আল্লাহর স্মরণ থেকে বিরত থাকার শাস্তি


ধর্ম ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 23-07-2023

আল্লাহর স্মরণ থেকে বিরত থাকার শাস্তি

জিকির না করার শাস্তি মারাত্মক। জিকির না করা ব্যক্তিদের আল্লাহ তাআলা দুই ধরণের শাস্তি দেবেন। যে/যারা জিকির থেকে নিজেদের বিরত রাখবে, আল্লাহর জিকির করবে না; আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও পরকালে তাদের দুই ধরণের শাস্তি দেবেন। যে কারণে বেশি বেশি জিকির করা জরুরি। কিন্তু জিকির থেকে বিরত থাকা ব্যক্তিদের শাস্তি কী হবে?

আল্লাহ তাআলা সুরা ত্বহার ১২০নং আয়াতে এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। দুনিয়া ও পরকালের শান্তির বর্ণনা দিয়েছেন। জিকির না করার পরিণতি তুলে ধরে আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَ مَنۡ اَعۡرَضَ عَنۡ ذِکۡرِیۡ فَاِنَّ لَهٗ مَعِیۡشَۃً ضَنۡکًا وَّ نَحۡشُرُهٗ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ اَعۡمٰی

‘আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে আর আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করবো।’ (সুরা ত্বহা: আয়াত ১২০)

এ আয়াতে আল্লাহর স্মরণ বলতে কোরআনের সব বিধি-বিধানকে বোঝানো হয়েছে। যারা কোরআনের আনুগত্য করবে না; তারাই দুনিয়া ও পরকালে শাস্তি ভোগ করবে। যারা কোরআন ছাড়া অন্য কোনো বিধান মানবে পরিণামে তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে। (ইবনেকাসির)

সংকীর্ণ জীবন কী?

কোরআনের ভাষ্যে ওই সব লোকদের জন্য সংকীর্ণ ও তিক্ত জীবনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে; যারা আল্লাহর কোরআন ও তাঁর রাসুলের প্রদর্শিত পথে চলতে অপারগ হয়। কিন্তু তাদের সে সংকীর্ণ ও তিক্ত জীবন কোথায় হবে তা নির্ধারণে একাধিক মত রয়েছে-

১. তাদের দুনিয়ার জীবন হবে সংকীর্ণ। তাদের কাছ থেকে অল্পে তুষ্টির গুণ ছিনিয়ে নেয়া হবে এবং সাংসারিক লোভ-লালসা বাড়িয়ে দেওয়া হবে। যা তাদের জীবনকে অতিষ্ট করে তুলবে। ফলে তাদের কাছে যত অর্থ-সম্পদই সঞ্চিত হোক না কেন, আন্তরিক শান্তি তাদের ভাগ্যে জুটবে না। সদা-সর্বদা সম্পদ বৃদ্ধি করার চিন্তা এবং ক্ষতির আশঙ্কা তাদেরকে অস্থির করে তুলবে। কেননা, সুখ-শান্তি অন্তরের স্থিরতা ও নিশ্চিন্ততার মাধ্যমেই অর্জিত হয়; শুধু প্রাচুর্য্যে নয়।’ (ইবন কাসির, ফাতহুল কাদির)

২. অনেক তাফসিরকারের মতে সংকীর্ণ জীবন বলতে এখানে কবরের জীবনকে বোঝানো হয়েছে।’ (ইবনে কাসির) অর্থাৎ তাদের কবর বিভিন্ন প্রকার শাস্তির মাধ্যমে তাদের উপর সংকীর্ণ হয়ে যাবে। এতে করে কবরে তাদের জীবন দুর্বিষহ হবে। তাদের বাসস্থান কবর তাদেরকে এমনভাবে চাপ দেবে যে, তাদের পাঁজর ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে। এক হাদিসে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং (مَعِيشَةً ضَنْكًا) এর তাফসিরে বলেছেন যে, এখানে কবর জগত ও সেখানকার আজাব বোঝানো হয়েছে।’ (মুসতাদরাকে হাকেম, ইবনে হিব্বান)

