কোরআনে তাকওয়া অবলম্বনের ১০ সুসংবাদ


ধর্ম ডেস্ক : , আপডেট করা হয়েছে : 17-06-2023

কোরআনে তাকওয়া অবলম্বনের ১০ সুসংবাদ

কোরআন মজিদে মুমিনের যেসব বিষয়ের প্রতি বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে তার মধ্যে তাকওয়া অন্যতম। কারণ তাকওয়া বা আল্লাহভীতি মুমিনের অনন্য বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্য অর্জন ছাড়া দুনিয়া ও আখিরাতে মুমিন কখনো সফলতা লাভ করতে পারে না। তাই তো অসংখ্য আয়াতে গুনাহ মাফের সুসংবাদ, দোয়া কবুল, পরকালের সফলতা, রিজিকে বরকত দানসহ কোরআন মজিদে এ বিষয়ে অনেক সুসংবাদ এসেছে।

নিম্নে তাকওয়ার সুফলসংক্রান্ত কয়েকটি আয়াত উল্লেখ করা হলো।

জান্নাত ও সাহায্য লাভ

যাদের অন্তরে তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় থাকবে, তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও জান্নাত লাভের সুসংবাদ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে, তাদের জন্য সুসংবাদ পার্থিব জীবনে ও পরকালীন জীবনে। আল্লাহর কথায় কোনো পরিবর্তন হয় না।

এটাই হলো মহা সফলতা। (সুরা ইউনুস আয়াত : ৬৩-৬৪)

অন্য আয়াতে তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁদের সঙ্গে থাকেন, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে। (সুরা নাহল, আয়াত : ১২৮)

ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান

যারা তাকওয়া অবলম্বন করবে তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও মহাপ্রতিদানের সুসংবাদ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘যে তাকওয়া অবলম্বন করে আল্লাহ তার গুনাহসমূহ মাফ করে দেন এবং তাকে মহাপ্রতিদান দান করেন।

’ (সুরা তালাক, আয়াত : ৫)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় করতে থাক, তবে তোমাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেবেন এবং তোমাদের থেকে তোমাদের পাপকে সরিয়ে দেবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করবেন। বস্তুত আল্লাহর অনুগ্রহ অত্যন্ত মহান।’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ২৯)

আর্থিক সচ্ছলতা ও নিশ্চিন্ত জীবন

তাকওয়া অবলম্বনে দুনিয়াবি একটি সুফল হলো, মুমিনের প্রতিটি বিষয়ে আল্লাহ সহজ করে দেন এবং আর্থিক সচ্ছলতা দান করেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘যে তাকওয়া অবলম্বন করে আল্লাহ তার সব বিষয় সহজ করে দেন।’ (সুরা তালাক, আয়াত : ৪)

আর্থিক সচ্ছলতা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিজিক দেবেন।

যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সব কিছুর জন্য একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন।’ (সুরা তালাক, আয়াত : ৩)
পরকালীন শাস্তি থেকে মুক্তি ও সফলতার সুসংবাদ

এ মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতঃপর আমি মুত্তাকিদের মুক্তি দেব এবং জালেমদের সেখানে নতজানু অবস্থায় ছেড়ে দেব।’ (সুরা মারিয়াম, আয়াত : ৭২)

আর মুত্তাকিদের সফলতার সুসংবাদ দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘পরহেজগারদের জন্য রয়েছে সাফল্য।’ (সুরা নাবা, আয়াত : ৩১)

আল্লাহর পক্ষ থেকে ভালোবাসার সুসংবাদ

কোরআন মজিদের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুত্তাকিদের ভালোবাসার ঘোষণা দিয়েছেন। এক আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তবে যে মুশরিকদের সঙ্গে তোমরা চুক্তিবদ্ধ, অতঃপর যারা তোমাদের ব্যাপারে কোনো ত্রুটি করেনি এবং তোমাদের বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্যও করেনি, তাদের সঙ্গে কৃত চুক্তিকে তাদের দেওয়া মেয়াদ পর্যন্ত পূরণ করো। অবশ্যই আল্লাহ মুত্তাকিদের পছন্দ করেন।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ৪)

আর সৎ কর্মের মধ্যে রয়েছে তাকওয়া। ইরশাদ হয়েছে, ‘অবশ্য নেকি হলো আল্লাহকে ভয় করার মধ্যে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৯)

পৃথিবীতে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি

আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির যেসব মাধ্যম রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো তাকওয়া। এর মাধ্যমেই একজন মুমিন আল্লাহর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক তৈরি করতে পারে। এ মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মানুষ, আমি তোমাদের এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদের বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে সেই সর্বাধিক মর্যাদাবান, যে সর্বাধিক তাকওয়ার অধিকারী। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সব কিছুর খবর রাখেন। (সুরা হুজরাত, আয়াত: ১৩)

