রাজধানীর কোরবানির বর্জ্য দ্রুততম সময়ে অপসরাণ করতে নানা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরশন। এ লক্ষ্যে ঢাকায় প্রায় ২০ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করবেন। মহানগরী পরিষ্কার রাখতে এরই মধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছেন কর্মীরা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়রের নির্দেশনা অনুযায়ী পশুর হাটের গোবর নিয়ে যেতে দেখা গেছে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের। এসব গোবর সড়কের পাশে গাছে জৈব সার হিসাবে ব্যবহারের ঘোষণা দিয়েছেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি ৮ ঘন্টার মধ্যে কোরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণের ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ২৪ ঘন্টায় কোরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ওয়ার্ড ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। ডিএসসিসি এলাকায় বর্জ্য অপসারণে ৮ হাজার ৯৩০ জন এবং ডিএনসিসি এলাকায় প্রায় ১১ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী বর্জ্য অপসারণে কাজ করবেন।
ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এসব পরিচ্ছন্নতাকর্মীর মধ্যে সাড়ে চার হাজার প্রাইমারি ওয়েস্ট কালেকশন সার্ভিস প্রোভাইডার। তারা সারা বছর বাসাবাড়ির বর্জ্য ভ্যানে সংগ্রহ করেন। এসব কর্মী সিটি করপোরেশন থেকে কোনো পারিশ্রমিক পান না। কিন্তু কোরবানির ঈদে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা থেকে পশুর বর্জ্য সংগ্রহে তারাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
ডিএনসিসির ২৮টি ওয়ার্ডে করপোরেশনের নিজস্ব ২ হাজার ১১৭ পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং ডিএসসিসির ২৬টি ওয়ার্ডে বেসরকারি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শ্রমিকরা নিয়োজিত থাকবেন। তাছাড়া আরও ৩ হাজার ১০০ কর্মী রয়েছেন। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে আরও ৬১২ কর্মী নিয়েছে ডিএনসিসি।
স্থানান্তর কেন্দ্র ও বিভিন্ন খোলা জায়গায় থেকে বর্জ্য আমিনবাজার ল্যান্ডফিলে নিতে ১৫০টি ডাম্প ও খোলা ট্রাক নিয়োজিত করছে ডিএনসিসি। সঙ্গে বুলডোজার ও এস্কাভেটরের মতো ৪৭টি ভারী যান, যন্ত্রপাতি এবং ১০টি পানির গাড়ি থাকবে। বর্জ্য সংগ্রহের কাজটি আরও দ্রুততার সঙ্গে শেষ করতে নিজস্ব যানবাহনের পাশাপাশি ২০৪টি ছোট পিকআপ ভাড়া করছে সংস্থাটি।
ঢাকা উত্তর সিটির ৫৪টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে ঈদের দিন ৩টি করে মোট ১৬২টি পিকআপ থাকবে। ঈদের পরদিন আরও ৪২টি পিকআপ থাকবে। এ প্রসঙ্গে সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা ও মুখপাত্র মকবুল হোসাইন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, কোরবানির পশুর বর্জ্য দ্রুততম সময়ে অপসারণের জন্য এরই মধ্যে মেয়র মহোদয় বিশেষ পুরষ্কার ঘোষণা করেছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলররাও বেশ তৎপর রয়েছেন।
এদিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ করতে চায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এরই মধ্যে মাতুয়াইলে অবস্থিত বর্জ্য ভাগাড়ে (ল্যান্ডফিল) সুষ্ঠুভাবে স্থানান্তরের লক্ষ্যে নতুন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া দূষণ রোধে বর্জ্যবাহী ট্রাক চলাচলে ত্রিপল ব্যবহার করবে।
সংস্থাটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্র জানায়, পশুর হাট এবং কোরবানির পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি তদারকি পরিষদ গঠন করা হয়েছে। বর্জ্য অপসারণে ডিএসসিসির নিজস্ব ৩৫৭টি বিভিন্ন ধরনের যান ও যন্ত্রপাতি থাকবে। যার মধ্যে পে-লোডার ১০টি, বেকহো লোডার ৪টি, স্কিড লোডার ৯টি, টায়ার ডোজার ৭টি, চেইন ডোজার ৩টি, ডাম্প ট্রাক ৯৬টি, কম্পেক্টর ৫৩টি, পানিবাহী গাড়ি ৯টি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রয়োজনীয় অন্যান্য মালামাল ওয়ার্ড পর্যায়ে সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া রাজউক, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, সড়ক ও জনপদ অধিদফতরের ২৪টি ভারি যন্ত্রপাতি নিয়োজিত থাকবে বর্জ্য অপসারণে।
ডিএসসিসির ৫ হাজার ৩০০ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী, ৭৫টি ওয়ার্ডে প্রাথমিক বর্জ্য সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানের ৩ হাজার কর্মী এবং পশুর হাটের জন্য ৬৩০ জন শ্রমিকসহ মোট ৮ হাজার ৯৩০ জন পরিচ্ছন্নকর্মী নিয়োজিত থাকবে। পশুর হাটের বর্জ্য, পশুর বর্জ্য অপসারণ এবং রাস্তা ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত জীবাণুনাশক ও ১৩০০ ড্রাম ব্লিচিং পাউডার ইতিমধ্যে ওয়ার্ডভিত্তিক সরবরাহ করা হয়েছে।
সুষ্ঠু ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে কোরবানির বর্জ্য অপসারণে বিনামূল্যে ১ লাখ ৩০ হাজার চটের ব্যাগ বিতরণ করা হয়েছে। ওয়ার্ড পর্যায়ে কোরবানির বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম তদারকিতে কাউন্সিলর, সিটির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ওয়ার্ডভিত্তিক তদারকি দল গঠন করা হয়েছে। তারা মাঠ পর্যায়ে সশরীরে অবস্থান করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম তদারক করবেন।
এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা ও মুখপাত্র আবু নাছের জানান, কোরবানির বর্জ্য দ্রুততম সময়ে অপসারণে ঈদের পূর্ব দিন, ঈদের দিন এবং ঈদের পরবর্তী দুই দিনসহ মোট ৪ দিন বর্জ্যবাহী গাড়ি মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়াল সেতু (ফ্লাইওভার) ব্যবহার করবে। সড়কে ভোগান্তি এড়াতে নিদিষ্ট স্থান ও সময় ব্যতীত বিভিন্ন স্থানে মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীদের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে ভ্রম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। একই সাথে খাল ও নর্দমায় কোরবানির বর্জ্য ফেলা বন্ধে এবং ঈদের তৃতীয় দিন কোরবানি না দেওয়ার বিষয়ে কাউন্সিলর এবং আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নগরবাসীকে উদ্বুদ্ধকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে সিটি করপোরেশন।