তাছাড়াও বিভিন্ন বিশুদ্ধ হাদিসে কবরের জিন্দেগীর বিভিন্ন শাস্তির যে বর্ণনা এসেছে, তা থেকে বুঝা যায় যে, যারা আল্লাহ, কোরআন ও রাসুলের প্রদর্শিত দ্বীন থেকে বিমুখ হবে, কবরে তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘মুমিন তার কবরে সবুজ প্রশস্ত উদ্যানে অবস্থান করবে। আর তার কবরকে ৭০ গজ প্রশস্ত করা হবে। পূর্নিমার চাঁদের আলোর মত তার কবরকে আলোকিত করা হবে। তোমরা কি জান আল্লাহর আয়াত (তাদের জন্য রয়েছে সংকীর্ণ জীবন) কাদের সম্পর্কে নাজিল হয়েছে? তোমরা কি জানো সংকীর্ণ জীবন কী? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভালো জানেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তাহলো- কবরে অস্বীকারকারীর শাস্তি। যার হাতে আমার জীবন, তার শপথ করে বলছি- তাকে ন্যস্ত করা হবে ৯৯টি বিষাক্ত তিন্নিন সাপের কাছে। তোমরা কি জানো তিন্নিন কী? তিন্নিন হলো- ৯৯টি সাপ। প্ৰত্যেকটি সাপের রয়েছে ৭টি মাথা। যেগুলো দিয়ে সে কাফেরের শরীরে কেয়ামত পর্যন্ত ছোবল মারতে থাকবে, কামড়াতে ও ছিড়তে থাকবে।’ (ইবনে হিব্বান, দারেমি, মুসনাদে আহমাদ)

অন্ধত্বের জীবন

যারা নিজেদের আল্লাহর স্মরণ থেকে বিরত রাখে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় তাদের হাশর করা হবে। এখানে অন্ধ অবস্থার কয়েকটি অর্থ হতে পারে-

১. বাস্তবিকই সে অন্ধ হয়ে উঠবে।

২. সে জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাবে না।

২. সে তার পক্ষে পেশ করার মতো কোনো যুক্তি থেকে অন্ধ হয়ে যাবে। কোনো প্রকার প্রমাণাদি পেশ করা থেকে অন্ধ হয়ে থাকবে।’ (ইবনে কাসির, ফাতহুল কাদির)

৪. জ্ঞান থেকে বঞ্চিত অবস্থায়। অর্থাৎ কেয়ামতের দিন এমন কোন প্রমাণ তার মাথায় আসবে না, যা পেশ করে সে আজাব হতে নিজেকে বাঁচাতে পারে।

তখন তার পরবর্তী আয়াতের অর্থ হবে- সে বলবে, হে আমার রব! আমাকে কেন আমার যাবতীয় যুক্তিহীন অবস্থায় হাশর করেছেন? আল্লাহ উত্তরে বলবেন, অনুরূপভাবে তোমার কাছে আমার নিদর্শনসমূহ এসেছিল, কিন্তু তুমি সেগুলো ত্যাগ করে ভুলে বসেছিলে, তাই আজকের দিনেও তোমাকে যুক্তি-প্রমাণহীন অবস্থায় অন্ধ করে ত্যাগ করা হবে, ভুলে যাওয়া হবে। কারণ এটা তো তোমারই কাজের যথোপযুক্ত ফল।’ (ইবসে কাসির)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, সব সময় মহান রবের সব বিধিবিধান মেনে চলা। বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করা। দুনিয়ার প্রতিটি কাজে মহান রবের নির্দেশ মতে জীবন পরিচালনা করা। তবেই দুনিয়ার জীবনের সংকীর্ণতা এবং পরকালের অন্ধ হয়ে ওঠা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়ায় মহান রবের বিধিবিধান মেনে জীবন গঠনের তাওফিক দান করুন। বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করার তাওফিক দান করুন। কোরআনের ঘোষিত শাস্তি দুটি থেকে হেফাজত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]