ক্ষমাপ্রার্থীরা যেভাবে গুনাহমুক্ত ও জান্নাতি হবে


ধর্ম ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 09-07-2023

ক্ষমাপ্রার্থীরা যেভাবে গুনাহমুক্ত ও জান্নাতি হবে

ক্ষমা প্রার্থনা করা, ইসতেগফার করা মুমিনের গুণ। সব সময় ইসতেগফার পড়া সুন্নত আমল। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিদিনই একই বৈঠকে একশত বার ইসতেগফার পড়তেন। এ আমলের বিনিময়েই গুনাহমুক্ত থাকবে মুমিন, হবে জান্নাতি।

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজের পর একই বৈঠকে একশত বার ইসতেগফার পড়তেন। হাদিসের বর্ণনায় বিষয়টি এভাবে এসেছে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কখনও কখনও আমার হৃৎপিন্ডের উপরও আবরণ পড়ে। তাই আমি প্রতিদিন একশত বার ক্ষমা প্রার্থনা করি। (মুসলিম, আবু দাউদ)

গুনাহ বা পাপের জড়তা কলব থেকে দূর করতে ইসতেগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনার বিকল্প নেই। গুনাহের জড়তা দূর করাসহ বেশ কিছু নেয়ামত পেতে ছোট্ট একটি ইসতেগফার বেশি বেশি পড়া যেতে পারে। তাহলো-

أَسْتَغْفِرُ الله وَ أَتُوْبُ اِلَيْهِ

উচ্চারণ : ‘আসতাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি’।

গুনাহমুক্ত ও জান্নাতি হওয়ার উপায়

১. যে ব্যক্তি ক্ষমা চায় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন। অজস্র ধারায় বৃষ্টি বর্ষণ করেন। ধন সম্পদ সন্তানাদি বাড়িয়ে দেন। বাগান সৃষ্টি করেন এবং নদীনালা প্রবাহিত করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

فَقُلۡتُ اسۡتَغۡفِرُوۡا رَبَّکُمۡ ؕ اِنَّهٗ کَانَ غَفَّارًا - یُّرۡسِلِ السَّمَآءَ عَلَیۡکُمۡ مِّدۡرَارًا - وَّ یُمۡدِدۡکُمۡ بِاَمۡوَالٍ وَّ بَنِیۡنَ وَ یَجۡعَلۡ لَّکُمۡ جَنّٰتٍ وَّ یَجۡعَلۡ لَّکُمۡ اَنۡهٰرًا

‘আর বলেছি, তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল’; ‘তিনি তোমাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, ‘আর তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা’। (সুরা নুহ: আয়াত ১০-১২)

২. যে ব্যক্তি সকালে দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে ইসতেগফার পড়বে আর সন্ধ্যার আগেই মরা যাবে, সে জান্নাতি হবে। আর যে ব্যক্তি রাতে দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ দোয়া পড়বে আর ভোর হওয়ার আগেই মারা যাবে, সে জান্নাতি হবে। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত শাদ্দাদ ইবনু আউস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সাইয়্যিদুল ইসতেগফার হলো বান্দার এ দোয়া পড়া-

اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لاَ إِلٰهَ إِلاَّ أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلٰى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّه“ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্কতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহ্‌দিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাততু আউজুবিকা মিন শাররি মা ছানাতু আবুউলাকা বিনিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউলাকা বিজাম্বি ফাগফিরলি ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা।’

অর্থ’ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে কৃত প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নেয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা কর।’

যে ব্যক্তি দিনে (সকালে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ ইসতেগফার পড়বে আর সন্ধ্যা হবার আগেই সে মারা যাবে, সে জান্নাতি হবে। আর যে ব্যক্তি রাতে (প্রথম ভাগে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ দোয়া পড়ে নেবে আর সে ভোর হবার আগেই মারা যাবে সে জান্নাতি হবে।’ (বুখারি)

৩. মুমিন ব্যক্তি যখন গুনাহ করে তখন তার কলবে একটি কালো দাগ পড়ে। এরপর সে তাওবা করলে, পাপ কাজ ছেড়ে দিলে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করলে তার কলব পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুমিন ব্যক্তি যখন গুনাহ করে তখন তার কলবে একটি কালো দাগ পড়ে। এরপর সে তওবা করলে, পাপকাজ ত্যাগ করলে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করলে তার কলব পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়। সে আরও গুনাহ করলে সেই কালো দাগ বেড়ে যায়। এই সেই মরিচা যা আল্লাহ তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেছেন–

کَلَّا بَلۡ رَانَ عَلٰی قُلُوۡبِهِمۡ مَّا کَانُوۡا یَکۡسِبُوۡنَ ‘কখনো নয়, বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের অন্তরে জং (মরিচা) ধরিয়েছে’ (সুরা মুতাফফিফিন: আয়াত ১৪)।’ (ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ, তালিকুর রাগিব)

৪. নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, কেউ যদি ইসতেগফার পড়ে, সে যুদ্ধ থেকে পলায়ন করার মতো গুনাহ করলেও মহান আল্লাহ তাআলা তাকে (ইসতেগফারকারীকে) ক্ষমা করে দেবেন।’ (তিরমিজি)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, নিয়মিত তাওবা-ইসতেগফার করা। ক্ষমা প্রার্থনার ক্ষেত্রে কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনার ওপর যথাযথ আমল করা।

আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুসলিমার সবাইকে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করার মাধ্যমে দুনিয়া ও পরকালের উল্লেখিত ফজিলতগুলো পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]