প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে তৃণমূল পর্যায়ের অফিস পর্যন্ত জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, যদি আমরা কাজের প্রতি আন্তরিকতা, আত্মসম্মানবোধ, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ও দুর্নীতি থেকে দূরে থাকতে পারি তাহলে যে কোনো কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে, এমনকি অসম্ভবকেও সম্ভব করতে পারি। আজ আমাদের বাংলাদেশ এটা প্রমাণ করেছে।
বুধবার প্রধানমন্ত্রী তাঁর কার্যালয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক পারফরম্যান্স চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রদত্ত বক্তব্যে সরকারের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে উত্তরসূরিদের প্রস্তুত করতে পদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মন্ত্রণালয়গুলো তাদের অন্যান্য অফিসের সঙ্গে এপিএ স্বাক্ষর করবে-যাতে (সরকারি অফিসগুলোতে) তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত যোগাযোগ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায়। আমরা যদি এইভাবে কাজ করতে পারি, তাহলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে পারব।
মন্ত্রণালয় ও বিভাগ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে এপিএ স্বাক্ষর করেছে। প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের কাছ থেকে এপিএ গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে এপিএ বাস্তবায়ন এবং রেন্ডারিং পরিষেবায় তাদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের জন্য ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএ অ্যাওয়ার্ড এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরের সরকারি অফিস এবং কর্মকর্তাদের মধ্যে শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান করা হয়।
সরকার প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট উভয় ধরনের দুর্যোগ কাটিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি মানবসৃষ্ট দুর্যোগ আসতে পারে। আমরা সব ধরনের দুর্যোগ কাটিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। আমি এটা বিশ্বাস করি। সকলকে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে ও এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রাখতে বলেন যাতে বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে খাদ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অন্যের ওপর নির্ভর করতে না হয়।
অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। এ ছাড়াও পরিকল্পনা বিভাগের সচিব সত্যজিৎ কর্মকার এবং জনপ্রশাসন সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। সত্যজিৎ কর্মকার ২০২২-২৩ সালের শুদ্ধাচার পুরস্কার পেয়েছেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০২১-২০২২ এর জন্য এপিএ বাস্তবায়নে প্রথম পুরস্কার এবং বিদ্যুৎ বিভাগ এবং কৃষি মন্ত্রণালয় যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে। এপিএ বাস্তবায়নে চতুর্থ থেকে দশম স্থান অর্জনকারী মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো হলো- অর্থ বিভাগ, আইসিটি বিভাগ, আইএমইডি, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ।
বায়ুচালিত বিদ্যুতে বিনিয়োগ করবে ডেনমার্ক ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত উইনি এস্ট্রাপ পিটারসেন। ডেনমার্ক বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলে বায়ুচালিত শক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে এক দশমিক তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে বলে জানান উইনি এস্ট্রাপ।
বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সাক্ষাৎকালে এ কথা বলেন তিনি। সাক্ষাতের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
ইহসানুল করিম জানান, শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতের উন্নয়নে বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো থেকে সহযোগিতা প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে বলেন, এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ দরকার। এ সময় দেশের গণতন্ত্র ও নারী উন্নয়নে তাঁর সরকারের নানা কার্যক্রম তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
আলোচনাকালে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলে বায়ুচালিত শক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে এক দশমিক তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে বলে জানান উইনি এস্ট্রাপ। এ ছাড়া ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত সারা বিশ্বে আইসিটি খাতে তার দেশকে ষষ্ঠ বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে উল্লেখ করলে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকেও এ খাতে দ্রুত বর্ধনশীল দেশ হিসেবে তুলে ধরেন।
বাংলাদেশ ও ডেনমার্কের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা সম্প্রসারণ করা যেতে পারে বলে জানান বিদায়ী রাষ্ট্রদূত। পিটারসেন বলেন, দুই দেশ মানব উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে পারে। আমরা সহযোগিতার মাধ্যমে অনেককিছু অর্জন করেছি। তিনি উন্নয়ন অংশীদারিত্বের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে কিছু বই উপহার দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।