আবি শায়বা, মুসনাদে আহমাদ, নাসাঈ, ইবনু হিব্বান, বায়হাকি)

রোগীর সুস্থতায় এ ছিলো নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমল। এটি শুধু নবিজীর ব্যক্তিগত আমলই নয়, বরং উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য মহান শিক্ষা। যে কেউ অসুস্থ হলে তার কাছে বসে শরীরে হাত বুলিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি এ দোয়া করা-

أَذْهِبِ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ وَاشْفِ أَنْتَ الشَّافِىْ لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءٌ لَا يُغَادِرُ سَقَمًا

উচ্চারণ : ‘আজহিবিল বাসা রাব্বান্নাসি ওয়াশফি আংতাশ-শাফি লা শিফাআ ইল্লা শিফাউকা শিফাউন লা ইউগাদিরু সাকামা।’

অর্থ : ‘হে মানুষের রব! এ ব্যক্তির রোগ দূর করে দাও। তাকে নিরাময় করে দাও৷ নিরাময় করার মালিক আপনিই। আপনার নিরাময় ছাড়া আর কোনো নিরাময় নেই। এমন নিরাময় যা কোনো রোগকে বাকি রাখে না।’

অসুস্থ হলে মানুষ কী করবেন?

কেউ অসুস্থ হলে প্রথমত ধৈর্যধারণ করা। কারণ অসুস্থতায় ধৈর্যধারণ করলে মহান আল্লাহ মানুষের বিগত জীবনের গুনাহ ক্ষমা করে দেন। আর উল্লেখিত দোয়ার মাধ্যমে সুস্থতার চেষ্টা করা। হাদিসের আমল করলেই মহান আল্লাহ অসুস্থতা দূর করে দেবেন। আর অসুস্থতায় ধৈর্যধারণে মিলবে গুনাহ থেকে মুক্তি। একাদিস হাদিসে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিষয়গুলো নিশ্চিত করেছেন। তাহলো-

১. হজরত উম্মুল আলা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন, ‘আমি অসুস্থ হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে দেখতে এলেন। তিনি বললেন- সুসংবাদ গ্রহণ করো; হে আলার মা! আগুন যেভাবে সোনা-রূপার ময়লা দূর করে দেয় তদ্রুপ কোনো মুসলিমের রোগের দ্বারা মহান আল্লাহ তার গুনাহসমূহ দূর করে দেন।’ (আবু দাউদ)

২. হজরত মুহাম্মাদ ইবনু খালিদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তার পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণনা করেছেন, তাঁর দাদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহচর্য পেয়েছেন। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘কোনো ব্যক্তির জন্য বিনাশ্রমে (বিনাকষ্টে) আল্লাহর পক্ষ থেকে মর্যাদার আসন নির্ধারিত হলে, আল্লাহ তাআলা তার দেহ, সম্পদ অথবা সন্তানকে বিপদগ্রস্ত করেন। এরপর সে তাতে ধৈর্য ধারণ করলে শেষ পর্যন্ত বরকতময় মহান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত উক্ত মর্যাদার স্তরে উপনীত হন।’ (আবু দাউদ)

৩. আল-খুদর গোত্রের তীরন্দাজ হজরত আমির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আমি আমাদের শহরেই ছিলাম। এমন সময় আমরা কিছু পতাকা উড্ডীন দেখতে পেয়ে লোকদের জিজ্ঞাসা করি, এসব কি? তারা বললো, এগুলো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পতাকা। আমি তাঁর কাছে আসলাম। তখন তিনি একটি গাছের নীচে তাঁর জন্য বিছানো একটি কম্বলের উপর বসা ছিলেন। তাঁর চারপাশে তাঁর সাহাবাগণও বসা ছিলেন। আমি তাদের কাছে বসলাম।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোগ সম্পর্কে আলোচনা করলেন। তিনি বললেন, ‘মুমিন ব্যক্তি যখন অসুস্থ হয়, এরপর আল্লাহ তাকে রোগমুক্ত করে দেন। এটা তার বিগত জীবনের গুনাহের জন্য কাফফারা স্বরূপ এবং তার ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য শিক্ষণীয় ঘটনা।

পক্ষান্তরে কোনো মুনাফিক অসুস্থ হওয়ার পর তাকে তা থেকে মুক্তি দেওয়া হলে সে এমন উটের মতো যাকে তার মালিক শক্ত করে বেঁধে আবার ছেড়ে দিলো। কিন্তু সে কিছুই বুঝলো না, তার মালিক তাকে কেনই বা শক্ত করে বাঁধলো আর কেনই বা ছেড়ে দিলো। তাঁর আশপাশে বসা লোকদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি বললো- হে আল্লাহর রাসুল! কিসের অসুস্থতা? আল্লাহর শপথ! আমি তো কখনো অসুস্থ হইনি? নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তুমি আমাদের এখান থেকে উঠে যাও, কারণ তুমি আমাদের দলভুক্ত নও।’

বর্ণনাকারী বলেন, ‘আমরা তাঁর কাছে বসাবস্থায় এক ব্যক্তি এলো। তার গায়ে কম্বল জড়ানো এবং তার হাতে কিছু একটা ছিলো। সে বললো, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আপনাকে দেখতে পেয়েই আপনার কাছে উপস্থিত হলাম। গাছপালার মধ্য দিয়ে পথ অতিক্রম করার সময় আমি পাখির বাচ্চার আওয়াজ শুনতে পাই। আমি সেগুলো ধরে আমার কম্বলের মধ্যে রাখি। বাচ্চাগুলোর মা এসে আমার উপর চক্কর দিতে লাগলো। আমি বাচ্চাগুলোকে তাদের মায়ের জন্য কম্বলের মধ্য থেকে বের করে দিলাম। পাখিটি এসে বাচ্চাগুলোর সাথে মিলিত হলো। আমি সবগুলোকে আমার কম্বল দিয়ে লেপটিয়ে ধরে ফেললাম। এখন সবগুলো পাখি আমার কাছে আছে।

তিনি বললেন, সেগুলো বের করে রাখো। সুতরাং আমি বের করলাম। কিন্তু মা পাখিটা বাচ্চাদের রেখে যেতে চাইলো না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবাদের বললেন, বাচ্চাদের প্রতি মা পাখির মায়ায় তোমরা কি আশ্চর্যবোধ করছো না! তারা বললেন, ‘হ্যাঁ’, হে আল্লাহ রাসুল!

তিনি বললেন, ‘সেই সত্তার শপথ! যিনি আমাকে সত্য দীনসহ পাঠিয়েছেন। বাচ্চাদের প্রতি মা পাখিটার যে মায়া রয়েছে, আল্লাহ অবশ্যই তাঁর বান্দাদের প্রতি আরো অধিক মমতাময়ী। তুমি যেখান থেকে বাচ্চাগুলোকে ধরে এনেছো মাসহ তাদেরকে সেখানে রেখে আসো। সুতরাং সে পাখিগুলো সেখানে রেখে এলো।’ (আবু দাউদ, মেশকাত)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, অসুস্থতায় মহান আল্লাহর কাছে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো পদ্ধতি ও আমলের মাধ্যমে সুস্থতার চেষ্টা করা। অসুস্থতায় ধৈর্যধারণ করার মাধ্যমে গুনাহমুক্ত জীবন গড়ার চেষ্টায় নিজেদের নিয়োজিত রাখা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নবিজীর সেখানো আমলে জীবন গড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

রাজশাহীর সময় / জি আর


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]