‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তাওহিদ তথা আল্লাহর একত্ববাদের পরিচয়ই হবে শিশুর প্রথম শিক্ষা। জন্মের পরপরই শিশুর ডান কানে আজান ও বাম কানে ইকামত দেওয়ার মাধ্যমে এ শিক্ষা শুরু করতে হয়। শিশুর ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ইসলামের সুমহান আদর্শ তার সামনে তুলে ধরতে হবে। দিতে হবে ধর্মীয় শিক্ষা।
সন্তান-সন্তুতি মহান আল্লাহ তাআলার দেওয়া অমূল্য সম্পদ। তাদের মাধ্যমেই আল্লাহ তাআলা বাবা-মাকে পরীক্ষা করবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَاعْلَمُواْ أَنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلاَدُكُمْ فِتْنَةٌ وَأَنَّ اللّهَ عِندَهُ أَجْرٌ عَظِيمٌ
‘আর জেনে রাখ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি অকল্যাণের সম্মুখীনকারী (মহা পরীক্ষা)। বস্তুতঃ আল্লাহর কাছে রয়েছে মহাসাওয়াব।’ (সুরা আনফাল : আয়াত ২৮)
১. তাওহিদের শিক্ষা: সন্তানকে প্রথমেই শেখাতে হবে- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’বা আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তাওহিদের কালেমা শেখানোর মাধ্যমে এটা বোঝাতে হবে যে, আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা যাবে না। যে বিষয়টি হজরত লোকমান তাঁর সন্তানকে বলেছিলেন। কোরআনে আল্লাহ তাআলা সে কথা এভাবে তুলে ধরেছেন-
وَإِذْ قَالَ لُقْمَانُ لِابْنِهِ وَهُوَ يَعِظُهُ يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ
যখন লোকমান উপদেশচ্ছলে তার পুত্রকে বললঃ হে বৎস, আল্লাহর সাথে শরীক করো না। নিশ্চয় আল্লাহর সাথে শরীক করা মহা অন্যায়।’ (সুরা লোকমান : আয়াত ১৩)
২. ধীরে ধীরে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস বাড়াতে হবে: হজরত লোকমান তার সন্তানের উদ্দেশ্যে ধীরে ধীরে আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস বাড়িয়েছিলেন। ঠিক তেমনিভাবে মুসলিম উম্মাহকেও তাদের সন্তানের প্রতি ধীরে ধীরে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস বাড়াতে হবে। যেমনিভাবে মহান আল্লাহ মানুষের বিশ্বাসের দৃঢ়তা সম্পকেৃ সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন এভাবে-
يَا بُنَيَّ إِنَّهَا إِن تَكُ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ فَتَكُن فِي صَخْرَةٍ أَوْ فِي السَّمَاوَاتِ أَوْ فِي الْأَرْضِ يَأْتِ بِهَا اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ لَطِيفٌ خَبِيرٌ
‘হে সন্তান! কোনো বস্তু যদি সরিষার দানা সমপরিমাণও হয়; এরপর তা যদি থাকে প্রস্তর (পাথরের) ভেতরে অথবা আকাশে অথবা ভূ-গর্ভে; তবে আল্লাহ তা-ও উপস্থিত করবেন (আল্লাহর প্রতি এমন বিশ্বাস স্থাপন করা)। নিশ্চয়ই আল্লাহ গোপন ভেদ জানেন, সবকিছুর খবর রাখেন।’ (সুরা লুকমান: আয়াত ১৬)
৩. সন্তান বড় হলে ৫ জিনিস শিক্ষা দেওয়া: > নামাজের শিক্ষা দেওয়া।
> মানুষের সঙ্গে ভালো কথা বলার শিক্ষা দেওয়া।
> অন্যায় কাজ না করার শিক্ষা দেওয়া।
উল্লেখিত তিনটি কাজ করতে গিয়ে যত বিপদই আসুক না কেন তা ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবেলা করা। এবং সন্তানের জীবনে বাস্তবায়ে একনিষ্ঠ থাকা। কেননা এসব বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেছেন-
