বজ্রপাতে বিদ্যুত্‍স্পৃষ্ট হলে সঙ্গে সঙ্গে যা করতে হবে


ফারহানা জেরিন , আপডেট করা হয়েছে : 02-07-2023

বজ্রপাতে বিদ্যুত্‍স্পৃষ্ট হলে সঙ্গে সঙ্গে যা করতে হবে

মেঘলা আকাশ। তুমুল বৃষ্টি। আচমকাই বিদ্যুতের ঝলকানি, আর প্রবল বাজ পড়ার শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে যায়। দেশে ইদানীং বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা সাঙ্ঘাতিকভাবে বেড়েছে। 

বাজ পড়ে কেউ বিদ্যুত্‍স্পৃষ্ট হলে কী করা উচিত, কেমন চিকিত্‍সা দরকার সে নিয়ে জরুরি পরামর্শ দিলেন বিশেষজ্ঞরা।

কেন বাজ পড়ে?

বজ্রগর্ভ মেঘের নীচের অংশে জলীয় বাষ্প ও তুষারকণার পরিমাণ বেশি থাকে। সেখানে জলকণায় সংঘর্ষ বেশি হয়, তুলনায় উপরের দিকে কম হয়। ফলে মেঘের নীচের দিকে নেগেটিভ চার্জের পরিমাণ বেশি থাকে, আর উপরের দিকে থাকে পজিটিভ চার্জ। এই দুই বিপরীতধর্মী চার্জের প্রতিক্রিয়ায় শক্তিশালী বিদ্যুত্‍ ক্ষেত্র তৈরি করে। তবে এই বিদ্যুত্‍ ক্ষেত্র মেঘের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।

এখন বজ্রপাত তখনই হয় যখন মেঘের মধ্যে এই তড়িত্‍ ঋণাত্মক বা ইলেকট্রন চার্জের পরিমাণ বেড়ে যায়, বিপরীতে মাটিতে তড়িত্‍ ধণাত্মক চার্জ জমা হয়। বজ্রগর্ভ মেঘ ও মাটিতে তৈরি হওয়া দুই বিপরীত ধর্মী চার্জের পরিমাণ বাড়লে মাঝের বাতাসের বাধা অতিক্রম করে একটি লাইন তৈরি হয়, যাকে বলে স্টেপড লিডার। মেঘে যে শক্তিশালী ক্ষেত্র তৈরি হয় তার প্রতি ইঞ্চিতে প্রায় ১০ হাজার ভোল্ট বিদ্যুত্‍ শক্তি থাকে। ফলে চারপাশের বাতাসও আয়নিত হয়ে যায়। ফলে এই পথেই মেঘ থেকে বিদ্যুত্‍ শক্তি মাটিতে নেমে আসে। তখন আমরা বলি বজ্রপাত হয়েছে। সাধারণত গাছপালা, উঁচু বাড়ি, টাওয়ার ইত্যাদি বেয়ে মাটি থেকে তড়িত্‍ ধণাত্মক চার্জ ওপরে উঠে মেঘের তড়িত্‍ ঋণাত্মক চার্জের সঙ্গে ওই লাইন তৈরি করে। এর মাঝে কোনও মানুষ, প্রাণী চলে এলে হাজার হাজার ভোল্ট কারেন্ট লাগে শরীরে।

বজ্রপাতের চিকিত্‍সা কী?

ডাক্তারবাবুরা বলছেন, অনেকের ধারণা, বজ্রাঘাতে আহত ব্যক্তিকে স্পর্শ করলে তড়িত্‍স্পৃষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। কারণ বজ্রপাতে ডিসি কারেন্ট থাকে। যিনি বজ্রাহত হয়েছেন তিনি তড়িত্‍বাহক হন না। কিন্তু ইলেকট্রিক কারেন্টে বিদ্যুত্‍স্পৃষ্ট হওয়া আলাদা ব্যাপার। তখন শরীরের মধ্যে দিয়ে তড়িত্‍ প্রবাহিত হয়।

বজ্রাহত হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিত্‍সা করা জরুরি। অনেক সময়ে বাজ পড়ে জ্ঞান হারালে ধরেই নেওয়া হয় তিনি মৃত। এটা সবচেয়ে বড় ভুল। তাছাড়া বজ্রাহত হলে সেই ব্যক্তিকে কেউ স্পর্শ করতে চান না। ফলে দ্রুত চিকিত্‍সাও শুরু হয় না। ডাক্তাররা বলছেন, বজ্রাহত হলে দেরি না করেই সিপিআর (কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন) চালু করতে হবে। তারপর যত দ্রুত সম্ভব, সঠিক পদ্ধতি মেনে তাঁকে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। আহতকে চিত হওয়া অবস্থায় দেহ এবং ঘাড় সোজা রেখে নিয়ে যেতে হবে হাসপাতালে।

ডাক্তাররা বলছেন, বজ্রাঘাতে আহত হওয়ার পরবর্তী ১৫ মিনিট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওই সময়ের মধ্যেই সঠিক পদ্ধতিতে সিপিআর চালু করতে হবে। হাসপাতাল দূরে হলে আগে সিপিআর চালু করতে হবে। তারপর নিয়ে যেতে হবে হাসপাতালে। সঠিক চিকিত্‍সা হলে, ২৪ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রেখে দেওয়া হয়। যদি আহত ব্যক্তি বজ্রাঘাতের আঘাত সামলে নিতে পারেন এবং সঠিক সময় তাঁর চিকিত্‍সাও শুরু হয় তাহলে বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]