সৎ কাজের যথাযথ প্রতিদান

যারা তাকওয়ার সঙ্গে সৎ কাজ করবে আল্লাহ তাদের যথাযথ প্রতিদান দেবেন। এ প্রতিদান দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি সামান্যতম জুলুম করবেন না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা বলল, তবে কি তুমিই ইউসুফ! বললেন, আমিই ইউসুফ এবং এ হলো আমার সহোদর ভাই। আল্লাহ আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। নিশ্চয়ই যে তাকওয়া অবলম্বন করে এবং ধৈর্য ধারণ করে, আল্লাহ সে রূপ  সৎকর্মশীলদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না।’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত : ৯০)

অন্য আয়াতে তিনি বলেন, ‘আপনি তাদের আদমের দুই পুত্রের বাস্তব অবস্থা পাঠ করে শোনান। যখন তারা উভয়েই কিছু উৎসর্গ নিবেদন করেছিল, তখন তাদের একজনের উৎসর্গ গৃহীত হয়েছিল এবং অপরজনের গৃহীত হয়নি। সে বলল, আমি অবশ্যই তোমাকে হত্যা করব। সে বলল, আল্লাহ ধর্মভীরুদের পক্ষ থেকেই তো গ্রহণ করেন।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত: ২৭)

অফুরন্ত নিয়ামত ও নিরাপদ স্থান লাভ

যেসব মুমিন আল্লাহকে যথাযথ ভয় করবে আল্লাহ তাদের অফুরন্ত নিয়ামত ও নিরাপদ স্থানে থাকার সুসংবাদ দিয়ে বলেন, ‘নিশ্চয়ই পরহেজগাররা (জান্নাতে) উদ্যানরাজি ও ঝরনাসমূহে থাকবে।’ (সুরা হিজর, আয়াত: ৪৫)

অন্য আয়াতে তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুত্তাকিরা  নিরাপদ স্থানে থাকবে।’ (সুরা দুখান, আয়াত : ৫১)

কিয়ামতের দিন উঁচু মর্যাদা লাভ

মুমিনরা এক আল্লাহর ওপর ঈমান আনার কারণে জীবনের প্রতিটি ধাপে তিরস্কার ও নানা তির্যক মন্তব্যের শিকার হয়েছে। তাদের এই কষ্টের কারণে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তাদের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করবেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘পার্থিব জীবনের ওপর কাফেরদের উন্মত্ত করে দেওয়া হয়েছে। আর তারা ঈমানদারদের প্রতি লক্ষ্য করে হাসাহাসি করে। পক্ষান্তরে যারা আল্লাহকে ভয় করেছে তারা সেই কাফেরদের তুলনায় কিয়ামতের দিন অত্যন্ত উচ্চ মর্যাদায় থাকবে। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সীমাহীন রিজিক দান করেন। (সুরা বাকারা, আয়াত : ২১২)

অন্য আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘হে বনি আদম, যদি তোমাদের কাছে তোমাদেরই মধ্য থেকে পয়গম্বর আগমন করে তোমাদের আমার আয়াতসমূহ শোনায়, তবে যে ব্যক্তি সংযত হয় এবং সৎ কাজ অবলম্বন করে, তাদের কোনো আশঙ্কা নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না। (সুরা আরাফ, আয়াত : ৩৫)

সমবয়স্কা যোগ্য স্ত্রী লাভ

পৃথিবীতে যারা আল্লাহকে ভয় করে গুনাহ থেকে বিরত রয়েছে তাদের জন্য জান্নাতে রয়েছে সমবয়স্কা যোগ্য স্ত্রী লাভের সুসংবাদ। আল্লাহ তাআলা বলেন, পরহেজগারদের জন্য রয়েছে সাফল্য। উদ্যান, আঙুর, সমবয়স্কা, পূর্ণযৌবনা তরুণী। (সুরা নাবা, আয়াত :৩১-৩৩)

অন্য আয়াতে বলেন, আল্লাহভীরুরা থাকবে জান্নাতে ও নির্ঝরিণীতে। যোগ্য আসনে, সর্বাধিপতি সম্রাটের সান্নিধ্যে। (সুরা কমার, আয়াত : ৫৪-৫৫)

মহান আল্লাহ আমাদের যথাযথ তাকওয়া অবলম্বন করে এসব সুসংবাদ অর্জনের তাওফিক দান করুন।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]