যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি নুসরাত প্রথম নন, দ্বিতীয় মুসলিম বিচারক


ইমা এলিস, নিউ ইয়র্ক: , আপডেট করা হয়েছে : 19-06-2023

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি নুসরাত প্রথম নন, দ্বিতীয় মুসলিম বিচারক

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নুসরাত জাহান চৌধুরী প্রথম নন, দ্বিতীয় মুসলিম বিচারক। এর আগে বাইডেনের আমলেই আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম মুসলিম বিচারক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন বিচারক জাহিদ কুরেশি। ২০২১ সালে নিউ জার্সির ফেডারেল ট্রায়াল কোর্টে তাকে বিচারক হিসাবে নিয়োগ করেছিল সিনেট। প্রথম নারী মুসলিম বিচারক নুসরাত জাহান চৌধুরী এখন থেকে নিউ ইয়র্কের পূর্বাঞ্চলীয় আদালত (ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট)-এর বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। যুক্তরাষ্ট্রের বাংলা সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে।

নুসরাত পেশায় আমেরিকার সিভিল রাইটস আইনজীবী। নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় লড়াই করেন তিনি। বৃহস্পতিবার আমেরিকার সিনেট ও দেশের প্রথম নারী মুসলিম ফেডারেল বিচারক হিসেবে তার নাম ঘোষণা করেছে। ৫০-৪৯ ভোটে জেতার পর নিউ ইয়র্কের পূর্বাঞ্চলীয় আদালতের বিচারক নির্বাচিত হয়েছেন নুসরাত। নুসরাত বর্তমানে ইলিনয়ের ‘আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ)’-এর আইনি অধিকর্তা (লিগ্যাল ডিরেক্টর) হিসেবে কর্মরত। নুসরাত তার পেশাদার জীবনের বেশির ভাগ সময় এসিএলইউ-তে কাটিয়েছেন। যেখানে তিনি বর্ণবৈষম্য এবং জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করেছেন। ২০১৮ থেকে ২০২০ পর্যন্ত এসিএলইউ-এর বর্ণবৈষম্য-সংক্রান্ত বিচার কর্মসূচির ডেপুটি ডিরেক্টর ছিলেন নুসরাত। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ফেডারেল বেঞ্চে নুসরাতের নাম মনোনীত করেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

আমেরিকার শীর্ষ সিনেট চাক শুমার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘নুসরাত প্রতিভাবান আইনজীবী। নাগরিক অধিকার আইনজীবী হিসাবে তার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ফেডারেল বেঞ্চে সততা এবং পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করার জন্য তিনি নিজেকে তৈরি করেছেন। নুসোত নিশ্চয়ই সৎপথে থেকে এবং সত্যকে অনুসরণ করে ন্যায়বিচার করবেন।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে শুমার টুইটারে নুসরতের একটি ছবি পোস্ট করেন। তিনি লেখেন, ‘নুসরাত এসিএলইউ-র আইনি পরিচালক। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত নুসরাত আমেরিকার প্রথম নারী মুসলিম ফেডারেল বিচারক হিসাবে ইতিহাস গড়েছেন।’

ট্রাম্প জমানায় বিতর্কেও জড়িয়ে পড়েছিলেন নুসরাত। ২০১৫ সালে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি মন্তব্য করেন, নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি দিন ‘খুন’ করছে পুলিশ। তার এই মন্তব্যের জেরে বিতর্ক তৈরি হয়।

সিনেটের কয়েকজন সদস্য নুসরাতের মন্তব্যকে অসংবেদনশীল আখ্যা দেন এবং বিরোধিতা করেন। পরে অবশ্য তিনি সিনেট কমিটিকে চিঠি দিয়ে জানান, আইনের প্রতি তার পূর্ণ শ্রদ্ধা রয়েছে।

ফেডারেল বিচারক হিসাবে নিয়োগের আগে নুসরাত ‘নিউ ইয়র্ক ট্রায়াল কোর্ট’ এবং ‘ইউএস সেকেন্ড সার্কিট কোর্ট অফ আপিল’-এর বিচারকের সহকারী হিসেবেও কাজ করেছিলেন। কর্মজীবনে অনেক পুরস্কার পেয়েছেন নুসরাত। তিনি নিউ ইয়র্কের সাউথ এশিয়ান বার অ্যাসোসিয়েশনের তরফ ‘জাস্টিস অ্যাওয়ার্ড’ এবং প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ‘এডওয়ার্ড বুলার্ড ডিস্টিংগুইশড অ্যালামনাস অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন।

নুসরাতের বাবা এক জন চিকিৎসক। প্রায় ৪০ বছর ধরে তিনি শিকাগো এলাকায় চিকিৎসা করেছেন। ২০১৬ সালে মাইকেল অর্লি নামে এক ভিএফএক্স শিল্পীকে বিয়ে করেন নুসরাত।

তবে নুসরাত প্রথম নন, বাইডেন জমানাতেই আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম মুসলিম বিচারক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন বিচারক জাহিদ কুরেশি। ২০২১ সালে নিউ জার্সির ফেডারেল ট্রায়াল কোর্টে তাকে বিচারক হিসাবে নিয়োগ করেছিল সিনেট। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ফেডারেল মুসলিম বিচারক হিসেবে বাইডেনের মনোনয়ন পাওয়া জাহেদ কোরেশি সিনেটের ভোটে নির্বাচিত হন। ২০২১ সালের ১০ জুন সিনেটের ৮১-১৬ ভোটের ব্যবধানে তিনি নির্বাচিত হন। এরই মাধ্যমে আমেরিকার ২৪৪ বছরের ইতিহাসে প্রথম ফেডারেল মুসলিম বিচারক হিসেবে তিনি নাম লিখিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র্রের নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের ফেডারেল কোর্টে বিচারকের পদে তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।

এর আগে গত মার্চ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন কোরেশিসহ ১১ জন বিচারক মনোনয়ন দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে প্রথম এশিয়ান আমেরিকান নারী বিচারক কেতানজি ব্রাউন জ্যাকসনসহ তিন জন কৃষ্ণাঙ্গ নারীও ছিলেন। সিনেট মেজরিটি হুইপ ডিক ডুরবিন বলেন, ‌‘নিউজার্সি থেকে মি. কুরেশি আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম ফেডারেল বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন।’  সিনেটর কোরি বুকার সহকর্মীদের বলেন, ‘এটি একটি ইতিহাস। এমন ধরনের অর্জন আরো অনেক আগে হওয়া উচিত ছিল।’

জাহিদ কোরেশি পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত বাবা-মায়ের সন্তান। নিউ ইয়র্ক সিটিতে জন্মগ্রহণ করেন ও নিউ জার্সিতে বেড়ে ওঠেন। রাটগ্রেস ল স্কুলে আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন।

২০০১ সালে ১১ সেপ্টম্বর সন্ত্রাসী হামলার পর তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ২০১৯ সালে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত কোরেশি নিউজার্সি ডিস্ট্রিকের প্রথম মুসলিম ম্যাজিট্রেট বিচারক হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন। জাহিদ কোরেশি নিউজার্সির রাটগার্টস ইউনিভার্সিটিতে আইনে স্নাতক করেন। এরপর তিনি মার্কিন সেনাবাহিনীর বিচারক হিসেবে ইরাকে কাজ করেন।

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৪৭ বয়সী নুসরাত কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিন্সটন কলেজ থেকে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। এর পর ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন নিয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]