ভারতের উত্তরাঞ্চলে কয়েকদিনের টানা ভারি বর্ষণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৭-এ দাড়িয়েছে। মঙ্গলবার সকালে দিল্লিতে যমুনা নদীর পানি বিপত্সীমার এক মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
হরিয়ানা রাজ্য হাতিনিকুণ্ড ব্যারেজ থেকে এক লাখ কিউসেক পানি যমুনা নদীতে ছেড়ে দেওয়ার পর আরও পানি ছাড়ায় যমুনার প্রবাহ বিপত্সীমার উপরে চলে যায়।
কর্মকর্তারা ভারতীয় জানিয়েছেন, ধারণা করা সময়ের আগেই নদীটির পানি বিপত্সীমা পার হয়ে গেছে। তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকা নিচু এলাকাগুলো থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া শুরু করেছে দিল্লির কর্তৃপক্ষ। তাদের নগরীর বিভিন্ন ত্রাণ শিবির ও কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে নিয়ে রাখা হবে। যমুনার পানির স্তর ও বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলোর ওপর নজর রাখার জন্য দিল্লির সরকার ১৬টি নিয়ন্ত্রন কক্ষ স্থাপন করেছে। নগরীর জলাবদ্ধতা সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল অনেকগুলো পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
এক সংবাদ সম্মেলনে কেজরিওয়াল জানান, ৪০ বছরের মধ্যে এই প্রথম দিল্লিতে এরকম প্রবল বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর আগে ১৯৮২ সালে এমন তুমুল বৃষ্টি হয়েছিল। তখন ২৪ ঘণ্টায় ১৬৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। তাই এটি নজিরবিহীন বৃষ্টিপাত এবং দুর্ভাগ্যবশত নগরীর ড্রেনেজ সিস্টেম এ ধরনের তীব্র বৃষ্টিপাত সামাল দেওয়ার মতো করে নকশা করা হয়নি, বলে জানান তিনি।
ভারতের আবহাওয়া দপ্তর হিমাচল প্রদেশ, জম্মু ও কাশ্মীর, উত্তরাখণ্ড, হরিয়ানা, দিল্লি, উত্তর প্রদেশ ও রাজস্থানে ফের ভারি বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। ভারি বৃষ্টিতে প্রায় পুরো উত্তর ভারতের জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ার পর ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্যগুলোতে উদ্ধার অভিযান ও ত্রাণ কাজ জোরদার করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলা বাহিনী। এ অঞ্চলের অনেকগুলো নদীর পানি বিপত্সীমার উপর দিয়ে বইছে। এসব নদীর তীরবর্তী নগর ও ছোট শহরগুলোর রাস্তা ও ভবনগুলো হাঁটু সমান পানিতে তলিয়ে আছে।
বৃষ্টির তাণ্ডবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য হিমাচলে সোমবারও টানা বৃষ্টি হয়। অবিরাম বৃষ্টিপাতের কারণে হড়কা বান ও ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। এতে ঘরবাড়ি, সম্পত্তি ও অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি ইতোমধ্যে কয়েকশত কোটি রুপি ছাড়িয়ে গেছে বলে জানা গেছে। শুক্রবার থেকে এ পর্যন্ত রাজ্যটিতে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু জানান। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সুখুর সঙ্গে কথা বলে তাকে সব ধরনের সহায়তা ও সমর্থন দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। উত্তরাখণ্ডের নদী ও স্রোতস্বিনীগুলোর পানি বিপত্সীমা ছাড়িয়েছে এমন খবরের মধ্যেই প্রবল বৃষ্টি ও ভূমিধসের কারণে অনেকগুলো সড়ক ও মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে আছে। এখানে বহু পর্যটক আটকা পড়ে আছেন।
রাজস্থান, পাঞ্জাব ও হরিয়ানার বেশ কয়েকটি অংশেও ভারি বৃষ্টি হয়েছে। এতে ওই অংশগুলোর নিচু এলাকাগুলোতে বন্যা ও অন্যান্য এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। রাজস্থানে প্রবল মৌসুমি বৃষ্টিতে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। রাস্তা, রেললাইন এমনকী হাসপাতালও পানিতে তলিয়ে গেছে। এখানে আরও বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।