يَا بُنَيَّ أَقِمِ الصَّلَاةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنكَرِ وَاصْبِرْ عَلَى مَا أَصَابَكَ إِنَّ ذَلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ
হে সন্তান! নামাজ প্রতিষ্ঠা কর; সৎকাজে আদেশ দাও, মন্দকাজে নিষেধ কর এবং (এসব বাস্তবায়নে বিপদ আসলে) বিপদাপদে সবর কর। নিশ্চয়ই এটা সাহসিকতার কাজ।’ (সুরা লুকমান: আয়াত ১৭)
> কোনো কাজে গর্ব ও অহংকার না করার শিক্ষা দেওয়া।
> সব সময় মধ্যমপন্থা অবলম্বন করার শিক্ষা দেওয়া।
প্রতিটি অভিভাবকের উচিত, এ ৫ কাজের সমন্বয়ে সন্তানকে সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। সে কারণেই প্রথম কাজই হচ্ছে- নামাজ প্রতিষ্ঠা করা। অনেকের এমন সন্তান রয়েছে; যারা নামাজ পড়ে না। এ জন্য ওই সন্তানের ব্যাপারে মহান আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
সন্তানের প্রতি নামাজের শিক্ষা
সন্তানের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সব ঈমানদারের প্রতি সর্ব প্রথম দুইটি নির্দেশ করেছেন। একটি হলো- নামাজ; আর দ্বিতীয়টি হলো- পর্দা। হাদিসে পাকে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের সন্তান-সন্তুতিদের নামাজ আদায় করতে আদেশ করবে; যখন তারা ৭ বছর বযসে পৌঁছবে। আর নামাজের জন্য তাদেরকে শাসন করবে; যখন তারা ১০ বছর বয়সে পৌঁছবে। আর তখন তাদের জন্য আলাদা বিছানা বা শয্যার ব্যবস্থা করবে।’ (আবু দাউদ, মিশকাত)
সন্তানকে নামাজ শেখানোর প্রস্তুতি
৫ বছর বয়স থেকেই সন্তানকে কোরআন শেখানোর চেষ্টা করতে হবে। যেন সন্তান ৭ বছরে নামাজ পড়তে পারে। ২ বছরের চেষ্টা থাকলে নামাজের জন্য প্রয়োজনীয় সুরা ও নামাজের নিয়মগুলো শেখায় অভ্যস্ত হয়ে যাবে। তবেই ৭ বছর বয়সে সন্তান নামাজের জন্য আগ্রহী হবে।
মনে রাখতে হবে
যদি ৭ বছর বয়সে এসে নামাজের নিয়ম ও সুরা শেখানো হয়; তবে সে নামাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। সুতরাং বাবা-মার করণীয় হচ্ছে ৫ বছর থেকেই তাকে সঙ্গে রেখে নামাজের নিয়ম ও সুরা শেখানোর চেষ্টা করা।
যে ছেলে-মেয়ের বয়স ১০ বছর কিংবা ১১/১২ বছর; নামাজ ফরজ হোক আর না হোক; ওই ছেলে-মেয়ে যদি নামাজ না পড়ে আর তা বাবা-মায়ের জানা থাকে তবে বাবা-মার আমলনামায় নামাজ কাজা করার গুনাহ হবে।
দুঃখজনক হলেও সত্য
অনেক বাবা-মা শুধু নামাজই নয় বরং তাহাজ্জুদও পড়ে থাকেন। কিন্তু ছেলে-মেয়েরা নামাজ পড়ে না। নামাজের দিকে মোটেও খেয়াল নেই। বাবা-মায়েরও তদারকি নেই। এটি বাবা-মায়ের জন্য মারাত্মক গুনাহের কাজ। সন্তানের নামাজের তদারকি না করার জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
এমনটি যেন না হয়
সংসার, সমাজ ও দেশ নিয়ে কাজ করায় নিজেকে ব্যস্ত রাখাকে কোনো সমস্যা মনে না করা। অথচ নিজ পরিবার ও সন্তান নামাজ আদায় করলো কিনা কিংবা পর্দা মেনে চলল কিনা; সেই ব্যাপারে খোঁজ-খবর রাখার সুযোগ হলো না। এমনটি যেন কোনোভাবেই না হয়।
যাদের সন্তান বড় হয়েগেছে, তাদের জন্যও অবশ্যই কুরআন শেখানোর এবং নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তবেই বাবা-মায়ের আল্লাহর আদালতে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর প্রতিটি পরিবারের দায়িত্বশীল বাবা-মাকে নিজ নিজ সন্তানের প্রতি যথাযথ খেয়াল রাখার তাওফিক দান করুন। শিশুকাল থেকে সন্তানকে ধর্মীয় পরিবেশে বড় করে গড়ে তোলার তাওফিক দান করুন। কোরআন ও নামাজসহ ধর্মীয় শিক্ষায় পারদর্শী করে গড়ে তোলার তাওফিক দান করুন। আমিন।