রাজশাহীতে ২ খুনের ঘটনায় ভারতের নাগরিকসহ গ্রেফতার ৪


ইব্রাহীম হোসেন সম্রাট , আপডেট করা হয়েছে : 19-07-2023

রাজশাহীতে ২ খুনের ঘটনায় ভারতের নাগরিকসহ গ্রেফতার ৪

রাজশাহী চর মাজারদিয়াড়ে কৃষক আবু সাঈদ (৩৯) নিহতর ঘটনায় ১৩ জনকে ও ৫ জন অজ্ঞত আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে নিহত কৃষক আবু সাঈদের স্ত্রী বিথী বেগম। বুধবার রাত ১০ টার দিকে আরএমপি দামকুড়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান অফিসার ইনচার্জ মশিউর রহমান।

মামলার পরেই পুলিশ রাতে চর মাজারদিয়াড়ে অভিযান চালিয়ে ২ আসামীকে গ্রেফতার করেছে।  বুধবার (১৯ জুলাই) সকালে সাঈদ হত্যা কান্ডের সাথে জড়িতো থাকা এক ভারতীয় নাগরিক চর থেকে রাজশাহী শহরে পালিয়ে আসার সময় তাকে স্থানিয় জনতা আটক করে দামকুড়া থানা পুলিশে দিয়েছে।

গ্রেফতারকৃতরা হলো, সুজন দামকুড়া থানাধীন চরমাজারদিয়াড় এলাকার আজিমুলের ছেলে ও সাহেব আলী একই থানাধীন আসু মন্ডলের ছেলে এবং ভারতীয় নাগরিক মইদুল ইসলাম। মইদুল ভারতে ২ হত্যা মামলার পলাতক অসামী এবং সাঈদকে হত্যা কান্ডের অস্ত্র যোগান দিয়েছে এবং ঘটনা স্থলে উপস্থিত ছিলেন বলে দাবি করেন নিহতর পরিবার।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, আরএমপি দামকুড়া থানার চর মাজারদিয়াড় মধ্যপাড়া গ্রামের আমির হোসেন চৌকিদারের ছেলে আবু সাঈদকে র্দীঘদিন যাবত ধরে মাদক কারবারি মৃত সোবহানের ছেলে সাজেমুলের স্ত্রীর সাথে পরোকিয়া সম্পর্ক রয়েছে বলে সন্ধেহ করে আসছে। এ নিয়ে সাজেমুল তার স্ত্রীর সাথে পরোকিয়া রয়েছে বলে বিভিন্ন সময় আবু সাঈদকে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল। এছাড়াও এলাকার কিছু মাদক কারবারিদের সাথে বিরোধ চলছিলো সাঈদের।

মঙ্গলবার রাত ৮ টার দিকে চর মাজারদিয়াড় মধ্যপাড়া গ্রামে সাঈদের বাড়ি থেকে তার বন্ধু মোস্তফাকে মটোরসাইকেলে করে হাড়ুপাড়া গ্রামে তার বন্ধুর বাড়িতে রাখতে যায়। তার বন্ধুকে বাড়িতে রেখে সাঈদ মটোরসাইকেল নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। এসময় সাঈদ বাইক নিয়ে চর মাজারদিয়াড় হাড়ুপাড়া ব্রিজের কাছে রাত ৯ টার দিকে পৌছালে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে মাদক সিন্ডিকেটের সদস্যরা হাসুয়া, চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্র নিয়ে চারিদিকে ঘিরে ফেলে সাঈদকে। এসময় চরখানপুরের শাজাহানের ছেলে জামালের নির্দেশে প্রথমে হাসুয়া দিয়ে মৃত সোবহানের ছেলে সাজেমুল সাঈদের মাথায় আঘাত করে এবং পায়ে গুলি করলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সাঈদ।

