লক্ষ্য অর্জনে বৈশ্বিক অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠার আহ্বান


, আপডেট করা হয়েছে : 12-07-2023

লক্ষ্য অর্জনে বৈশ্বিক অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠার আহ্বান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর নিজস্ব সক্ষমতা বাড়াতে জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত লক্ষ্য অর্জনে বৈশ্বিক অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আজ সময় এসেছে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-৩ ও অভীষ্ট-১৭-এর আলোকে জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত ঈপ্সিত লক্ষ্য অর্জনে কার্যকর বৈশ্বিক অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠা করার। যে প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য হবে জনগণের স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর নিজস্ব সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাদের কার্যকর অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করা।’ এই উদ্দেশ্য পূরণে সুস্পষ্ট বৈশ্বিক অঙ্গীকারের পাশাপাশি লক্ষ্য-অভিমুখী, নিবেদিত কূটনৈতিক তৎপরতার কোনো বিকল্প নেই-এমন মন্তব্যও করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত ‘জনস্বাস্থ্য ও কূটনীতি’ বিষয়ক দুদিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উল্লিখিত আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় এবং কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব মোকাবিলায় অতীতের সাফল্য বিবেচনা করে বাংলাদেশ এই প্রচেষ্টায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।

সরকারপ্রধান আরও বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারি প্রমাণ করেছে, আমরা যতই নিজেদের পরস্পরবিচ্ছিন্ন ভাবি না কেন, আমাদের সবার ভাগ্য আসলে এক সূত্রে গাঁথা। আমরা কেউই সুরক্ষিত নই, যতক্ষণ না আমরা সবার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারছি।’

বৃহত্তর স্বার্থে আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর মন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পাঁচটি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ তুলে ধরেন। এগুলো হচ্ছে-১. ভবিষ্যৎ জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করতে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। ২. নিরাময়যোগ্য সংক্রামক রোগ নির্মূল করতে এবং ক্রমবর্ধমান অসংক্রামক রোগের বিস্তার রোধে বিদ্যমান উত্তম চর্চা বিনিময়ে একত্রে কাজ করতে হবে। ৩. মানসিক স্বাস্থ্যকে জাতীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থার মূলধারায় যুক্ত করতে এবং পানিতে ডুবে যাওয়া ও দুর্ঘটনার মতো প্রাণঘাতী জনস্বাস্থ্য বিপর্যয় রোধে আমাদের মনোযোগী হতে হবে। ৪. নিজ নিজ স্বাস্থ্য শিক্ষা ও গবেষণা অবকাঠামোর মধ্যে সমন্বয় জোরদার করতে হবে, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বেড়ে যাওয়া বিভিন্ন গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগের প্রাদুর্ভাব কমাতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। এবং ৫. মা, শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যকে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-৩ অর্জনের মাপকাঠি হিসাবে বিবেচনা করে এ অঞ্চলে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে কেন্দ্র করে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা আগামী ৭৫ বছর এবং তারও পরে যেন অর্থপূর্ণভাবে সমগ্র মানবতার সেবা করে যেতে পারে, সে লক্ষ্যে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের ১১ সদস্য রাষ্ট্র হলো বাংলাদেশ, ভুটান, গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড ও তিমুর-লেস্তে।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক, মিয়ানমারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ড. থেতখাইং উইন, ভুটানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী লিয়নপো দাশো দেচেন ওয়াংমো, মালদ্বীপের স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী সাফিয়া মোহাম্মদ সাইদ, থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপমন্ত্রী বিজয়ভাত ইসরাভাকদি এবং বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি ড. বরদান জং রানা বক্তব্য দেন।

এছাড়া অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. মো. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার এবং সূচনা বক্তব্য দেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যৌথ আয়োজনে একটি অডিও ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনাও প্রদর্শিত হয়।

২০২০ সালের শুরুর দিকে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও কোভিড-১৯ মহামারি আঘাত হানে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য খাতে দীর্ঘদিনের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা এবং সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে তার দেশ মানুষের প্রাণহানি হ্রাস এবং অর্থনীতি সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে। উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তায় বাংলাদেশ দ্রুততম সময়ে টিকা ক্রয় এবং প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়েছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের দেশের শতভাগ লোককে বিনামূল্যে কোভিড-১৯ টিকা প্রদান করেছি।

তিনি বলেন, সামগ্রিক কোভিড ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে।

সরকারপ্রধান বলেন, এমনকি চ্যালেঞ্জিং কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীনও বাংলাদেশ প্রতিবেশী মিয়ানমার থেকে আশ্রয় চাওয়া ১২ লাখ রোহিঙ্গাদের কথা ভুলে যায়নি।

তিনি বলেন, উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তায় বাংলাদেশ তাদের নিয়মিত চেকআপ, টিকাদান এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, তবে এটা ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে আমাদের দেশে বসবাসরত এই বিশাল জনগোষ্ঠী সব সময়ই আমাদের অঞ্চলের জন্য একটি মানবিক সংকট এবং নিরাপত্তা উদ্বেগের বিষয়। মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনই পারে এই সংকটের টেকসই সমাধান নিশ্চিত করতে এবং আমি আশা করি যে মিয়ানমার খুব শিগগিরই তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেবে।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]