আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ইক্বরা কিতাবাক’। তোমার কিতাব অর্থাৎ তোমার আমলনামা তুমি পড়। সব মানুষকে মহান আল্লাহ হাশরের ময়দানে এ নির্দেশ দেবেন। আল্লাহ তাআলা বলবেন-
اِقۡرَاۡ کِتٰبَکَ ؕ کَفٰی بِنَفۡسِکَ الۡیَوۡمَ عَلَیۡکَ حَسِیۡبًا
‘পাঠ কর তোমার কিতাব (আমলনামা), আজ তুমি নিজেই তোমার হিসাব-নিকাশকারী হিসেবে যথেষ্ট।' (সুরা বনি ইসরাইল: আয়াত ১৪)
সুতরাং হাশরের ময়দানে উপস্থিত হওয়ার আগেই মানুষের উচিত, নিজের হিসাব নিজে করা। সে কিসের উপযুক্ত; জান্নাত না জাহান্নাম। নিজ নিজ আমলনামার অবস্থা কী? হাদিসে পাকেও বিষয়টি এভাবে ওঠে এসেছে-
‘আল্লাহর হিসাব নেওয়ার আগে তুমি নিজে নিজের হিসাব নাও।’
চলছে হিজরি বছরের শেষ মাস জিলহজ। মাসটি বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে মুমিন মুসলমানের জীবন থেকে বিদায় নেবে আরও একটি বছর। গত হওয়া বছরের আমলের হিসাব বের করার এখনই সময়। ইসলামি জীবন ব্যবস্থা ও নেক আমলের উপর কি বছরটি অতিবাহিত হয়েছে? গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন সামনে এসে যায় তাহলো-
১. ঈমান বিশুদ্ধ হয়েছে কি?
হিসাব করার বিষয় এটি যে আগের বছরের তুলনায় এ বছরটিতে নিজেদের ঈমান বাড়লো না কমলো, তাওয়াক্কুল তথা আল্লাহর উপর ভরসা বাড়লো নাকি কমলো, তাকদিরের বিশ্বাসের উপর একিন/বিশ্বাস বাড়লো নাকি কমলো ইত্যাদি।
২. সুন্নত অনুযায়ী ইবাদত হয়েছে কি?
নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ইত্যাদি ইবাদতগুলো সুন্নত অনুযায়ী হয়েছে কি? নিজের চিন্তা-চেতনায় এগুলো আগের থেকে সুন্দর হলো কিনা সে হিসাব কতটুকু? কোরআন তেলাওয়াত আগের থেকে বিশুদ্ধ হয়েছে কি? এ হিসাবগুলো নেওয়ার এখনই সময়।
৩. হালাল রিজিক হচ্ছে কি?
জীবন-জীবিকার তাগিতে আয়-রোজগার হালাল হচ্ছে কি? নিজ নিজ কামাই রোজগারের ব্যাপারে আগের থেকে বেশি সচেতন কিনা। মুমিন মুসলমান নিজে কতটুকু যাঁচাই-বাঁছাই করে কামাই রোজগার করছে সে ব্যাপারে চিন্তা-ফিকির করা ও হিসাব মেলানোর এখনই সময়।
৪. বান্দার হক সম্পর্কে কতটুকু সচেতন?
বান্দার হক নষ্ট হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে কতটুকু দায়িত্ববান। বান্দার হক আদায়ের ব্যাপারে গত বছরের তুলনায় এবার কতটুকু সচেতন। গতবারের তুলনায় এবার বেশি না কম; এ বিষয়ে নিজ নিজ আমলের হিসাব নেওয়া খুবই জরুরি।
৫. আত্মশুদ্ধির অবস্থা কী?
নিজেদের জীবনে আত্মশুদ্ধির অবস্থা কী? সচরাচর ৮-১০টা গুণ অর্জন হলো কিনা। সবার মাঝে সবর ও শোকর কতটুকু বেড়েছে সে হিসাব খুবই জরুরি। নিজ নিজ অন্তরে আত্মিক যেসব রোগ আছে, সেসব রোগ থেকে মুক্ত হওয়ার বিষয়ে কতটুকু অগ্রগামী। হিংসা-বিদ্বেষ, অহংকার, রাগ, মুনাফেকির মতো চারিত্রিক দোষ থেকে মুক্ত হওয়ার ব্যাপারে নিজ নিজ দিলের অবস্থার হিসাব করা জরুরি।
সর্বোপরি দুনিয়ার জীবনে তাকাব্বুর দূর করা, কুদৃষ্টি দূর করা, অন্যের মেয়েকে বা বিবিকে দেখা তৃপ্তি অনুভব না করা, নাচ-গান করা বা দেখা বন্ধ করাসহ যাবতীয় গুনাহ বর্জন করার মাধ্যমে নিজেদের নফসকে পরিশুদ্ধ করার শপথ নেওয়া।
এ কারণেই হাদিসে পাকে নবিজিসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে সতর্ক করেছেন, এই উম্মতের এক দল মানুষ সারারাত নাচ-গান করবে তারপর সকালে উঠে দেখবে কেউ শুকর, কেউ বানর হয়ে গেছে।
মনে রাখতে হবে
নবিজিসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী কখনো মিথ্যা হবে না। তাই এখনই সময় নিজ নিজ আমলের হিসাব নেওয়া। পরকালে কল্যাণে প্রস্তুতি গ্রহণ করা। আল্লাহর রহমতের আশা করা। তবেই মুক্তি সম্ভব।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নিজ নিজ আমলের প্রতি যত্নবান হওয়ার তাওফিক দান করুন। হিসাব করে করে বদআমল থেকে বেঁচে থাকার পাশাপাশি নেক আমলের প্রতি মনোযোগী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।