দিন সাত হল মণিপুর নিয়ে মন্তব্য করার পাশাপাশি সেখানে শান্তি ফেরাতে সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে দিল্লির অস্বস্তি বাড়িয়েছিলেন ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কথায় আমল দেয়নি ভারত। সেই মণিপুর নিয়েই ভারতের কথায় আমল দিল না ইউরোপিয় ইউনিয়ন। ভারতের সরকারের যাবতীয় আপত্তি উড়িয়ে ইউরোপিয় ইউনিয়নের সংসদে জাতিদাঙ্গায় বিধ্বস্ব ভারতের উত্তর-পূর্বের ওই রাজ্যটিতে মানবাধিকার হরণ নিয়ে আলোচনা হল বুধবার।
দু’দিনের সফরে বুধবার প্রধানমন্ত্রী ফের বিদেশ সফরে গিয়েছেন। বুধবার পৌঁছেছেন ফ্রান্সে। সে দেশের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁকর আমন্ত্রণে বাস্তিল দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে যাবেন সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে। দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গেই ভারতের প্রধানমন্ত্রীর যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করার কথা। সেখানে মণিপুর প্রসঙ্গ চলে এলে প্রধানমন্ত্রীর অস্বস্তি বাড়বে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। ইউরোপিয় ইউনিয়ন হল ইউরোপের ২৭টি দেশ নিয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক সংস্থা। অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে যৌথভাবে কাজ করার লক্ষ্যে এই গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে।
মণিপুর সরকারের সুপ্রিম কোর্টে পেশ করা হলফনামায় বলা হয়েছে, ৩ মে থেকে শুরু হওয়া জাতি দাঙ্গায় ৪ জুলাই পর্যন্ত ১৪২ জন নিহত হয়েছেন। প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ বাড়িছাড়া। তাদের ত্রাণ শিবিরে রাখা হয়েছে।
মণিপুরে অশান্তি চলাকালেই প্রধানমন্ত্রী মার্কিন সফরে গিয়েছিলেন। সেখানে অবশ্য তাঁকে মণিপুর নিয়ে প্রকাশ্যে অস্বস্তিতে পড়তে হয়নি। তবে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে প্রসঙ্গ এসেছিল কি না জানা যায়নি। তাৎপর্যপূর্ণ হল, প্রধানমন্ত্রী মার্কিন সফর শেষ করে দেশে ফেরার দিন দশেকের মধ্যেই সে দেশের রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি কলকাতায় এসে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে মণিপুর নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বলেন, মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্র এই ব্যাপারে মানবিক কারণে ভারতকে সহায়তা করতে আগ্রহী।
কিন্তু বিষয়টি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় জানিয়ে বিদেশ মন্ত্রক মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে এই ব্যাপারে আর অগ্রসর না হতে নিরুৎসাহী করে। কংগ্রেস-সহ একাধিক বিরোধী দলও মার্কিন রাষ্ট্রদূতের মন্তব্যকে অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ বলে বর্ণনা করে।
ইউরোপিয় ইউনিয়নের ক্ষেত্রে কংগ্রেস অবশ্য মোদী সরকারের সমালোচনায় মুখর হয়েছে। দলের মুখপাত্র জয়রাম রমেশের বক্তব্য, ‘ইউরোপিয় ইউনিয়নে মণিপুর নিয়ে আলোচনা আসলে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ। কিন্তু দুর্ভাগ্যের হল প্রধানমন্ত্রী মণিপুর নিয়ে চুপ। ভারতের সংসদেও এই বিষয়ে আলোচনা হবে কিনা বলা কঠিন।’
সূত্রের খবর, ভারত সরকারের শত আপত্তি সত্ত্বেও ইউরোপিয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলি মণিপুর নিয়ে আলোচনা স্থগিত রাখতে রাজি হননি। ভারতের বিদেশ সচিব বিনয় কোয়াত্রা কথা বলেন ইউরোপিয় ইউনিয়নের কর্তাদের সঙ্গে। কিন্তু রাজি করানো যায়নি। প্রস্তাবে ভারত সরকারের পাশাপাশি শাসক দল বিজেপিরও নিন্দা করা হয়েছে।
শুধু মণিপুর নয়, ভারতে গণতন্ত্র, মানবাধিকার হরণ সংক্রান্ত একটি মার্কিন রিপোর্ট নিয়েও এখন দু-দেশের মধ্যে বিবাদ চলছে। ভারত ওই রিপোর্ট মানতে না চাইলেও মার্কিন প্রশাসন তাদের দাবিতে অনড়। তাদের বক্তব্য, মার্কিন প্রশাসন মানবাধিকার, গণতন্ত্র হরণের বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন। তারা রিপোর্ট প্রকাশের আগে প্রতিটি তথ্য যাচাই করার পর প্রকাশিত হয়।