বিশ্বব্যাপী চালের দাম ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। মূলত ভারতে কৃষকদের অর্থসহায়তা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়ায় বিশ্বব্যাপী চালের বাজারে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে চাল উৎপাদনে প্রতিকূল আবহাওয়ার প্রভাব পড়লে দাম আরও বাড়তে পারে।
বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের চাল রফতানির ৪০ শতাংশেরও বেশি যোগান আসে ভারত থেকে। তবে সম্প্রতি ভারতে কৃষকদের অর্থসহায়তা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়ায় বিশ্বব্যাপী চালের দাম ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
এদিকে ২০২২ সালে ভারত থেকে ৫৬ মিলিয়ন টন চাল রফতানি হয়েছে। কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে উৎপাদন কমে যাওয়ায় ভারত থেকে চাল রফতানি কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে চালের রফতানি কমলে চালের দাম আরও বাড়তে পারে।
রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (আরইএ) সভাপতি বিভি কৃষ্ণ রাও বলেন, সবচেয়ে সস্তায় চাল সরবরাহ হতো ভারত থেকে। তবে নতুন ন্যূনতম সহায়ক দামের কারণে ভারতে দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য সরবরাহকারী দেশও দাম বাড়াচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিশ্বের ৩ বিলিয়নেরও বেশি মানুষের প্রধান খাদ্য চাল। এর মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ চাল এশিয়ায় উৎপাদিত হয়। কিন্তু এল নিনোর (আবহাওয়ার চক্র) কারণে বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাবে। তবে আশঙ্কার কথা হলো, আবহাওয়ার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আগেই জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার খাদ্যমূল্য সূচকে চালের দাম এখন ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি মন্ত্রণালয়ের (ইউএসডিএ) পূর্বাভাস অনুযায়ী, বিশ্বের শীর্ষ ছয়টি চাল উৎপাদনকারী দেশ যেমন বাংলাদেশ, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে রেকর্ড পরিমাণ চাল উৎপাদিত হতে পারে, তা সত্ত্বেও চালের দাম বাড়ছে।
এ বিষয়ে ওলাম ইন্ডিয়ার রাইস বিজনেসের ভাইস প্রেসিডেন্ট নিতিন গুপ্তা জানান, এল নিনোর প্রভাব কোনো একটি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। এটি প্রায় সব চাল উৎপাদনকারী দেশের উৎপাদনকে প্রভাবিত করে।
এদিকে ভারতীয় চাল রফতানি মূল্য ৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে পর্যায়ে পৌঁছেছে। রফতানি মূল্য বেড়েছে ৯ শতাংশ। মূলত নতুন মৌসুমে সাধারণ চালের জন্য ভারত সরকার কৃষকদের যে মূল্য দেয়; তা গত মাসে ৭ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
এ ছাড়া ভারতীয় কৃষকদের নতুন প্রণোদনা দেয়ার পর থেকে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে চালের রফতানি মূল্য দুই বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। মূলত চলতি বছর ভারতের প্রধান কিছু রাজ্যের নির্বাচন ও আগামী বছরের সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সম্প্রতি চালের পাশাপাশি উৎপাদনকারী দেশগুলো অভ্যন্তরীণ ব্যয়ের লাগাম টানতে রফতানি কমিয়ে দেয়ায় বিশ্বব্যাপী চিনি, মাংস এবং ডিমের দামও রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। চালের রেকর্ড উৎপাদনের পূর্বাভাস সত্ত্বেও সীমিত সরবরাহের কারণে দাম বাড়ছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
আর ইউএসডিএ জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ প্রান্তে বৈশ্বিক চাল মজুতের পরিমাণ ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসতে পারে। যার পরিমাণ দাঁড়াবে ১৭ কোটি ২০ লাখ টন। ইতোমধ্যে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় শীর্ষ চাল উৎপাদনকারী দেশ চীন ও ভারতে চালের মজুত কমে গেছে।