এসময় মৃত সোবহানের ছেলে ইব্রাহিম, মহিউদ্দিনের ছেলে এনামুল, সাহেব আলীর ছেলে হোসাইন ও জাহিদুল, রমজানের ছেলে রাজীব, আলেফের ছেলে আলমগীর, কামাল মোল্লার ছেলে কাবিল ও শামসুল, নবাবের ছেলে হুমায়ন, চর মাজারদিয়াড় স্কুলপাড়া গ্রামের রাজ্জাক ঘোষের ছেলে শাহিন, আজিমুলের ছেলে সুজন, চরখানপুরের জামালসহ অজ্ঞত ৫ থেকে ৬ জন সাঈদকে এলোপাতাড়ি ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে মৃত ভেবে ফেলে রেখে ঘটনা স্থল থেকে দ্রুত পালিয়ে যায়। স্থানিয়রা সাঈদের পরিবারকে ফোন করে বিষয়টি জানালে তার পরিবারের লোকজন দ্রুত ঘটনা স্থলে গিয়ে গুরতর জখম হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় সাঈদকে উদ্ধার করে দ্রুত রামেক হাসপাতালে জরুরী বিভাগে ভর্তি করালে হাসপাতালের কর্মরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে। নিহতর মরদেহ ময়না তদন্ত শেষে বুধবার দুপুরে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করলে বিকেল ৪ টার দিকে চর মাজারদিয়াড়ে নিহতর জানাজার নামাজ শেষে মাজারদিয়াড় গোরস্থানে দাফস সম্পন্ন করা হয়।

অপরদিকে, রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের ব্যড়পাড়া এলাকায় দুই গুপের মধ্যে মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় হাবিব (৩৮) নামের এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। সোমবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান বলে জানিয়েছেন আরএমপির দামকুড়া থানার ওসি মশিউর রহমান। নিহত হাবিবের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে গত মঙ্গলবার বিকেলে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হলে রাতে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। নিহত হাবিব পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের ব্যড়পাড়া গ্রামের গোলাপ আলীর ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ জুলাই রাতে মাদক ব্যবসার টাকার নিয়ে সোনায়কান্দি এলাকার মৃত জালেপ আলীর ছেলে ঈশার সাথে হাবিবের দ্বন্দ্ব হয়। এর জের ধরে ওই এলাকার মাদক কারবারের গডফাদার সোনাইকান্দির সোহেলের নির্দেশে তার সহযোগি ঈশা তার ভাই ইউসুফের নেতৃত্বে ৭ থেকে ৮ জন ধারালো অস্ত্র দিয়ে হাবিবকে কুপিয়ে জখম করে। পরে স্থানিয়রা হাবিবকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্মরত চিকিৎসকরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ট করেন।

স্থানিয় সূত্রে জানা গেছে, সোনাইকান্দি এলাকায় মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করে মৃত বাবলুর ছেলে সোহেল। তিনি ভারত থেকে ফেনসিডিল নিয়ে এনে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করে থাকেন। মাদক সম্রাট সোহেলের ফেনসিডিল বিক্রির টাকা নিয়ে ঈশা ও ইউসুফের সাথে হাবিরের দ্বন্দ্ব বাধে। এরই জের ধরে হাবিবকে কুপিয়ে জখম করা হয়। ওই এলাকার সকল মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক সম্রাট সোহেলের কাছে থেকে ফেনসিডিল নিয়ে ব্যবসা করে আসছে র্দীঘদিন যাবত।

দামকুড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মশিউর রহমান বলেন, নিহত কৃষক সাঈদের স্ত্রী থানায় ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ৬ জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করে। রাতেই মামলার দুই আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ঘটনায় সকালে হত্যা কান্ডের সাথে জড়িতো এক ভারতের নাগরিককে জনতা আটক করে থানা পুলিশে দিয়েছে। অন্যান আসামীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যহত রয়েছে।

ওসি আরো বলেন, সোনায়কান্দি ব্যড়পাড়ায় গত ১০ জুলাই রাতে নিহত হাবিবের পিতা গোলাপ বাদি হয়ে ৫ জনের নাম ও অজ্ঞাত ৫ থেকে ৬ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করে। গত রোববার হত্যা মামলার প্রধান আসামী মাদক ব্যবসায়ী ঈশাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এসময় তার কাছে থেকে হাবিবকে আঘাত করা ধারালো অস্ত্র একটি চাকু উদ্ধার করে পুলিশ। অন্যান অসামীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যহত রয়েছে। এছাড়াও দ্রুত মাদক সিন্ডিকেটের মুল হোতাকে গ্রেপ্তার করা হবে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]