মহররম মাসের মর্যাদা ও ফজিলত


ধর্ম ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 23-07-2023

মহররম মাসের মর্যাদা ও ফজিলত

আল্লাহর গণনায় মাস ১২টি। এ ১২ মাসের মধ্যে সম্মানিত হারাম মাস ৪টি। যে মাসগুলোতে যাবতীয় যুদ্ধ-বিগ্রহ ও রক্তপাতকে মহান আল্লাহ হারাম ঘোষণা করেছেন। তন্মধ্যে মহররম একটি। এটি হিজরি বছরের প্রথম মাস। যা হজরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রস্তাবনায় হিজরি বছরের প্রথম মাস হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়। এ মাস সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘নিশ্চয় আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে আল্লাহর বিধান ও গননায় মাস বারটি। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না। আর মুশরিকদের সঙ্গে তোমরা যুদ্ধ করো সমবেতভাবে, যেমন তারাও তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে যাচ্ছে সমবেতভাবে। আর মনে রেখো, আল্লাহ মুত্তাকীদের সঙ্গে রয়েছেন।’ (সুরা তাওবাহ: আয়াত ৩৬)

কোরআনে ঘোষিত সম্মানিত চার নিষিদ্ধ মাস কোনটি? এ সম্পর্কে হাদিসে সুস্পষ্ট বর্ণনা এসেছে-

হজরত আবু বাকরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তিনটি হলো ধারাবাহিক মাস- জিলকদ, জিলহজ ও মহররম। আর একটি হলো রজব মাস। জমাদিউস সানি ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী মাস অর্থাৎ রমজানের আগের মাসের আগের মাস।’ (বুখারি)

আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে এ চারটি মাসকে সম্মানিত বলে ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ যে মাসগুলোকে সম্মানিত মাস বলে অভিহিত করেছেন, সে মাসগুলোকে মর্যাদা দেয়া মুমিন মুসলমানের জন্য অপরিহার্য। এর মধ্যে অন্যতম দুটি নির্দেশ হলো-

মহররমকে মর্যাদা দেওয়া

আল্লাহ তাআলার কাছে যে মাসগুলো সম্মানিত, সে মাসগুলোকে সম্মান দেখানো ও মর্যাদা দেওয়া মুমিনের প্রথম কাজ। মহররমসহ এ মাসগুলোতে আল্লাহর দেওয়া সম্মান ও মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখা প্রত্যেক ঈমানদারের প্রথম করণীয়।

কিন্তু মুমিন মুসলমানের অনেকেই জানেন না যে, ইসলামের সম্মানিত ও মর্যাদার মাস কোনগুলো। মানুষ যখন জানবে যে এ মাসগুলো সম্মানিত। তখন মানুষের মধ্যে একটি ধারণা তৈরি হবে যে, আসলেই এটি মহররম মাস। এ মাসের যাবতীয় পাপাচার নিষিদ্ধ। তাই সস্মানিত মাসগুলো সম্পর্কে যেমন জানা জরুরি। তেমনি হারাম মাসের ইবাদত ও আমল সম্পর্কে ধারণা নেয়া জরুরি।

পাপাচারমুক্ত থাকার মাস

আল্লাহর দেওয়া সম্মান ও মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে মহররমসহ সম্মানিত ৪ মাসের দুনিয়ার যাবতীয় পাপাচার থেকে মুক্ত থাকা মুমিন মুসলমানের দ্বিতীয় কাজ। তবেই জীবনের বাকি সময়গুলো এ মাসের অনুসরণ ও অনুকরণে গুনাহমক্ত থাকা সহজ হবে। এ মাসগুলোর করণীয় সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-

‘এ (মাসের) মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি কোনোরূপ অত্যাচার করো না।’ (সুরা তাওবাহ : আয়াত ৩৬)

আয়াতের ব্যাখ্যা তাফসির বিশারদগণ বলেছেন, অত্যাচার বলতে এখানে যে কোনো ধরণের পাপাচার করাকে বুঝানো হয়েছে। তাই এ মাসের পাপাচার না করাই কোরআনে নির্দেশিত সেরা অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় আমল।

এমনিতে অন্যান্য মাসে গোনাহের কাজ করা মুমিন মুসলমানের জন্য জঘন্য কাজ। আর সম্মানিত চার মাস জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব মাসের পাপাচার করা দ্বিগুণ মারাত্মক অন্যায় ও সরাসরি মহান আল্লাহর নির্দেশের লঙ্ঘন।

সওয়াবের প্রতিযোগিতার মাস

সওয়াব ও ভালো কাজের প্রতিযোগিতা করা এ মাসের তৃতীয় কাজ। ইসলামিক স্কলারদের মতে, সম্মানিত ৪ মাসের মধ্যে মহররম মাসই শ্রেষ্ঠ। তাই এ মহররম মাসে গুনাহ ছেড়ে দেওয়ার পাশাপাশি যেসব কাজে সওয়াব ও উপকারিতা রয়েছ, সেসব কাজের অংশগ্রহণ বাড়িয়ে দেওয়া খুবই জরুরি। আবার মর্যাদার বিচারে রমজানের পরেই এ মহররম মাসের স্থান। কেননা মহররম শব্দের অর্থই হলো- সম্মানিত।

মহররমকে সম্মান ও মর্যাদা দেখানোর অন্যতম কারণ

মাসটির নাম হলো ’মহররম’। এর অর্থ : সম্মানিত। হাদিসেও এ মাসটিকে আল্লাহর মাস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। হাদিসে এসেছে-

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এটি (মহররম) শাহরুল্লাহ তথা আল্লাহর মাস।’ (মুসলিম)

সুতরাং জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব মাস এলেই নড়ে চড়ে বসে মুমিন মুসলমান। আল্লাহর নিদের্শ পালনে সতর্কতা অবলম্বন করে। যাবতীয় অন্যায় থেকে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে। যাবতীয় পাপাচার থেকে নিজেদের বিরত রাখে। কথা ও কাজে, চালচলনে, আমল-ইবাদতে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করাই মুমিনের জন্য এ মাসের অন্যতম দাবি। এ মাসগুলোর অভ্যাসই মুমিন মুসলমানকে বছরের বাকি মাসগুলো সঠিক পথে চলার পথ দেখাবে।

উল্লেখ্য ইতিমধ্যে ১৪৪৪ হিজরি শেষ। ২০ জুলাই ২০২৩ শুরু হচ্ছে ১৪৪৫ হিজরির মহররম মাস। গেল হিজরি বছরের শেষ দুই মাস জিলকদ ও জিলহজ ছিল মুমিন মুসলমানের জন্য সম্মানিত মাস। আর এ সম্মানিত মাসের মাধ্যমেই নতুন বছর শুরু হচ্ছে।

মুমিন মুসলমানের উচিত, নতুন হিজরি বছরের প্রথম মাস মহররমে দুনিয়ার যাবতীয় অনাচার থেকে বিরত থাকা। মাসটির সম্মান ও মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখা। কোরআন-সুন্নাহর ওপর যথাযথ আমল করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সম্মানিত মাস মহররমে যাবতীয় পাপাচার থেকে হেফাজত করুন। মহররম জুড়ে নামাজ, রোজা ও ভালো কাজে অংশগ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। এ মাসজুড়ে ভালো কাজের মাধ্যমে সব মহামারি ও বিপদ থেকে বিশ্ববাসীকে মুক্ত হওয়ার তাওফিক দিন। আমিন।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]